সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
নেতা-কর্মীদের শেখ হাসিনা

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বন্যা মোকাবিলায় সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। আমাদেরকে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য দলের সবাইকে কাজ করতে হবে।

গতকাল বিকালে ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের মুঠোফোনে ভিডিও কলে সংযুক্ত হয়ে উপস্থিত নেতাদের এই নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমানের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনির্ধারিত বৈঠক হয়। বৈঠকে গণভবন থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের মুঠোফোনে ভিডিও কলে সংযুক্ত হন। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সুবর, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ত্রাণের কোনো সংকট নেই। বন্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, সে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছি। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেসব এলাকায় বন্যা, সেসব এলাকার স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে তারা যেন বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়, সেভাবে নির্দেশ দিতে হবে। এদিকে আবার করোনাভাইরাস। এটা নিয়েও সতর্ক থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বন্যায় যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তাদেরকে ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। স্কুল-কলেজ; সেখানে তাদেরকে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে ধান কাটাও আমরা আমাদের নেতা-কর্মীদের সহায়তায় ভালোভাবে করতে পেরেছি। ১৫ আগস্ট জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে যেভাবে করতে চেয়েছিলাম, সেভাবে আমরা পারলাম না। তাই আমরা একদিকে বৃক্ষ রোপণ করব, আরেকদিকে বন্যার্ত দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ দেব। বন্যাদুর্গত মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছানো, খাবার বিতরণ এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা- এটাই হবে আমাদের কাজ। আমি বলব, আমার পিতা, তিনি তো সাধারণ মানুষের জন্যই জীবন দিয়ে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যেহেতু উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকা বন্যাকবলিত, এখন মধ্য এলাকায় নেমে আসবে। হয়তো জুলাইয়ের শেষ দিকে মধ্য এলাকা থেকে আগস্টের শেষের দিক থেকে শেষের এলাকায় (দক্ষিণাঞ্চল) নামবে। এটা আমাদের দেশের প্রাকৃতিক নিয়ম। মধ্য উপকূলীয় এলাকায় বন্যা তেমন হয়নি। কিন্তু আমাদের পদ্মার ওপারে যারা, এসব এলাকায় আবার বন্যাটা ব্যাপক হারে দেখা যেতে পারে এবং এই বন্যাটা স্থায়ী হতে পারে। ঠিক ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল সব থেকে দীর্ঘতম বন্যা। ১৯৮৮ সালের বন্যা দুই সপ্তাহ ছিল।

দেশবাসীকে আগাম ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবার যেহেতু করোনাভাইরাস। তারপর কোরবানির ঈদ। সবাই কোরবানি দেবে, সবাই সবার মতো মানুষকে সাহায্য করা, মানুষের পাশে থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সে ব্যাপারে সিটি করপোরেশন সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। আমাদেরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আপনি যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সে অনুসারে এগোবো। আপনাকে জানাতে চাই, আমাদের বিভিন্ন সংগঠন বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ করছে, ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমাদের নেতৃবৃন্দ করোনার মধ্যেও ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। সেখানে আমাদের নেতৃবৃন্দ মৃত্যুবরণও করেছেন।  আমরা অনেক নেতা-কর্মী হারিয়েছি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি নেতা-কর্মীদের হারালাম। কারণ প্রত্যেকে, সবাই কিন্তু কাজ করেছে। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশে করোনাসহ বিভিন্ন বয়সজনিত কারণে মৃত্যু হওয়া নেতাদের নাম উল্লেখ করে দলীয় প্রধানকে অবহিত করেন।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমি খবর পাচ্ছি। আসলে এই সময় অনেকেই আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমার কাছে সব খবর আছে। সবারই আমি কনডোলেন্স (শোক বিবৃতি) জানাচ্ছি। আসলে এখন এমন একটা সময় যে, মারা গেলে যে দেখবে, সেটাও এখন করা যাচ্ছে না। তারপরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।  আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অতীতে বন্যার সময়গুলোতে দুর্যোগ কবলিত এলাকায় কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সে বিষয়েও স্মৃতিচারণ করেন। এক্ষত্রে তিনি নিজ হাতে রুটি বানানোর কথা, খাবার বিতরণের কথা, খাবার পানি, স্যালাইন তৈরিসহ ওষুধপত্রাদি বিতরণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা আছে যথেষ্ট। তারপরও আমাদের সেভাবেই তৈরি থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর