রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কতটা চ্যালেঞ্জে

দুই দেশের নেতৃত্বের পরিপক্বতা পৃথিবীতে বিরল, বোঝাপড়া সম্পর্কে এনেছে নতুন ভিত্তি, করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি

জুলকার নাইন

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কতটা চ্যালেঞ্জে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন যে উচ্চতায় আছে তাতে কোনো ধরনের সমীকরণই এ সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারবে না বলে মনে করছেন দুই দেশের সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারত হলো পরীক্ষিত বন্ধু। কোনো ধরনের ঠুনকো ফোনালাপের কারণে এ সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। বরং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তৈরি হওয়া সম্পর্ক এখন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে আরও এগিয়ে যাবে বলেই মনে করছেন সবাই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের ভাষায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই উষ্ণতম। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের যে পরিপক্বতা তা পৃথিবীর খুব কম প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আছে। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর মাধ্যমে দুই দেশের একে অন্যের পাশে থাকার শুরু। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবচেয়ে বেশি এগিয়ে যাওয়া বর্তমান দুই প্রধানমন্ত্রীর আমলেই। গত ছয় বছরে উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের সফরকালে কমপক্ষে ৯০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ সময় থেকে দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে, সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে, কানেকটিভিটি চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশে ১ হাজার ৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি, বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ৪০টির বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ভারত। সড়ক-রেল-নৌ যোগাযোগের বিষয়গুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ উচ্চ প্রযুক্তিগত সহযোগিতার নতুন দৃষ্টান্ত তৈরির জন্য প্রস্তুত। আগামী বছরগুলোয় মহাকাশ, তথ্যপ্রযুক্তি, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, শিপিং, ইলেকট্রনিকস এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অত্যাধুনিক উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা সমঝোতাগুলো কার্যকর হবে। শুধু দুই দেশের আনুষ্ঠানিক বিষয়গুলোই নয়, দুই দেশের মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তা অনন্য। ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ১.৭ মিলিয়ন ভিসা দিয়েছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম ভিসা অপারেশন। ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, ভারতীয় নেতৃত্ব ও জনগণ সব সময় বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করেছে এবং সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে সমর্থন করেছে। সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে বোঝাপড়া ও সম্পর্ক একটি নতুন দিক ও ভিত্তি তৈরি করেছে। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ উচ্চতায় আছে, একে অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। এখন ভারতীয় পণ্য চট্টগ্রাম বন্ধ হয়ে রেলে আখাউড়া দিয়ে ত্রিপুরা যাচ্ছে। এটা একেবারেই একটা নতুন অভিজ্ঞতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে কয়েক বছর আগে হওয়া এ সিদ্ধান্ত এখন বাস্তবায়িত হলো। ভারতের সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ে সম্পর্কও চোখে পড়ার মতো। সেটা নিরাপত্তাই হোক, বাণিজ্যিকই হোক বা কূটনৈতিকই হোক। সব দিক থেকেই এ সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। ভারতীয় সিনিয়র সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সুসম্পর্ক মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠে। এর পর থেকে ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের পর এ সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। কারণ, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড ইন্দিরা গান্ধী মেনে নিতে পারেননি। পরে ভারতের বিরুদ্ধে ফারাক্কার পানি নিয়ে নালিশ জানাতে জাতিসংঘেও গিয়েছিল। ’৯৬ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ সম্পর্ক বঙ্গবন্ধুর আমলের সম্পর্কে পরিণত হয়। এ সম্পর্কই চলে আসছে। সাম্প্রতিককালে এ সম্পর্কে খানিকটা অপ্রাপ্তি নিয়ে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করতে না দিয়ে। ভারতের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন সাক্ষাৎকারেই তা পরিষ্কার করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে খানিকটা বাধা সৃষ্টি করার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সেই পুরনো খেলা খেলছেন। তিনি বাংলাদেশের শেখ হাসিনাকে ফোন করে কাশ্মীর প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই কথা খুব একটা পায়নি বলে আমাদের কাছে স্পষ্ট খবর আছে। সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, শুধু পাকিস্তানের ফোনই নয়, আরও কয়েকটি দিক থেকে সম্পর্ককে তিক্ত করার চেষ্টা আছে। ভারতের একটি পক্ষ বলার চেষ্টা করছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। কিন্তু আমরা খুব স্পষ্টভাবেই জানি, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন জিরো টলারেন্স। তিনি বলেন, পুরো বিশ্বের মতোই করোনার কারণে দক্ষিণ এশিয়া ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলাও এখন বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দুই দেশের মধ্যে বর্তমান দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখে সামনের দিকে দৃষ্টি রাখাই জরুরি।

সর্বশেষ খবর