শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ইসির ডাকে সাড়া নেই রাজনৈতিক দলগুলোর

মতামত দিয়েছে ৪১ দলের মধ্যে মাত্র ১৬ দল, ১০ নাগরিক

গোলাম রাব্বানী

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের খসড়ার বিষয়ে মতামত দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে আজ। দ্বিতীয় দফা সময় বাড়িয়েও নির্বাচন কমিশনের ডাকে সাড়া দেয়নি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো। প্রথম দফায় ৭ জুলাই পর্যন্ত মতামত চেয়ে ইসি সব রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু কেউ মতামত না দেওয়ায় সে সময় দ্বিতীয় দফায় ৩১ জুুলাই পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয় কমিশন। কিন্তু ২৪ দিন সময় বাড়িয়ে ৪১টি দলের মধ্যে মাত্র ১৬টি রাজনৈতিক দলের মতামত পেয়েছে ইসি। এ ছাড়া ১০ জন নাগরিক ও ১০টি অনিবন্ধিত দল ইসিতে মতামত দিয়েছে। ইসির কর্মকর্তা বলছেন, ইসির ডাকে সব দল সাড়া দেয়নি। এমনকি দেশের মাত্র ১০ জন নাগরিক মতামত দিয়েছেন। তবে মতামত দেওয়ার জন্য আর সময় বাড়ানো হবে না। এদিকে দলের সব পর্যায়ে নারী সদস্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পাঁচ বছর সময় বাড়াতে বলল ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, দলটির ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণের বিধান প্রস্তাবিত নতুন আইনে রাখার জন্য মতামত দিয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত মোতাবেক ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণের বিধান রয়েছে। ইসি সচিব বলেন, ‘মতামতগুলো মিশ্র। কেউ বলেছেন উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রের জন্য আলাদা আলাদা সময় বেঁধে দেওয়ার জন্য। কেউ বলেছেন নারী সদস্যপদ পূরণে সময় আর না বাড়াতে। এ ছাড়া অন্য বিষয়েও তারা মতামত দিয়েছেন। মতামতগুলো আমরা একীভূত করছি। তারপর কমিশনের কাছে দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ৩১ জুলাই মতামত দেওয়ার সময় শেষ। আর সময় বাড়ানো হবে না। এরপরই যৌক্তিক মতামতের ভিত্তিতে নতুন দল নিবন্ধন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বর্তমানে আরপিও থেকে দল নিবন্ধনের অধ্যায়টি তুলে দিয়ে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন, ২০২০’ নামে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করছে ইসি। আর এই নতুন আইনের খসড়ার ওপর সবার কাছে মতামত চেয়েছিল সংস্থাটি। ইসি তৈরি করা দল নিবন্ধনের নতুন আইনের খসড়ায় দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্যপদ পূরণের বিষয়ে সময়ের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে দলগুলো নিজেদের গঠনতন্ত্রে কতদিনের মধ্যে নারী সদস্যপদ পূরণ করবে তা উল্লেখ করবে এবং ইসিকে সময় সময় সেই প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করবে। খসড়ায় নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম শর্ত হিসেবে আবেদন করার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী দুটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসন পাওয়ার বিষয়টিও রাখা হয়েছে। ওই সংসদ নির্বাচনগুলোর যে কোনো একটিতে আবেদনকারী দলের অংশগ্রহণ করা আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ পাওয়ার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া পরপর দুই বছর সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন বাতিলের বিষয়সহ প্রস্তাবিত আইনে একগুচ্ছ শর্ত রাখা হয়েছে। কোনো দল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে সেই দলকে বাধ্যতামূলকভাবে ইসি থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১টি।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ৩১ জুলাই পর্যন্ত খসড়া আইনের বিষয়ে মতামত দিতে সব নিবন্ধিত দলের সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিবের কাছে ই-মেইলে ৮ জুলাই চিঠি পাঠানো হয়। নাগরিকদের জন্যও এ সময় মত প্রকাশের বিষয় উন্মুক্ত ছিল। প্রথম দফা নির্ধারিত সময়ে দল ও নাগরিকদের তেমন সাড়া মেলেনি। দ্বিতীয় দফায় মাত্র ১৬টি দল, ১০ জন নাগরিক ও ১০টি অনিবন্ধিত দল মতামত দিয়েছে। ১৬ জুন প্রস্তাবিত ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন, ২০২০’-এর ওই খসড়া ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। আরপিওর ৯০(এ) থেকে ৯০(আই) পর্যন্ত অনুচ্ছেদ নিয়ে এখন আলাদাভাবে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন’ নামে বাংলায় নতুন একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করে ইসি। মৌলিক আইনের খসড়ার ওপর মতামত দেওয়া নিয়ে খুব ‘অপ্রতুল’ সময় দিয়েছে বলে মনে করে ক্ষমতাসীন দলটি। দলের অভ্যন্তরে আলোচনা ও মতামত নেওয়ার সুবিধার্থে এক মাস সময় বাড়াতে বলে। বিএনপি ইসির উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছে, মহামারীকালে আইন প্রণয়ন কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর