শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য খাতে শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত চান বিশেষজ্ঞরা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ডিজি খুরশীদ সরানো হলো আরেক পরিচালককে

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্য খাতে শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত চান বিশেষজ্ঞরা

স্বাস্থ্য খাতে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে না পারার ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ (ডিজি) আরেক পরিচালককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিজি আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে এক দিনের ব্যবধানে নতুন ডিজি হিসেবে ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি ও ব্যর্থতার অভিযোগে ডিজি আবুল কালাম আজাদের জায়গায় ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে নিয়োগ দিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে অধিদফতরটির হাসপাতাল শাখার পরিচালক আমিনুল হাসানকে সরিয়ে নতুন পরিচালক হিসেবে ডা. ফরিদ হোসেন মিঞাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বশীলসূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেওয়ায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে না পারায় ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি ডা. আবুল কালাম আজাদকে সরে যেতে হয়েছে। এর আগে সরানো হয়েছে স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলামকে এবং আরেক অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমানকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েকদিন আগে। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সঙ্গে সরকারের সম্পাদিত চুক্তির অনুচ্ছেদ-৭ অনুযায়ী গত ২১ জুলাই থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হলো।’ চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষে দুই বছরের চুক্তিতে ছিলেন আবুল কালাম। আগামী বছরের ১৪ এপ্রিল তার সেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. আমিনুল হাসানকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। তার স্থলে নতুন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপপরিচালক ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা। এ দুই কর্মকর্তাকে বদলির স্থানে আগামী তিন দিনের মধ্যে যোগ দিতে বলা হয়েছে, অন্যথায় তারা চতুর্থ দিনে বর্তমান কর্মস্থল থেকে তৎক্ষণাৎ অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলে গণ্য হবেন। এসব পদক্ষেপকে এক ধরনের শুদ্ধি অভিযান হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ অভিযান শুধু সাময়িকভাবে না চালিয়ে স্বাস্থ্য খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তবে এখন যে অভিযান চলছে, এর মাধ্যমে খুব একটা পরিবর্তন আসবে বলে তারা মনে করছেন না। বরং পুরো ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো এবং স্বাস্থ্য খাতের প্রতিটি কেনাকাটায় তদারকি জোরদার করতে না পারলে অনিয়ম-দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে না বলে তারা মনে করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-হুর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, অনিয়ম দুর্নীতি কমাতে না পারলে কখনই এ খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। এর দায়িত্বে যারা আছেন তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ খাতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় তা তারা খরচ করতে পারেন না। আবার বেশির ভাগ ব্যয়ের ক্ষেত্রেই দুর্নীতি ও অপচয় সংঘটিত হয়। বিশেষ করে কেনাকাটা আর প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। এর ফলেই স্বাস্থ্য খাতে বেহাল দশা তৈরি হয়েছে। যা কেনা হয় তা সঠিক মান ও পরিমাণে হয় না। এতে অনিয়ম সংঘটিত হয়। আর এসব অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায় রয়েছে মন্ত্রী ও সচিবের। এজন্য এ খাতকে ঢেলে সাজাতে হলে সৎ ও দক্ষদের নিয়োগ দিতে হবে। প্রয়োজনে দক্ষতা বাড়াতে দেশেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর সব ধরনের কেনাকাটায় তদারকি জোরদার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতের বিকেন্দ্রীকরণও হতে হবে। জেলা পর্যায়ের চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রতি জেলার সিভিল সার্জনকে দায়িত্ব দিতে হবে। দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হবে। অন্যথায় এ ধরনের শুদ্ধি অভিযান করেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যাবে না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত তো দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কেনাকাটা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি-অনিয়মের খবর প্রকাশ হচ্ছে। এখন যে অভিযানটি চলছে, তা হয়তো দুর্নীতিবাজদের কাছে একটা মেসেজ দেবে। কিন্তু এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। এটা অব্যাহত রাখতে হবে সব সময়। যারা নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি বা এখনো করছেন না, এমনকি যারা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, পাশাপাশি যারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বলেন, ‘এটা তো এক দিনের বিষয় নয়। ফলে এ রকম দু-এক জনকে বদলি করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। এর জন্য পুরো ব্যবস্থাপনাকে সংস্কার করতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এটা এ রকম একজন দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে হবে না, বরং পুরো ব্যবস্থাপনার পুনর্গঠন করতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর