বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আজাদসহ পাঁচজনকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে ভয়াবহ প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদসহ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে দুর্নীতি অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদকের সংশ্লিষ্ট টিম গতকাল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।

এর আগে সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আজাদসহ পাঁচ কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন। অন্য চারজন হলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (ওএসডি) ডা. মো. আমিনুল হাসান, উপপরিচালক মো. ইউনুস আলী, মো. শফিউর রহমান ও গবেষণা কর্মকর্তা মো. দিদারুল ইসলাম। ৬ আগস্ট দুদকের পৃথক চিঠিতে তাদের তলব করা হয়। দুদকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি একজন সৎ, দক্ষ ও সফল কর্মকর্তা হিসেবে সারা জীবন কাজ করেছি। দুদকের তদন্তের বিষয়ে যা জানি, বিস্তারিত বলেছি। অপরাধ যে-ই করুক, তার বিচার হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) ক্রয়সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ দুদক তদন্ত করছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি হিসেবে আমি এ সম্পর্কে কী জানি, তা শোনার জন্য দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে আসতে অনুরোধ করেন। আমি যা জানি, বিস্তারিত বলেছি। তদন্তাধীন বিষয়টি সম্পর্কে এ মুহূর্তে এর বেশি বলা সম্ভব নয়।’ ডা. আজাদ বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমি ২০১৬ সাল থেকে ডিজির দায়িত্ব পালন করে আসছিলাম। আমি লক্ষ্য করছিলাম, আমাকে নিয়ে অপপ্রচারের চেষ্টা শুরু হয়েছে, যা আমার কাছে সম্মানের বিষয় নয়। তাই বিবেকতাড়িত হয়ে ২১ জুলাই স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এটা বলে শেষ করতে চাই, আমি একজন কঠোর পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান, সৎ, দক্ষ, সফল ও মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে সারা জীবন কাজ করেছি। আমি অহংকার, অহমিকামুক্ত, সরল ও সজ্জন ব্যক্তি।’

আজাদ বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যব্যবস্থার সব ক্ষেত্রে আমার পর্যাপ্ত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা আছে। কভিডের মতো মহাদুর্যোগে লাখ লাখ মানুষের যাতে প্রাণহানি না ঘটে, সেজন্য আমার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও বিবেকবোধ থেকে নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে কাজ করেছি। এর পরও কভিড থেকে নিজেকেও বাঁচাতে পারিনি।’

এদিকে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার বিষয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চুক্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে ডা. আজাদকে আজ (বৃহস্পতিবার) আবারও কমিশনে হাজির হতে বলা হয়েছে।

৬ আগস্ট দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মীর মো. জয়নুল আবেদীন স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আজাদকে তলব করে চিঠি পাঠান। সে চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কভিড-১৯-এর চিকিৎসায় নিম্নমানের মাস্ক, পিপিইসহ আনুষঙ্গিক স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি কেনায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎপূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগ সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য গ্রহণের জন্য তলব করে দুদক। তলবি নোটিসে উল্লেখ করা হয়, নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানে ব্যর্থ হলে বর্ণিত অভিযোগসংক্রান্ত বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই মর্মে গণ্য করা হবে।

দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত নোটিসে তিনি বলেছেন, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ও অন্যদের বিরুদ্ধে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে করোনা সনদ দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে। সাহেদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য গ্রহণ প্রয়োজন। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক মো. আমিনুল হাসানসহ চারজনকে দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়। চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও জালিয়তির অভিযোগে ৬ ও ৭ জুলাই অভিযানে ঢাকায় রিজেন্টের দুটি হাসপাতাল বন্ধ করে র‌্যাব। এ ঘটনায় করা মামলায় পরে সাহেদকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে করোনার চিকিৎসার দায়িত্ব দিয়ে ২১ মার্চ রাজধানীর মহাখালীতে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যের ডিজি আবুল কালাম আজাদসহ একাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের পর এর প্রতারণা ও জালিয়তির বিষয়ে ইতোমধ্যে অনেক তথ্য ও অভিযোগ বেরিয়ে এসেছে। পরে জানা যায়, করোনা চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর দায়িত্ব দেওয়া হলেও রিজেন্ট হাসপাতালের এ বিষয়ে তেমন সক্ষমতাই ছিল না। হাসপাতাল পরিচালনার অনুমতি বা লাইসেন্স যেমন ছিল না, তেমনি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করেই সেখানে সনদ দেওয়া হতো। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একের পর এক কেলেঙ্কারিতে সমালোচনার মুখে ২১ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি আবুল কালাম আজাদ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর