শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

থমকে আছে সেদিনের আরও তিন হত্যার বিচার

আরাফাত মুন্না

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দিন সকালে খুনিদের ছোড়া কামানের গোলা গিয়ে পড়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডের বস্তিতে। গোলার আঘাতে নিহত হন ১৩ জন। প্রায় ১ যুগ আগে অভিযোগ গঠন করা হলেও শেষ হয়নি এ মামলার বিচার কাজ। সেই কালরাতে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণির বাড়িতেও হামলা চালায় বিপথগামী সেনারা। হত্যা করা হয় অন্তত আরও ১০ জনকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হলেও থমকে আছে এ তিন মামলার বিচার। ঢাকার আদালতে বিচারাধীন থাকা পৃথক এ তিন হত্যা মামলার বিচার কবে শেষ হবে, এ প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর বস্তিতে কামানের গোলা সংক্রান্ত মামলাটির সাক্ষী হাজির না হওয়ায় দীর্ঘদিন বিলম্ব হলেও মুজিববর্ষেই এ মামলা শেষ করার কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, সেরনিয়াবাত হত্যা মামলার বিচার আটকে আছে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশে। আর শেখ মণি হত্যার ঘটনায় ১৮ জনকে আসামি করে মামলা করা হলেও নথি খুঁজে না পাওয়ায় মামলার বিচার আর এগোয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এসব মামলার অধিকাংশ আসামিই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাজা পেয়েছে। অনেকের মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। এখন যারা বাকি আছে তাদেরও বিচার হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে বদ্ধপরিকর। কেউ যাতে বলতে না পারে বিচার পাইনি। আদালতে মামলা বিচারাধীন অর্থাৎ এসব হত্যাকান্ডের বিচারও একদিন হবে।

মোহাম্মদপুরে কামান হামলা মামলা : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের সময় সেনারা কামানের গোলা ছুড়লে তা গিয়ে পড়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডের ৮, ৯, ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (টিনশেড বস্তি) ওপর। লে. কর্নেল মুহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি) ছোড়া কামানের গোলার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। মুহূর্তেই ল ভ  হয়ে যায় ওই বস্তিটি। ওই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৩ জন মারা যান। আহত হন প্রায় ৪০ জন। ওই ঘটনায় ৮ নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ১৯৯৬ সালের ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় এ মামলাটি করেন। ২০০১ সালের এপ্রিলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়। এরপর ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আদালত। ১৭ আসামির মধ্যে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ ছাড়া মামলার বাকি ১২ আসামি পলাতক রয়েছেন। আদালতের নথিপত্রে বলা হয়, মামলার ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে এখনো পর্যন্ত বাদীসহ ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়েছে। সমন দিয়ে, এমনকি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেও সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। জানতে চাইলে ঢাকার চার নম্বর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হেলাল বলেন, মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ১৮ জনের সাক্ষ গ্রহণ সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, এর মধ্যে আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করা ম্যাজিস্ট্রেট মারা গেছেন বলে শুনেছি। তার মৃত্যু সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই আমরা সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করার আবেদন করব। আশা করছি, মুজিববর্ষেই এ মামলা নিষ্পত্তি হবে।

সেরনিয়াবাত হত্যা মামলা : পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি তৎকালীন পানি ও বন্যানিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে হামলা চালায় সেনারা। বাসার সব সদস্যকে ড্রয়িংরুমে জড়ো করে। একপর্যায়ে ব্রাশফায়ার করে আবদুর রব সেরনিয়াবাতসহ ৮ জনকে হত্যা করে ঘাতকরা। এ ঘটনায় ১৯৯৬ সালের ২১ অক্টোবর আবুল হাসানাতের স্ত্রী সাহান আরা বেগম বাদী হয়ে ঢাকার রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বর্তমানে হাই কোর্টের আদেশে মামলার বিচারকাজ স্থগিত আছে। তবে মূল মামলাটি বতর্মানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে ওই আদালতের প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার দুলাল বলেন, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে মামলাটি এখনো মুলতবি আছে। তাই বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।

 

শেখ মনি হত্যা মামলা : ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি ঘাতক দল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শেখ ফজলুল হক মনির ধানমন্ডির ১৩/১-এর বাসায় আক্রমণ চালায়। তারা খুন করে শেখ মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণিকে। ১৯৯৬ সালের ২০ নভেম্বর ধানমন্ডি থানায় ১৮ জনকে আসামি করে মামলা হলেও নথি না পাওয়ায় মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না বলেই জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর