শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

কর্মচাঞ্চল্য বিদেশি মিশনগুলোতে

হোম অফিসের পরিবর্তে দূতাবাসগুলোতে উপস্থিতি বাড়ছে, ব্রিটিশ ও চীনা ভিসা চালু, পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ইইউসহ অন্যরা

জুলকার নাইন

কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসছে ঢাকার বিদেশি দূতাবাসগুলোতে। নিয়মিত ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করেছে ব্রিটিশ হাইকমিশন। ভিসা কার্যক্রম চালাচ্ছে চীনা দূতাবাসও। নিয়মিত না দিলেও জরুরি ভিসা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। অন্য মিশনগুলো ভিসা কার্যক্রম শুরু না করলেও হোম অফিসের পরিবর্তে সরাসরি মিশনে কাজ শুরু করেছেন তাদের বেশির ভাগ কূটনীতিক। কেউ কেউ অফিসের বাইরের কর্মকান্ড শুরু করেছেন। কেউ কেউ ঢাকার বাইরে সফরও করছেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা সাপেক্ষে আসছে দুয়েক সপ্তাহে আরও কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। জানা যায়, গত মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া শুরুর পর থেকেই স্থবির হতে শুরু করে বিদেশি দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম। বিশ্বব্যাপী চলতে থাকা লকডাউন বাংলাদেশেও শুরু হয়। অন্য সব ধরনের অফিস-আদালতের মতো নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয় দূতাবাসগুলোর। দীর্ঘ অচলাবস্থায় স্বজনদের কাছাকাছি থাকার প্রয়োজনে এবং চিকিৎসাসেবা নিয়ে শঙ্কায় একে একে ঢাকা ছাড়তে শুরু করে বিদেশিরা। চলে যান ঢাকার বিদেশি দূতাবাসগুলোতে কর্মরতদের পরিবার-পরিজন। কূটনীতিকদের বাইরে দূতাবাসের অন্য সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বড় অংশও ছুটিতে যান। মানুষের ভিড় বা সংশ্রব এড়াতে বন্ধ রাখা হয় ভিসা সেবা। দূতাবাসের অভ্যন্তরীণ জরুরি কার্যক্রম চালানো হয় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। এতদিন বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ভিসা ব্যবস্থার তেমন প্রয়োজনও হয়নি। তবে ধীরে ধীরে বৈশ্বিক চলাচল শুরু হওয়ায় ভিসা চালুর বিষয়টি আলোচনায় আসে। ঢাকায় ভিএসএফ সেন্টারে গত ১৪ জুলাই থেকে ব্রিটিশ ভিসার আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। জমাও পড়ছে বেশ ভালো সংখ্যক আবেদন। এখন দিনে গড়ে দুটি ফ্লাইট ঢাকা ও লন্ডনের মধ্যে চলাচল করছে। তবে ঢাকা থেকে লন্ডনে যাওয়ার পর বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে সবাইকে। কারণ ব্রিটিশ সরকার ৫৭টি দেশের যাত্রীদের জন্য এই কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করেছে। ব্রিটিশ ভিসা চালু হলেও ইউরোপের দেশগুলোর সেনজেন ভিসা পুরোপুরি বন্ধ আছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে নিয়মিত বিরতিতে।  করোনা সংক্রমণ একটি স্টান্ডার্ড লেভেলে না নামা পর্যন্ত সেনজেন ভিসা চালুর সম্ভাবনা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা এখনো বন্ধ থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে ভিসার আবেদন গ্রহণ করছে। তবে কেন জরুরি তা উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে। ফলে প্রতিটি কেস বিবেচনায় নিয়ে ভিসার আবেদন গ্রহণ করা হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার ইদানীং বাইরে বের হচ্ছেন। বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা সাধারণত ভাইরাসের ভয়ে বাইরে বের হন না। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার সম্প্রতি গাইবান্ধা সফর করেছেন। তিনি সেখানে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সড়ক, রেলপথ ও বিমান সব যোগাযোগ এখনো বন্ধ। পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারতের ভিসাও বন্ধ। ভিসা চালুর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মচাঞ্চল্য রয়েছে পুরোপুরি। সরাসরি মিশনে উপস্থিত হয়ে কাজ করছেন বেশির ভাগ কূটনীতিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী নিয়মিতই ঢাকার সচিবালয়ের বিভিন্ন দফতরে গিয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। চীনা দূতাবাসের ভিসা ব্যবস্থা চলমান আছে শুরু থেকেই। মহামারীর মধ্যেও ঢাকা-গুয়াংজু ফ্লাইট চালু রাখা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি একটি ফ্লাইটে একসঙ্গে বেশ কিছু যাত্রীর করোনা পজিটিভ পাওয়ার পর এটি স্থগিত করা হয়। তবে এই ফ্লাইট শিগগিরই চালুর বিষয়ে আশাবাদী উভয় পক্ষই। পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের ভিসাও বন্ধ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নতুন ভিসা প্রক্রিয়াও বন্ধ। তবে দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে ধীরে ধীরে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর