শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা-বলয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। প্রতিবছরই ঈদের কয়েক দিন আগের এ সময় থেকে অপরাধ তুলনামূলক বেড়ে যায়। ঈদের ছুটিতে সবাই গ্রামে চলে গেলে ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ সংঘটিত হয়। বিশেষ করে পশুর হাট এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মলম, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায়। পাশাপাশি ঈদুল আজহার সময় চামড়াসন্ত্রাসী ও পশুর হাটে চাঁদাবাজসহ বেশকিছু অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে ঈদের আগে-পরে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দেয়। এবার ঈদ মৌসুমে রাজধানীসহ সারা দেশে এ অপরাধীদের ঠেকাতে সাদা পোশাকে এবং ভার্চুয়ালি নজরদারি বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ ও বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কন্ট্রোল রুম, থানা কিংবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সহযোগিতা নিতেও নাগরিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা-বলয় তৈরি করা হয়েছে। এ নিরাপত্তা-বলয় হবে কয়েক স্তরের। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। বাড়ানো হয়েছে বাড়তি নজরদারি। থাকবে চেকপোস্ট। সন্দেহভাজন ব্যক্তি, গাড়ি, ব্যাগ মেটাল ডিটেকটর, ভেহিকল স্ক্যানার ও ম্যানুয়াল চেকিংয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কূটনৈতিকপাড়া ও মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় পুলিশের নজরদারি থাকছে। গুলশান ও বারিধারার সব দূতাবাস এবং সংলগ্ন সড়কে থাকছে বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারি। তবে ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। জাতীয় ঈদগাহ মাঠে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা। থাকছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ঈদগাহের চারপাশে চেকপোস্ট থাকবে। সেগুলো ভেদ করেই মুসল্লিদের আসতে হবে। একই সঙ্গে ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াত, মোটরসাইকেলে টহল, ফুট প্যাট্রোল, অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক চেকপোস্ট ও তল্লাশি-চৌকি থাকছে গোটা রাজধানীজুড়ে। বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার ও আড়তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব। ডাকাত, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ধরতে পুলিশ ও র‌্যাবের বিশেষ টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, কোরবানির ঈদে পশুর হাটকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে ওঠে অপরাধী চক্র। ফলে ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব পশুর হাটে ভ্রাম্যমাণ কোনো দোকান বসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা রোধ করতে ইজারাদারদের অনুমতি ছাড়া কাউকে অস্থায়ী দোকান বসাতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিটি হাটে সাদা পোশাকে নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াও থাকবে ওয়াচ টাওয়ার ও পুলিশ কন্ট্রোল রুম। প্রতিটি থানায় ও কন্ট্রোল রুমে মানি অ্যাসকর্ট টিম স্ট্যান্ডবাই থাকবে। পশু বিক্রির টাকা ছিনতাই প্রতিরোধে তৎপর থাকবে পুলিশ। সার্বক্ষণিক মেডিকেল টিম ও ভেটেরিনারি অফিসার (পশুর ডাক্তার) রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনে দ্রুত শনাক্তের জন্য গরু নিয়ে হাটে আসা ট্রাকের নম্বর ও চালকের নাম-পরিচয় এবং তার ছবি তুলে পুলিশ সংরক্ষণ করবে।

সূত্র আরও জানায়, কোরবানির ঈদের সময় চামড়াসন্ত্রাস বেড়ে যায়। চামড়া কেনাবেচার ক্ষেত্রে কেউ যাতে সিন্ডিকেট তৈরি করে জোরজবরদস্তি করতে না পারে সে জন্য পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে। কাঁচা চামড়া পাচার রোধে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথগুলোতে চেকপোস্ট এবং নদীপথে নৌ-টহলের ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকার বাইরে থেকেও শুধু কাঁচা চামড়া পরিবহনকারী যানবাহন ঢাকায় ঢুকতে পারবে। কোনো কাঁচা চামড়া পরিবহনকারী যানবাহন ঢাকা থেকে বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চালক, হেলপার ও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকেও মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়। টিকিট কালোবাজারি ও যাত্রী হয়রানি যাতে না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা যাবে না। পণ্যবাহী ট্রাকে যাত্রী পরিবহন এবং বাস ও ট্রেনের ছাদে করে ভ্রমণ করা যাবে না। প্রতিটি বাস টার্মিনালে ওয়াচ টাওয়ার এবং প্রতিটি বাস, লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলওয়ে স্টেশনে পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে সোনার দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি ও ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে। বাসা, অ্যাপার্টমেন্ট ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রাইভেট নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, রাজধানীতে পুলিশের আটটি বিভাগের উপকমিশনার এবং র‌্যাবের পাঁচটি ব্যাটালিয়নের অধিনায়করা নিজ নিজ এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি তদারক করবেন। পোশাকধারী ছাড়াও মাঠে থাকবেন সাদা পোশাকের পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য। ঢাকা মহানগরীর সবকটি প্রবেশ ও বহির্গমন পথে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এই নিরাপত্তা বলবৎ থাকবে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদর দফতর থেকে ইতিমধ্যে সারা দেশের সব ইউনিটকে ঈদের আগে-পরে এবং ঈদের ছুটিতে নজরদারি বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি ও জোরজবরদস্তি  যেন না হয় সে জন্য পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. ওয়ালিদ হোসেন জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য রাজধানীতে মোতায়েন থাকবে। বাড়িতে যাওয়া ও ঢাকায় ফেরা মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের টহল, চেকপোস্ট ও ব্লক রেইড থাকবে। বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং ট্রেনস্টেশনে পুলিশ কাজ করছে। অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সাধারণ মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি গরুর হাটে র‌্যাব স্থাপন করেছে বুথ। সেখানে জাল টাকা শনাক্তের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী অনলাইন মনিটরিং করা হবে। ঈদে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেকপোস্ট, প্যাট্রোল ও গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর