বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্য সাত দিনের রিমান্ডে

সেই শাপলাবাগে বসেই দেশব্যাপী হামলার ছক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঈদুল আজহার আগে দেশব্যাপী হামলার পরিকল্পনা করেছিল নব্য জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সামরিক শাখার সদস্যরা। এরই অংশ হিসেবে তারা ২৪ জুলাই ঢাকার পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের পাশে ও ৩১ জুলাই নওগাঁ জেলার সাপাহার এলাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের   মন্দিরে বোমা হামলা করে। এমনকি ২৩ জুলাই সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার শরিফে আরেকটি হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় তা ব্যর্থ হয়। আর এসব পরিকল্পনা করা হয় ২০০৫ সালে শায়খ আবদুর রহমান যে এলাকায় বসে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার ছক করেছিলেন, সিলেটের সেই শাপলাবাগ এলাকাতেই।

বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পল্টনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারের পর গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান (২৬), সানাউল ইসলাম সাদি (২৮), রুবেল আহমেদ (২৮), আবদুর রহিম জুয়েল (৩০) ও সায়েম মির্জা (২৪)। মঙ্গলবার অপারেশন এলিগ্যান্ট বাইট চালিয়ে সিলেটের মিরাবাজার, টুকের বাজার ও দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন। এদিকে গ্রেফতার নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্যের সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসীম এ আদেশ দেন। এদিন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল নজরুল আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য। নব্য জেএমবির শূরা সদস্য শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামানের নেতৃত্বে তারা সিলেটের শাপলাবাগের একটি বাসায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণের আড়ালে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। নাইমুজ্জামানের সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতেন সানাউল সাদি। বাকিরা সবাই নির্দেশনা পালন করতেন। সেখান থেকেই দেশব্যাপী হামলার ছক করা হয়। ঈদের আগেই কেন হামলার পরিকল্পনা করা হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস প্রচার করে জিলহজ মাসের ১০ তারিখের মধ্যে হামলা করলে কথিত পুণ্যের অধিকারী হবে। আইএস মতাদর্শী বিভিন্ন দেশের উগ্রবাদী গোষ্ঠী এ রকমই চেষ্টা চালায়। বাংলাদেশে আইএস মতাদর্শী নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম উভয়েই সে চেষ্টা চালিয়েছে। আনসার আল ইসলাম ব্যর্থ হলেও সফল হয়েছে নব্য জেএমবি। তবে অন্যদের প্রচেষ্টা আইনশৃঙ্খলার সতর্কতার কারণে ব্যর্থ হয়েছে।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান বারিস্তা নামে একটি কফিশপে কফি মেকার হিসেবে কাজ করেন। ২০১৯ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স সম্পন্ন করেন তিনি। ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন নাইমুজ্জামান। তিনি সামরিক শাখার প্রধান প্রশিক্ষক এবং সামরিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সিলেটের শাপলাবাগের বাসাটি ভাড়া নেন। সানাউল ইসলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র। রুবেল আহমেদ ২০১৬ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সিলেট শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। তিনি সিলেটে টুকেরবাজারে সার, বীজ ও কিটনাশকের ব্যবসা করেন। আবদুর রহিম জুয়েল রেন্ট-এ-কারের চালক হিসেবে কাজ করতেন। তার গাড়ি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। সায়েম মির্জা সিলেটের মদন মোহন কলেজের অনার্স শেষবর্ষের ছাত্র। ইতিমধ্যে তারা ঘটনাগুলোর দায় স্বীকার করেছেন। এই দলের আরও কয়েকজন সদস্য পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই হামলাটি জেএমবির দিক থেকে ছিল সাংগঠনিক এবং সফল। তবে বর্তমানে সাংগঠনিক কাঠামো তাদের নেই। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান জানান, পুরনো জেএমবির নেতা সালাউদ্দিন সালেহীন ভারতে লুকিয়ে থাকতে পারেন। প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহা ঘিরে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের কথিত ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণার উদ্যোগে পুলিশ দেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করেছিল। তখন সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধে ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছিল পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর