বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

লাশের পেটে ইয়াবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজার থেকে বাসে করে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আসেন ফজলুল হক (২৮) নামে এক ব্যক্তি। প্রস্রাব করার কথা বলে ঢুকে পড়েন সেখানকার পুলিশফাঁড়িতে। দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল তাকে প্রস্রাবখানা দেখিয়ে দেন। কিছু সময় পর বেরিয়ে আবার প্রস্রাব করতে ঢোকেন ফজলুল। এ ঘটনা ২৬ জুলাই রাতের।

জানতে চাইলে পুলিশ কনস্টেবলকে ফজলুল বলেন, ‘ভাই, আমার কেন যেন প্রস্রাব বের হচ্ছে না।’ এ সময় ফজলুলকে অনেক অস্থির দেখাচ্ছিল আর তার শরীর থেকে অনবরত ঘাম ঝরছিল। এমন পরিস্থিতি দেখে ওই কনস্টেবল তাকে ফাঁড়ির ইনচার্জ ওমর ফারুকের কাছে নিয়ে যান। এ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে ফজলুল হক বলেন, ‘স্যার, আমার পেটে ১ হাজার পিস ইয়াবা আছে। আমি ৩০ হাজার টাকা নিয়ে কক্সবাজারে যাই। সেখানে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ১ হাজার পিস ইয়াবা কিনি। এরপর সেগুলো ১০০ পিস করে পলিথিনের ব্যাগে ১০টি পোঁটলা বানাই। সেগুলো আমি খেয়ে পেটে নিয়েছি। স্যার, আমাকে বাঁচান, আমি বাঁচতে চাই।’ এসব বলতে বলতে লোকটি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে পুলিশের গাড়িতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রথমে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করতে চাননি। তবে পুলিশের চাপাচাপিতে রাজি হন। এরপর তার পেট এক্স-রে করে দেখা যায়, ভিতরে কিছুই নেই।

কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ফজলুলকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরে পুলিশ তাকে ওই হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করে। বেড ফাঁকা না থাকায় ফজলুলকে মেঝেতে রাখা হয়।

ফজলুল হকের বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। তার বাবা ছাদেক আলী থাকেন গাজীপুরে। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন বাবা। মাঝরাতে হাসপাতাল থেকে ফজলুল হকের বাবার কাছে ফোন করেন মিঠু নামে তাদের এলাকার এক লোক। ফোনে মিঠু বলছিলেন, ‘ওর (ফজলুল) পেটে মূল্যবান জিনিস আছে। ওকে সরকারি হাসপাতাল থেকে সরিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। যত টাকা লাগে আমি দেব।’ পরদিন ২৭ জুলাই ভোরে ছাদেক আলীকে চিকিৎসকরা জানান, তার ছেলে ফজলুল হক মারা গেছেন। ওই দিন সন্ধ্যায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে তার লাশের ময়নাতদন্ত হয়। এ সময় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক তার পেট থেকে একে একে ইয়াবার ১০টি পোঁটলা বের করে আনেন। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানান, পেটের ভিতরে একসঙ্গে অনেক ইয়াবার পোঁটলা জমা হয়ে ছিল। একপর্যায়ে সেগুলো ভিতরে গলে গিয়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ বিষক্রিয়ায় তার খাদ্যনালি স্বাভাবিকের চেয়ে ফুলে অনেক বড় হয়ে যায়। পুলিশ জানতে পারে, ফজলুল হক ছিলেন কৃষিশ্রমিক। করোনা মহামারীতে কাজশূন্য হয়ে পড়েন। এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মিঠু আর রাজু তাকে নানা প্রলোভনে ইয়াবা পাচারে যুক্ত করেন। কক্সবাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায় আনা ইয়াবা প্রতি পিস ১০০ টাকায় বিক্রি করলে ১ লাখ টাকা, ২০০ টাকায় বিক্রি করলে ২ লাখ টাকা লাভ হবে- এমন সব প্রলোভন দেখানো হয় ফজলুল হককে। এমনকি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসতে ফজলুলকে হাতখরচের জন্য ৪ হাজার টাকা দিয়েছিলেন মিঠু।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মাদকের বিষয়ে আমাদের অনেক সচেতন হতে হবে। অনেকে বুঝে না বুঝে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। অনেকে অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে পেটের মধ্যে ইয়াবা বহন করেন। আর এ ঝুঁকি নিয়েছিলেন ফজলুল হক। বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি বাঁচার জন্য পুলিশের কাছে এসেছিলেন। আমরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর