সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রতারণার বেশির ভাগ অর্থই পাচার

সাহেদের ৩৮ মাসুদের ২১ দিন রিমান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতারণার বেশির ভাগ অর্থই পাচার

ঢাকা ও সাতক্ষীরায় অস্ত্র, মাদক, অর্থ আত্মসাতের পাঁচটি মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে ৩৮ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল এর মধ্যে ঢাকায় দায়ের করা চার মামলায় ২৮ দিন এবং সাতক্ষীরায় দায়ের করা অস্ত্র মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে পৃথক আদালত। একই দিন সাহেদের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকেও আদালত তিন মামলায় ২১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। অন্যদিকে, জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার সব অপরাধই স্বীকার করেছে সাহেদ। সাহেদ কেবল অর্থের জন্যই প্রতারণা এবং এর বেশিরভাগই দেশের বাইরে পাচার করেছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ। করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে র‌্যাব গতকাল সকালে সাহেদকে আদালতে হাজির করে। এরপর চারটি মামলায় তাকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়। সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান ও শাহ আলম তার জামিনের আবেদন করলেও বিচারক তা নাকচ করে দেন। ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু তার জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, সাহেদ মানুষের জীবন নিয়ে প্রতারণা করেছেন। তিনি একজন মহাপ্রতারক। আমরা তার জামিনের বিরোধিতা করছি। এরপর চার মামলার রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, সাহেদ প্রতারক। তিনি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। চার মামলায় ৪০ দিনের রিমান্ড নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সাহেদের আইনজীবীরা মাত্র একটি মামলায় ওকালতনামা জমা দিতে পেরেছিলেন বলে বিচারক আসামি সাহেদের কাছেই জানতে চান, তার কিছু বলার আছে কিনা। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাহেদ তার কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি অপরাধ করেছি। ব্যবসা চালু হলে আমি পাওনাদারদের সব টাকা দিয়ে দেব। রিমান্ডে গেলে আমি আর কুলাতে পারব না। সাহেদ বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাদের সব টাকা-পয়সা আমি পরিশোধ করব। গত ১২-১৩ দিন ধরে আমি খুব প্রেসারের মধ্যে আছি। আমি অসুস্থ। ঈদের পর আমার রিমান্ড শুনানি হলে ভালো হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে প্রত্যেক মামলায় সাত দিন করে ২৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী। চারটি মামলার মধ্যে তিনটি মামলা উত্তরা পশ্চিম থানার। এর দুটিতে ইট, বালু সিমেন্ট সরবরাহের টাকা আত্মসাৎ এবং অন্যটিতে হোটেলের অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। আর উত্তরা পূর্ব থানার মামলাটি করা হয়েছে জাল টাকা রাখার অভিযোগে। গতকাল সন্ধ্যায় র‌্যাব সদর দফতরে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সাতক্ষীরায় দায়ের করা অস্ত্র আইনের মামলায় গতকালই ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে সাতক্ষীরা আদালত। আগামীকাল (সোমবার) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সাতক্ষীরা কারাগারে নেওয়ার পর র‌্যাব-৬ কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে। উত্তরা পশ্চিম থানা র‌্যাবের দায়েরকৃত দুটি মামলার ১৭ জন আসামির মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি সাহেদ স্বীকার করেছে। পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী সাহেদ ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং নেপালে ঘন ঘন যাতায়াত করেছে। তার মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি আমরা সিআইডিকে অবহিত করেছি। সিআইডির মামলাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১-এর সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল হক আদালতে উল্লেখ করেন, আসামি সাহেদ ও মাসুদ পারভেজ রিমান্ডে থাকাকালে মামলার ঘটনার বিষয় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন। ফলে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও সহযোগী আসামিদের শনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে সহায়ক হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে আসামিদের দেওয়া তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেলে পলাতক ও মামলার তদন্ত ব্যাহত হওয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলার তদন্তকার্য সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের জেলহাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।

রিজেন্টে ভুয়া টেস্ট : ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাই কোর্টে রিট বেসরকারি হাসপাতাল রিজেন্টে করোনা পরীক্ষার ভুয়া টেস্টের শিকার হওয়াদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের পক্ষে ব্যারিস্টার আবদুল হালিম এ রিট দায়ের করেন। একই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় বন্ধে মনিটরিং সেল গঠনেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।

পরে আইনজীবী আবদুল হালিম জানান, রিটে দেশের সব বৈধ ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের তালিকা প্রকাশের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি থানায় স্বাস্থ্য মনিটরিং কমিটি করতে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে। রিটটি বিচারপতি তারিক উল হাকিমের নেতৃত্বাধীন হাই কোর্ট বেঞ্চে চলতি সপ্তাহে শুনানি হতে পারে বলে তিনি জানান। এর আগে ১৯ জুলাই এ বিষয়ে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছিল। নোটিসে বলা হয়েছিল, লাইসেন্সবিহীন রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চুক্তি, বুথ বানিয়ে করোনা টেস্টের অনুমতি প্রদান করেছে। যা চরম দায়িত্বহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিচয়। ভুয়া করোনা টেস্টের রিপোর্ট প্রদান করে রিজেন্ট হাসপাতাল জনগণের সঙ্গে চরম প্রতারণা করেছে। তাই প্রতারিতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর