শিরোনাম
শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

লেবানন প্রবাসীরা ‘অর্থহীন প্রবাস জীবন’ থেকে মুক্তি চান

শিমুল মাহমুদ

লেবানন প্রবাসীরা ‘অর্থহীন প্রবাস জীবন’ থেকে মুক্তি চান

নিহতের সন্ধানে গতকালও বৈরুত বন্দরে তল্লাশি চালায় দেশটির উদ্ধারকারী দল -এএফপি

এক সময়ের লোভনীয় শ্রমবাজার লেবাননে এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাহাকার চলছে। দেশটির রাজধানী বৈরুতের বন্দর এলাকায় গত মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর প্রবাসীদের টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিস্ফোরণের আগের দিন এক বছর ধরে অর্থনৈতিকভাবে চরম সংকটে থাকা লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিফ হিট্টি লেবাননকে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার দ্বারপ্রান্তে’ উল্লেখ করে পদত্যাগ করেন। এদিকে ‘সরকারের অবহেলা বিস্ফোরণের কারণ’ উল্লেখ করে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। ক্ষুব্ধ লেবানিজরা বলছেন, চিরশত্রু ইসরায়েল এসে বোমা মেরে গেলে আমরা সান্ত্বনা পেতাম। কিন্তু সরকারের অবহেলায় জীবন দিতে হবে তা মেনে নেওয়া যায় না।

মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণে বৈরুত বন্দরের কাছের বাড়িগুলোর অধিকাংশ মাটিতে মিশে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। রাজধানীর বাকি অংশেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। ৪০ লাখ মানুষের দেশটির রাজধানীতে বাস করেন প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষ। ৩ লাখ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আর সর্বাধিক দেড় লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির অধিকাংশই থাকেন বৈরুত ও আশেপাশে। তাদের জীবনযাত্রা এখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এদিকে বিস্ফোরণের তীব্রতায় আহত অসংখ্য মানুষ এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। আহত প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকেই বৈধ কাগজপত্র না থাকায় চিকিৎসা পাননি। নারায়ণগঞ্জের রাশেদ কাজ করতেন বৈরুত পোর্ট থেকে অল্প দূরত্বের ঝিমাইজি এলাকায়। বিস্ফোরণের দিন থেকে তিনি নিখোঁজ। তার সহকর্মীরা তিন দিন ধরে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার লেবানিজ। তাদের নিজেদেরই এখন কোনো কাজ নেই। এই প্রেক্ষাপটে গত ২৭ নভেম্বর লেবাননের শ্রম মন্ত্রণালয় বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

সবকিছু মিলিয়ে লেবাননে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন অমানবিক জীবনযাপন করছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের অধিকাংশের প্রবাস জীবন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। অনেকে দেশ থেকে টাকা নিয়ে চলছেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। তাদের জরিমানা দিয়ে দেশে ফিরতে হবে। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার প্রবাসী দেশে ফিরতে বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাসে নাম নিবন্ধন করে অপেক্ষায় আছেন। এম জহির নামের এক প্রবাসী নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আল মুস্তাহিদুর রহমানের কাছে সম্প্রতি একটি মানবিক আবেদন জানিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, ‘লেবানন প্রবাসীদের দুঃখের দিনের সাথী হয়ে আপনি এসেছেন। আমরা আশা করি, অচিরেই আমাদের কষ্টের অবসান হবে। প্রায় এক বছর পার হয়েছে, এদেশে ডলার নেই। হাজার হাজার লোক বেকার, খাবার খরচ, ঘর ভাড়ার জন্য অনেকে দেশ থেকে টাকা এনে চলছেন। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বর্তমানে খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে। ৭৫০০ জন প্রবাসী দূতাবাসে নিবন্ধন করেছেন, বিভিন্ন সমস্যার কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না। এ ছাড়াও হাজার হাজার লোক নিবন্ধন করতে পারেনি। দীর্ঘদিন টাকা পাঠাতে পারছি না। তাই দেশে আমাদের পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। অর্থহীন প্রবাস জীবন থেকে আমরা আপনার কাছে মুক্তি চাই। নচেৎ রোগ, শোক, অর্ধাহারে-অনাহারে এখানেই আমাদের মৃত্যু হবে। আপনার সদয় বিবেচনায়, সার্বিক সহযোগিতা করে দেশে ফেরার সুযোগ করে দিলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর