বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রথম করোনা ভ্যাকসিন রাশিয়ার

পুতিন বললেন আমার মেয়ের শরীরেও প্রয়োগ, সহজলভ্য জানুয়ারিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রথম করোনা ভ্যাকসিন রাশিয়ার

প্রথম করোনা ভ্যাকসিনের ঘোষণা দেন ভ্লাদিমির পুতিন

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া কভিড-১৯ রোগের একটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ায় এ টিকার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পথে আর কোনো বাধা থাকল না। মাস দুয়েকের মধ্যে এ ভ্যাকসিন ব্যাপক হারে প্রয়োগ শুরু হবে বলে রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গতকাল রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত সরকারি এক বৈঠকে পুতিন বলেন, আজ সকালে বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম টিকা নিবন্ধন করা হলো। মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরিকৃত ভ্যাকসিনটি নিরাপদ। আমি জানি, এটা বেশ কার্যকরভাবেই কাজ করে এবং শক্তিশালী ইমিউনিটি গড়ে তোলে। আমি আবারও বলছি- প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উতরে গেছে এই ভ্যাকসিন। আমার এক মেয়ে ভ্যাকসিনটি নিয়েছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তার শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ হয়েছিল, পরদিন ৩৭। এতটুকুই। কভিড-১৯ এর এই ভ্যাকসিনের গণহারে উৎপাদন শিগগিরই শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পরে এক ফেসবুক পোস্টে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের ওষুধটি এই মহামারীর বিরুদ্ধে খুব কার্যকর এবং এটি শুধু রাশিয়ার জন্য আশা জাগায়নি, গোটা বিশ্বের জন্যই সুখবর নিয়ে এসেছে। একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যাটেলাইটই মানব জাতিকে মহাশূন্যে নিয়ে গিয়েছিল। এবার রাশিয়ান এই ভ্যাকসিনটি করোনামুক্ত বিশ্বের পথ দেখাবে। পুতিন বলেন, ভ্যাকসিনটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ঠেকাতে কার্যকর প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে সক্ষম। এ ছাড়া এটি নিরাপদ বলেই প্রথমে আমার মেয়েকে প্রয়োগ করেছি। কভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথে রুশ বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব ধাপ পার হয়ে এসেছেন। তারা প্রমাণ করেছেন এই ভ্যাকসিন নিরাপদ ও কার্যকর।

রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ট্যাটিয়ানা গোলিকোভা বলেন, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে প্রথম এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। তবে সাধারণ জনগণের জন্য ভ্যাকসিনটি সহজলভ্য হবে আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে।

পুতিন ঘোষণা দিলেও রাশিয়ার এ টিকার কার্যকারিতা এবং এটি সব প্রোটোকল মেনেছে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা।  তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, মানুষের ওপর দুই মাসেরও কম সময় পরীক্ষা চালানোর পর চূড়ান্ত পরীক্ষার আগেই মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের বানানো ওই টিকার অনুমোদন দেওয়া হলো। রয়টার্স জানিয়েছে, কোনো টিকা চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার আগে বড় সংখ্যক রোগীর ওপর এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হয়, যাকে বলে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল। কিন্তু সেই ধাপের আগেই রাশিয়া সরকার গামালিয়া ইনস্টিটিউটের ওই টিকার অনুমোদন দিয়েছে। 

তবে গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যালেক্সেন্ডার গিন্টসবার্গ বলেন, অ্যাডিনো ভাইরাসের ভিত্তিতে তৈরি নির্জীব কণা ব্যবহারে এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। এই ভ্যাকসিন নিয়ে যে সমালোচনা হোক না কেন, এতে মানব শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না। অ্যালেক্সেন্ডার গিন্টসবার্গের বক্তব্য অনুযায়ী, ভ্যাকসিন দেওয়ার পর অনেকের জ্বর আসতে পারে। কারণ শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার পর এটি একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যদিও প্যারাসিটামল খেয়ে খুব সহজেই তার থেকে মুক্তি মিলবে।

বিশ্বজুড়ে করোনার তা-ব চললেও এখন পর্যন্ত রাশিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশ এর ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের তৈরি অন্তত দুই শতাধিক ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২৪টি মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানুষের দেহে প্রয়োগের জন্য অনুমোদন পাওয়ার আগে মূলত তিনটি ধাপে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা হয়। তৃতীয় কিংবা চূড়ান্ত ধাপে হাজার হাজার মানুষের দেহে প্রয়োগের মাধ্যমে ভ্যাকসিনটি নিরাপদ ও কার্যকরী কিনা তা পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু তৃতীয় ধাপে যাওয়া ছয়টি ভ্যাকসিনের মধ্যে রাশিয়ারটি নেই। তৃতীয় ধাপে গণহারে এখনো পরীক্ষা শেষ না হতেই সবার আগে ভ্যাকসিন ব্যবহারের ঘোষণা দিয়ে দিনক্ষণ ঠিক করায় রাশিয়ার ভ্যাকসিনটি নিয়ে সন্দেহের কথা বলছেন পশ্চিমারা। ব্যাপকহারে এর ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে বলে সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল সুরাশকোকে লেখা এক চিঠিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস অরগানাইজেশন (অ্যাক্টো) সতর্ক করেছে। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভ্যাকসিন প্রয়োগে রাশিয়ার তাড়াহুড়ো দেখে দেশটিকে আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা ও বিধিনিষেধ অনুসরণের জন্য আহ্বান জানায়।

রাশিয়ার সঙ্গে ট্রায়ালে ফিলিপাইন : গামালিয়া ইনস্টিটিউট ও দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাসের এই ভ্যাকসিন ফিলিপাইনে সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। মস্কো বলছে, ফিলিপাইন চাইলে ভ্যাকসিনটির সহযোগী হিসেবে উৎপাদনও করতে পারবে। মস্কোর এই প্রস্তাবের পর ফিলিপাইন বলছে, তারা ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা, সরবরাহ এবং উৎপাদন কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে প্রস্তুত আছে। এশিয়ার যে কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ফিলিপাইন তার মধ্যে অন্যতম। ফিলিপিনো প্রেসিডেন্ট দুতার্তে বলেছেন, আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বলব- করোনাভাইরাসের লড়াইয়ে আপনাদের গবেষণায় আমার অগাধ বিশ্বাস আছে। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা আসলেই মানবতার কল্যাণের জন্য ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছেন। রাশিয়ার কাছ থেকে এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন দুতার্তে।

সর্বশেষ খবর