রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ইয়াবাকেন্দ্রিক অপরাধ রুখতে পারলে ঝুঁকিমুক্ত হবে কক্সবাজার

মাহমুদ আজহার

ইয়াবাকেন্দ্রিক অপরাধ রুখতে পারলে ঝুঁকিমুক্ত হবে কক্সবাজার

লে. জে. (অব.) মইনুল ইসলাম

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবাকেন্দ্রিক অপরাধ বন্ধ করতে পারলে আমাদের কক্সবাজার অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত হয়ে যাবে। এখন মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসছে। এটা তো আর করোনাভাইরাস না। এটা উড়েও আসে না। কেউ না কেউ এটা বহন করে নিয়ে আসেন। বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবাকারবারি বলে যাদের মারা হচ্ছে, তারা আমাদের দেশের মানুষ, ইয়াবা বহনকারী। এটা বন্ধ করতে হলে মিয়ানমার সীমান্ত বন্ধ করে দিলেই হয়। এটা পৃথিবীর অনেক দেশেই হয়।

গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনালাপে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সাবেক এই মহাপরিচালক। সরকারের উদ্দেশে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, আপনি ইয়াবাগুলো কিনে নেন, কিন্তু পয়সা দেবেন না। অন্যভাবে তাদের সহযোগিতা করেন। যেন এটা বাজারে না যায়। তাছাড়া সীমান্তের ওপারে ইয়াবা উৎপাদন বন্ধ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সবকিছুই তো আর জাতিসংঘ করে দেবে না। পৃথিবীতে এখন যে অবস্থা তাতে নিজের স্বার্থ নিজে রক্ষা না করলে কিছুই থাকবে না। প্রতিটি দেশ নিজের স্বার্থই দেখে। আমাদেরও তাই করতে হবে। মিয়ানমার থেকে আমাদের ইয়াবা আসাটা বন্ধ করতে হবে। হয় সেখানে উৎপাদন বন্ধ করাতে হবে না হয় সীমান্ত বন্ধ করে দিতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশই এমনটা করছে। রোহিঙ্গারা যারা আমাদের দেশে আশ্রয় গেড়েছে তারা সংক্ষুব্ধ। তারা সেখানকার সবকিছ্ইু জানে। এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতাও নেওয়া যেতে পারে। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, আমরা সীমান্ত কেন বন্ধ করছি না? কারণ, এতেও কারও কারও লাভ আছে। ইয়াবা যেন নিয়ন্ত্রিতভাবে সবসময়ই আসে তাতেই তাদের লাভ। এতে টাকাটা বেশি পাওয়া যায়। সেখানে একটি ট্যাবলেটের দাম কম। এখানে এটার দাম বেশি। এতে একটি গোষ্ঠী লাভবান হচ্ছে। এতে যারা লাভবান হচ্ছে তাদের টাকার হিসাব কেউ নিচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যারা এসব এলাকায় আছেন, তাদের এই সমস্যা নিরসনের কোনো উদ্যোগ নেই। তাদের সবাই এখানে ফায়দা লুটছেন। সবাই যদি আমরা ফায়দা লুটতে চাই, তাহলে অপরাধ ঠেকাবে কে? সম্প্রতি এক সেনা কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর সবাই খারাপ নয়। পুলিশ বাহিনীকে আমাদের সংবিধানের আওতায় সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে পরিচালিত করতে হবে। সংবিধানে ডিসিপ্লিন ফোর্সের সংজ্ঞা দেওয়া আছে। এখন ওসির নিচে যারা আছেন, তারা এক আইনে চলেন আবার ওসির ওপরে যারা আছেন, তারা বিশেষ আইনে চলেন। একটি ফোর্স দুই আইনে কীভাবে চলে? মইনুল ইসলাম বলেন, এখন একটা সময় এসেছে পরিবর্তনের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিশ্চিত করতে হবে, সীমান্ত দিয়ে যেন ইয়াবা না আসে। যেই সীমান্তে যত বেশি ইয়াবা বা মাদক আসবে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তত বেশি শাস্তির উদ্যোগ নিতে হবে। এটা বন্ধ করাও কঠিন কিছু নয়। সীমান্ত দিয়ে কারা এলো তা তো চোখে দেখা যায়। তাছাড়া আমাদের ড্রোন কিসের জন্য। এটাকে ব্যবহার করতে হবে। আমরা জেনেশুনে চুপ থাকলে দায়দায়িত্ব আমাদের ওপর চলে আসবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। এখন আরেকটি যে সমস্যা হচ্ছে, রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সরকার মনে করে রোহিঙ্গারা তার দেশের অধিবাসী নয়। তাই তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে আমরা একটি ভুল করেছি। সীমান্তের ওই পাড়ে অনেক খালি জায়গা ছিল। আমরা জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারতাম। তারা জাতিসংঘ বা ইউএনএইচসিআরের অধীনে সেখানে থাকত। তারা ওই দেশের নাগরিক, আমাদের দেশে থাকবে কেন? আমরা তো জাতিসংঘকে সেনাবাহিনীসহ নানাভাবে সহযোগিতা করি। এখানে আমাদের কূটনৈতিক দুর্বলতা ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর