আগামীকাল মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। করোনা মহামারীর কারণে কিছুটা কম হলেও সারা দেশে বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। কিন্তু এ আমেজ নেই দেশের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে। কারণ বানভাসি মানুষের রাত-দিন কাটছে পানিতে ডুবে থাকা বাড়ি বা বাঁধের ঝুপড়ি ঘরে। যেখানে নেই স্বাভাবিক জীবনযাপনের কোনোই উপায়। ফলে আনন্দের ঈদ একাকার হয়ে গেছে চোখের পানি আর বানের পানিতে।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এক মাসেরও অধিক সময় বন্যার্ত মানুষ বানের পানিতে ভাসছেন। এই সঙ্গে চলছে ভয়াবহ নদীভাঙন। এতে চোখের পলকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন নদীতীরের মানুষ। এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, বানভাসিদের দুর্ভোগ শিগগিরই কমছে না। এ অবস্থায় বানভাসিদের ঈদের আনন্দ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। পানিতে ভাসা বেশিরভাগ মানুষের সাধ্য নেই এবার ঈদে পশু কোরবানি দেওয়ার। বানভাসিদের মতে, যেখানে জীবনই বাঁচে না, সেখানে কীসের ঈদ?
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে আবারও ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি গত বুধবার রাত থেকে বাড়তে শুরু করেছে। নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে চলে না আসতেই আবারও বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। গতকাল দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও তিস্তা ও নুনখাওয়া পয়েন্টে পানি কমছে। এ অবস্থায় দীর্ঘ এক মাস ধরে পানিবন্দী পরিবারগুলোর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের খামার বজরা গ্রামে মাহবুবার রহমান (৬৫) নামে এক ব্যক্তি মাছ ধরতে গিয়ে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন। পরপর তিন দফা বন্যায় জেলায় শিশুসহ ২৩ জন পানিতে ডুবে মারা গেলেন। বন্যার পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই নিজ বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখনো বাড়িতে কাদা থাকায় এসব বানভাসিরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। উঁচু বাঁধ ও স্কুল-কলেজসহ আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা বন্যার্তরা পানি কমলেও এখন বাড়ি ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। তাছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি কমলেও এখনো অনেক বসতভিটা পানির নিচে রয়েছে। অনেকের বসতভিটার চারপাশে পানি থৈ থৈ করছে। এ অবস্থায় আগামীকাল কোরবানির ঈদ। এবারের বন্যা কবলিতদের নিরানন্দন কোরবানির ঈদ কাটবে কারও পানিতে, আবার যারা ওয়াপদা বাঁধের ঝুপড়ি ঘরে আর আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে ঈদ কাটবে। লালমনিরহাট : নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় লালমনিরহাটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো জেলার তিস্তা-ধরলার ৬৩ চরের মানুষের ঘরে রয়েছে হাঁটু পানি। আর তাই ঈদ তাদের কাছে ফিকে হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষেরা খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছেন। রংপুর : উত্তরাঞ্চলের নদী ভাঙনের শিকার অনেক মানুষের এবারের ঈদ কাটবে রাস্তার পাশে কিংবা বাঁধে। করোনা দুর্যোগ, বন্যায় ফসলহানি ও নদী ভাঙনে হাতে নগদ টাকা না থাকায় চরের বাসিন্দাদের অনেকেরই ভাগ্যে জুটবে না ভালো খাবার। চরাঞ্চলের জন্য ভিজিএফ কিংবা আলাদা কোনো বরাদ্দও নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর চরাঞ্চলে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। গঙ্গাচড়ার চরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ প্রায় ৩৫০ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে লোকজন আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে গরু-ছাগলসহ রাস্তায় অবস্থান করছে। বগুড়া : একদিকে করোনাভাইরাস অন্যদিকে বন্যার পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে আসন্ন ঈদুল আজহার আনন্দ নেই। সোনাতলা উপজেলার তেকানীচুকাইনগর, মধুপুর, পাকুল্লা, সদর ইউনিয়ন ও জোড়গাছা ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস ধরে করোনাভাইরাসের কারণে ওই এলাকার দরিদ্র মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।