শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রতারণার বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান

বগুড়ায় আরেক সাহেদ যুবলীগ নেতা ডিজে শাকিল গ্রেফতার

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় আরেক সাহেদ যুবলীগ নেতা ডিজে শাকিল গ্রেফতার

তার নাম ডিজে শাকিল। আলোচিত প্রতারক ‘সাহেদ’ এর মতোই তার কর্মকান্ড। বুধবার বগুড়ার গোয়েন্দা পুলিশ দুই সঙ্গীসহ তাকে গ্রেফতার করেছে। ডিজে শাকিল রিশান ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক লোন সার্ভিস নামের দুই ভুয়া প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। সব ধরনের নিয়োগপত্র, স্ট্যাম্প, চেক নিজের কম্পিউটারে তৈরি করত এই শাকিল। গ্রেফতার ডিজে শাকিল ওরফে রাব্বী শাকিল (৩২) সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি। বগুড়া জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি টিম তাড়াশে ডিজে শাকিলের অফিসে অভিযান চালিয়ে তাকে  গ্রেফতার করে। এ সময় তার সহযোগী আইটি বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন কবির (২৮) ও ম্যানেজার হারুনার রশিদকেও (২৬) গ্রেফতার করা হয়। ডিজে শাকিলের অফিস থেকে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকার ভুয়া চেক, সামরিক বাহিনীর ভুয়া নিয়োগপত্র, বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভুয়া পরিচয়পত্র ছাড়াও অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বগুড়া সদর থানায় মামলা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা ফেসবুকে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক লোন সার্ভিস নামে পেজ খুলে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে  নেয়। গতকাল তাকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করে ছয় দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

বগুড়ার গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আসলাম আলী জানান, ইন্টারন্যাশনাল লোন সার্ভিসের নামে ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দেখে বগুড়ার আমায়রা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী আমানত উল্লাহ তারেক ও অভি এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী আশিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কমিশনের মাধ্যমে তাদেরকে পাঁচ কোটি টাকা লোন পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কয়েক দফায় ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ডিজে শাকিল। এরপর তাদেরকে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে লোন অনুমোদনের চিঠি এবং সাড়ে চার  কোটি টাকার দুটি চেকের স্ক্যান কপি মেইলে দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও  চেকের মূলকপি না দেওয়ায় তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন লোন অনুমোদনের চিঠি এবং চেকগুলো ভুয়া। পরে তারা বিষয়টি বগুড়া জেলা পুলিশকে জানালে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইমরান মাহমুদ তুহিনের  নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাড়াশে অভিযান চালায়।

বগুড়া ডিবি পুলিশের ওসি আসলাম আলী জানান, গ্রেফতারকৃতদের অফিসে অভিযান চালিয়ে ভুয়া চেক ছাড়াও সামরিক বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগপত্র ও চুক্তিনামা, ৬০টি সিমকার্ড, তিনটি কম্পিউটার ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভুয়া পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের নামে বগুড়া সদর থানায় প্রতারণা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, যে কোনো অপরাধ দমনে জেলা পুলিশ সদা তৎপর রয়েছে। বগুড়ার এক ব্যবসায়ীর মামলায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রতারকদের গ্রেফতার করেছে।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশের বারুহাস গ্রামের বাসিন্দারা জানান, বছর দশেক আগে শাকিল ঢাকায় ডিজে পার্টির লোকদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করত। তাদের সহযোগী হিসেবে থাকতে থাকতে ডিজে শাকিল হিসেবে পরিচিতি পায় সে। তাড়াশ সদরে বিয়ের পর বদলে যেতে থাকে তার অবস্থান। আগে কখনো দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হলেও হঠাৎ করেই উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেয়। আর এই পদ ব্যবহার করে বড় নেতাদের সঙ্গে প্রতারক সাহেদের মতো ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অর্থের কিছু অংশ শাকিল দুই একজন নেতার কাছেও পৌঁছে দিত। তার প্যানা পোস্টারে বিভিন্ন পদ ব্যবহার করে থাকে যার অধিকাংশই ভুয়া।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও গত ৮ বছর ধরে তার চলাফেরা ছিল উচ্চ পর্যায়ের। বুধবার গ্রেফতার হওয়ার পর তার গ্রামের মানুষ হতবাক হয়ে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর