বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রশ্নফাঁসের মাস্টারমাইন্ড জসিমের ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ

মাহবুব মমতাজী

মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ‘মাস্টারমাইন্ড’ জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নুর অন্তত ২৭টি ব্যাংক হিসাবের খোঁজ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব হিসাবে কয়েকশ কোটি টাকার লেনদেনের ধারণা করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে টাকার পরিমাণ জানতে সবকটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পাশাপাশি লেনদেনের তথ্য জানাতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত ২৩ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু, তার ভগ্নিপতি জাকির হোসেন দিপু ও ভাতিজা পারভেজ খানকে সাত দিনের রিমান্ডে আনে সিআইডি। আজ তাদের রিমান্ড শেষ হবে। শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করে ফের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার সাইবার ক্রাইমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এ কর্মকর্তা বলেন, তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। ২২টি হিসাবের তথ্য হাতে পেলে অবৈধভাবে গড়ে তোলা সম্পদের সঠিক পরিমাণ জানা যাবে। রিমান্ডে তিনি কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস করে সরবরাহ করতেন তার অনেক তথ্য দিয়েছেন। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করতে তাদের ফের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

প্রশ্ন ফাঁস চক্রের ‘মাস্টারমাইন্ড’ জসিমকে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর শাহআলী থানার ব্লক এইচের ১ নম্বর রোডের ৪৩ পৃথ্বী ভিলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। একই এলাকার এ ব্লকের ১ নম্বর রোডের ২৯ নম্বর বাসা থেকে গ্রেফতার হয় জাকির হাসান দিপু। আর পারভেজ খানকে গ্রেফতার করা হয় মিরপুর-২ এর চ ব্লকের ৯১/৯২ নম্বর বাড়ি থেকে। অপর ‘মাস্টারমাইন্ড’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রেসের মেশিনম্যান আবদুস সালাম খান পলাতক।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, সালাম ও জসিম আপন খালাতো ভাই। এ দুজন প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত সেই ৯০ দশক থেকেই। ১৯৯০-৯১ সাল থেকে জসীমকে প্রেসে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন সেখানকার অন্য কর্মচারীরা। প্রেসে আসতেন জসিমের বড় বোন মীরাও। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা প্রথম সামনে এলে ২০০৬ সালে সালামকে প্রশ্ন ছাপার কাজ থেকে সরিয়ে দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২০০৯ সালে মাত্র ১ ঘণ্টার নোটিসে পুনরায় প্রশ্ন ছাপার কাজে সালামকে যুক্ত করা হয়। এরপর ২০১৬ সালে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে বরখাস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সালাম প্রশ্ন ছাপার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডির কর্মকর্তাদের জসিম জানিয়েছেন, তারা মিরপুর-২ এর প্রশিকার মোড় থেকেই সবখানে সরবরাহ করতেন ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। ২০১৩ সালের ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তির পরীক্ষার আগের রাতে ১২টার পরে সালাম প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র এনে দেয় তার কাছে। এরপর তিনি প্রশিকার মোড়ে এসে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য সানোয়ারকে ফাটোকপি করে দেয়। সানোয়ার মোবাইলে ছবি তুলে চক্রের অন্যদের কাছে দিয়ে দিতেন। পরের বছর ২০১৪ সালে তার ভাতিজাও পারভেজ খান শিক্ষার্থী সংগ্রহ করা শুরু করে এবং প্রত্যেকের কাছ থেকে আগে থেকে টাকা নেয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার আগে সানোয়ার, জাকির হোসেন দিপুসহ চক্রের অন্যরা আগে থেকে সংগ্রহ করা ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে চেক, টাকা, ভোটার আইডি কার্ড, শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রের কপি, যোগাযোগের মোবাইল নম্বর ও মেডিকেলে ভর্তির আবেদনের ফটোকপি জসিমের পৃথ্বী ভিলার বাসায় জমা রাখত। এরপর ওই বছর পরীক্ষার আগের রাতে সালামের সহযোগিতায় জসিম তার ভায়রা সামিউল জাফর সিটু ও স্ত্রী শারমিন আক্তার শিল্পীকে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দিতেন। এরপর শিল্পী চুক্তি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ওই প্রশ্ন পৌঁছে দিতেন। এভাবেই প্রতি বছর চলত তাদের প্রশ্ন ফাঁসের বাণিজ্য। সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, জসিম আর সালামের স্থাবর ও অস্থাবর বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এগুলো হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সম্পদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। অনুসন্ধান শেষ হলে পারিবারিক এই প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্যদের নামে মানি লন্ডারিং মামলা করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর