শিরোনাম
সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

নানা প্রতিকূলতায় পাঁচ বছর পার করলেন আ জ ম নাছির

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

নানা প্রতিকূলতায় পাঁচ বছর পার করলেন আ জ ম নাছির

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে গতকাল পাঁচ বছর পূর্ণ করলেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। এ সময়ে ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন ও সেবামূলক প্রকল্পের কাজ করেছেন তিনি। গত ৪০ বছরেও সিটি করপোরেশনে এ রকম উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এই পাঁচ বছরে মেয়র হিসেবে সফলতার স্বাক্ষর রাখলেও তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতার।

নাছিরের সফলতার মধ্যে আরও আছে, ৩২ বছর পর চসিক অর্গানোগ্রাম অনুমোদন, বহুল প্রতীক্ষার বাস টার্মিনালসহ নানা কর্মকান্ড। এরই মধ্যে করোনাযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহরে মেয়র নাছিরের কর্মকান্ড যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে মেয়র হন আ জ ম নাছির। সে বছরের ৬ মে শপথ নিলেও ২৬ জুলাই তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার আইনে করপোরেশনের প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদ ধরা হয়। ৬ আগস্ট প্রথম সাধারণ সভা হয়। সে হিসেবে মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ আগস্ট। মেয়র নাছিরের নেওয়া প্রকল্পগুলোর কোনোটি শেষ হয়েছে, আবার কোনোটি চলমান। দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ বছর পূর্তিলগ্নে মেয়র আ জ ম নাছির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওয়াদা পূরণের চেষ্টা করেছি। চসিকের আবশ্যিক কাজ ও ইশতেহারের লক্ষ্য পূরণে আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না। বিবেকবোধ থাকলে আমার চরম সমালোচকও এটা অস্বীকার করতে পারবেন না।’ নাগরিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এ সময়কালে চসিকের ‘ম্যাচিং ফান্ড’ বেড়েছে। পুনর্মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে বেড়েছে কর আদায়। দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী কর যেমন, চট্টগ্রাম বন্দরের যথাক্রমে ১০৭ কোটি ও রেলওয়ের ৩০ কোটি টাকাসহ বিপুল নগর শুল্ক আদায় হয়েছে। করের আওতায় ছাড় দেওয়া হয়েছে গরিব নিম্নআয়ের মানুষকে। নিজের পরিকল্পনা ও মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে ব্যক্তিগতভাবে সন্তোষ প্রকাশ করে মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, নগরবাসীর অভাবনীয় সহযোগিতা পেয়েছি। ‘চট্টগ্রাম সমৃদ্ধ হওয়া মানে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হওয়া’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, দেশের স্বার্থে চট্টগ্রাম ঘিরে টেকসই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন।’ চসিক মেয়র আরও বলেন, বন্দর শহর হিসেবে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। একে ঘিরে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পিত উন্নয়ন যত দ্রুত হবে, ততই শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের জন্যই মঙ্গল। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রধান প্রতিশ্রুতি থাকলেও সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প গ্রহণ করায় সে দায় থেকে তিনি মুক্ত বলে মনে করেন। গ্রিন সিটি-ক্লিন সিটি করার প্রতিশ্রুতিতে বিলবোর্ড উচ্ছেদের সাহসী অভিযান পরিচালনা করেন আ জ ম নাছির। বন্দর শহরকে বদলে দেওয়ার প্রত্যয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর বৃহত্তম ভাস্কর্য নির্মাণ, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে ‘রূপালী গিটার’ ভাস্কর্য স্থাপন, মুক্তিযুদ্ধ ও মনীষী স্মারক স্থাপন, জাতীয় পর্যায়ের একুশে বইমেলা চালু, মুক্তিযোদ্ধা ও সেবকদের আবাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশে ছিলেন চসিক মেয়র। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হওয়ায় প্রভাবশালীদের চক্ষুশূল হলেও সাধারণ মানুষের সমর্থন পান তিনি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পৌর করের পুনর্মূল্যায়ন ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ নিয়ে বক্তব্যসহ নানা বিষয়ে সমালোচনাও পিছু ছাড়েনি তাকে। চট্টগ্রামের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনে চলাচলকে ঝুঁকিমুক্ত করতে মেয়র নাছির নগরজুড়ে প্রায় ৪ হাজার বিলবোর্ড, ইউনিপোল, মেগা সাইন উচ্ছেদে অভিযান চালান। রাজস্ব ফাঁকির রাস্তা বন্ধ করে লুটেরাদের বিরুদ্ধে সাহসী বার্তা দেন তিনি। বিজ্ঞাপন নীতিমালাও তৈরি করা হয়। এটি এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। ডাম্পিং স্টেশন কমিয়ে আনা, দিনের পরিবর্তে রাতে ময়লা ফেলার পরিবহন কাজ চালু করেন মেয়র। প্রকল্পটির আওতায় বাসাবাড়ি, শিক্ষাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে ময়লা-আর্বজনা সংগ্রহে বিনামূল্যে দেওয়া হয় ৯ লাখ ছোট বিন ও ৩ হাজার ৪৩০টি বড় বিন। সরাসরি ময়লা সংগ্রহ করেন চসিক কর্মীরা। সড়ককে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পও হয়। শহরের তিন-চতুর্থাংশ কাঁচা রাস্তা পাকা করা হয়। চসিককে স্বাবলম্বী করতে প্রকল্প গ্রহণ, শিক্ষা বিভাগে শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ, সহশিক্ষা চালুকরণ, শিক্ষা খাতে নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ, পাঠদানের অনুমতি লাভ, নতুন ভবন নির্মাণ ও পুরনো ভবন সংস্কার, স্বাস্থ্য বিভাগকে ঘিরেও নেওয়া হয় প্রকল্প। চট্টগ্রাম শহরকে আলোকিত করতে ৮৬ কিলোমিটার সড়কে এলইডি লাইট লাগিয়েছেন মেয়র নাছির। ৭৮ কিলোমিটার সড়ক আলোকিত করার কাজ চলছে। ২৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় আরও ৪১০ কিলোমিটার সড়কের আলোকায়নের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া চলছে।

সর্বশেষ খবর