কক্সবাজারের টেকনাফে সিনহা হত্যা মামলায় চার পুলিশ সদস্য এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীর প্রত্যেককে সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কক্সবাজার আদালতের পুলিশ পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সিনহা হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপসহ তিন আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছিল আদালত। বাকি চার পুলিশ সদস্যকে দুই দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে সোমবার নতুন করে ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। একইভাবে মঙ্গলবার পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করে তাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। এ দুটি আবেদনের শুনানি ছিল গতকাল। আদালত আবেদন দুটির শুনানি শেষে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।
কক্সবাজার কোর্টপুলিশের পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি কনস্টেবল সাফানুল করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল মো. আবদুল্লাহ আল মামুন ও সহকারী উপপরিদর্শক লিটন মিয়াকে সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। একই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী মো. আয়াছ, নুরুল আমিন ও নাজিম উদ্দিনকেও সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।প্রসঙ্গত, ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৫ আগস্ট টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ ও দায়িত্বরত পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয়জনকে আসামি করে সিনহার বোন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার আসামি ৯ পুলিশ সদস্যকেই বরখাস্ত করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে কক্সবাজার র্যাব-১৫। ওই মামলায় ওসি প্রদীপসহ তিনজনকে সাত দিনের রিমান্ড ও অন্য আসামিদের দুই দিন করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয় আদালত। ওসি প্রদীপসহ সাত আসামি এখনো কারাগারে রয়েছেন। একই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ৯ আগস্ট সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ও ১০ আগস্ট সাহেদুল ইসলাম সিফাত জামিনে মুক্তি পান।
মহেশখালীতে হত্যা মামলা : কক্সবাজারের মহেশখালীতে তিন বছর আগে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আলোচিত আবদুস সাত্তার হত্যার ঘটনায় টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে মহেশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ভিকটিম আবদুস সাত্তারের স্ত্রী হামিদা আক্তার (৪০)। মামলায় ওসি প্রদীপ ছাড়াও পুলিশের আরও ৫ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন এসআই হারুনুর রশীদ, এসআই ইমাম হোসেন, এএসআই মনিরুল ইসলাম, এএসআই শাহেদুল ইসলাম ও এএসআই আজিম উদ্দিন। ২৯ আসামির মধ্যে ‘প্রধান আসামি’ হিসেবে রয়েছেন ফেরদৌস বাহিনীর প্রধান ফেরদৌস (৫৬)। তিনি একই এলাকার মৃত নুরুল কবিরের ছেলে।
হত্যা মামলার বাদী হামিদা আক্তার জানান, ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে ফেরদৌস বাহিনীর সহায়তায় হোয়ানকের লম্বাশিয়া এলাকায় তার স্বামী আবদুস সাত্তারকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা নেয়নি। অবশেষে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। তখন বিচারক ‘ট্রিট ফর এফায়ার’ হিসেবে এটিকে গণ্য করার আদেশ দেন। সেই আদেশের আলোকে একই বছরের ১৭ জুলাই কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে লিখিত দরখাস্ত দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ আবেদন আমলে নেয়নি।