শিরোনাম
সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

কমছে করোনা পরীক্ষা ও ফোনকলের সংখ্যা

চলতি মাসে বেড়েছে সংক্রমণ ও মৃত্যু

মাহমুদ আজহার

প্রাণঘাতী করোনা পরীক্ষায় বাংলাদেশে ল্যাবের সংখ্যা বাড়লেও দিন দিন নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কমছে। গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ল্যাবের সংখ্যা ছিল ৮১টি। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১০ হাজার ৪৪১টি। নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১০ হাজার ৭৮টি। শনিবার ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ৬১৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১০ হাজার ৪৪৬টি নমুনা। এর আগে শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৩৬১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং পরীক্ষা করা হয় ১২ হাজার ২৭টি নমুনা। জানা গেছে, কিট সংকটে অনেক ল্যাবের সক্ষমতা সত্ত্বেও শনাক্ত কাজ চলছে ঢিমেতালে। পুরনো মডেলের  মেশিন কেনায় মিলছে না কিট। এর সঙ্গে রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেটের যোগসাজশ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৩০ হাজার নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। নমুনা পরীক্ষার তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এক দিনে সর্বোচ্চ ১৮ হাজারের কাছাকাছি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। কয়েকদিন ধরে তা আবার কমে আসছে। দেশের জনসংখ্যার বিচারে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না। এখনো প্রতিদিন করোনা পরীক্ষা ১০ থেকে ১২ হাজারের মধ্যেই রয়েছে। এমনকি শনিবার পরীক্ষা ৯ হাজারে এসে নেমেছে।  এ প্রসঙ্গে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে টেস্টের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ জন্য ল্যাব বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু ল্যাব বাড়ানোর পরও যদি টেস্ট না বাড়ে, তাহলে লাভ নেই। যত দ্রুত আক্রান্ত শনাক্ত করে তাদের আলাদা করা যাবে তত দ্রুত আমাদের সংক্রমণের হার কমবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে ব্যবহৃত আরটিপিসিআর মেশিনে লাল এবং হলুদ দুই ধরনের কিট ব্যবহার হয়। হলুদ মেশিনের কিট সঠিক সময়ে আমদানি না করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিছু মেশিন পুরনো মডেলের হওয়ায় সেগুলোর কিট পাওয়াও মুশকিল হয়ে পড়েছে। কিট ও মেশিন আমদানিতে নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারের যোগসাজশও রয়েছে।

সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বেড়েছে : দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ গত জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ে কমেনি বরং বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ১ জুন  থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৬১ হাজার ৬২২ জন অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮১ জন। একই সময়ে সংক্রমিত রোগীর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন ৭৭৫ জন অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ৩৮.৭৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। চলতি মাসের ১ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত  রোগীর সংখ্যা ৬১ হাজার ৯৭০ জন অর্থাৎ গড়ে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৯৯ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৮২১ জনের অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ফোনকলের সংখ্যাও কমছে : দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। কিন্তু নমুনা ও পরীক্ষার পাশাপাশি হটলাইনে ফোনকলের সংখ্যাও কমছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের চালু করা হটলাইন নম্বরগুলোতে ফোন করে করোনাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ও পরামর্শ গ্রহণ করত করোনা রোগী বা তার পরিবারের সদস্যরা। করোনা শুরুর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই প্রতিদিন লাখের বেশি ফোনকল গ্রহণ করত স্বাস্থ্য অধিদফতর। এক পর্যায়ে তা দুই লাখ পেরিয়ে যায় প্রায় প্রতিদিন। তবে সেই হার ক্রমাগত কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায়  ফোন করে ৭৮ হাজার ১৫৩ জন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় ফোন গ্রহণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার ১৫৩টি। তার মধ্যে স্বাস্থ্য বাতায়নে (১৬২৬৩) ১২ হাজার ৮২০টি, জাতীয় কল সেন্টারে (৩৩৩) ৬৪ হাজার ৩৬৪টি এবং আইইডিসিআরের (১০৬৫৫) হটলাইনে ৯৬৬টি ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে।’

 

সর্বশেষ খবর