শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোর নিহত

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে হত্যা মামলা তত্ত্বাবধায়ক বরখাস্ত

সাইফুল ইসলাম, যশোর

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দী তিন কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনায় ভিকটিম রাব্বির পিতা রোকা মিয়া বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করা হয়েছে। নিহত অপর দুই কিশোরের স্বজনদের সম্মতির ভিত্তিতে পুরো ঘটনায় রোকা মিয়া একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এদিকে এ ঘটনায় কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল  মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগে একই বিষয়ে তদন্ত করার জন্য সমাজসেবা অধিদফতরের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সকালে এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের ১০ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আনসার সদস্যকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে। বিকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করা হবে।

ওদিকে নিহত তিনজনের মরদেহ বিকাল পর্যন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতাল মগের্ই ছিল। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ নেওয়ার জন্য সেখানে ছিলেন নিহতদের স্বজনরা। বৃহস্পতিবার যশোর শহরতলির পুলেরহাটে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বেধড়ক পিটুনিতে সেখানে থাকা তিন কিশোর পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), রাসেল সুজন (১৮) ও নাঈম হোসেন (১৭) নিহত হয়। আহত হয় ১৪ জন। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কয়েক দফায় নিহতদের মরদেহ ও আহতদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।

চুল কাটা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত! : প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, ৩ আগস্ট কেন্দ্রের হেড গার্ড আনসার সদস্য নূর ইসলাম তার চুল কেটে দেওয়ার জন্য চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা কিশোর পাভেলকে বলেন। কিন্তু পাভেল আরও অনেকের চুল কেটে দেওয়ায় তার হাত ব্যথা করছে জানিয়ে আনসার সদস্য নূর ইসলামকে বলে, তার চুল সে পরে কেটে দেবে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নূর ইসলাম পাভেলকে গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে কেন্দ্রে থাকা কয়েকজন কিশোর নূর ইসলামকে মারধর করে। এ ঘটনায় নূর ইসলাম অফিসে অভিযোগ করেন, কিশোররা মাদকসেবন করে তাকে মারধর করেছে।

বৃহস্পতিবারের ঘটনায় আহত পাভেল যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে বলেছে, ওই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তাকেসহ আরও কয়েকজনকে অফিসে ডেকে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। কর্মকর্তাদের পুরো ঘটনাটি জানানোর পর কেন্দ্রের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা একসঙ্গে তাদের মারধর করেন।

যা বলল আহত কিশোররা : যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নোয়াখালীর কিশোর বন্দী জাবেদ হোসেন জানায়, কেন্দ্রের কর্মকর্তারাও লোহার পাইপ, বাটাম দিয়ে তাদের কুকুরের মতো পিটিয়েছে। জানালার গ্রিলের সঙ্গে হাত ও দুই পা বেঁধে এবং মুখের ভিতর কাপড় দিয়ে মারা হয়েছে তাদের। মারতে মারতে কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে ভবনের বাইরে গাছতলায় ফেলে রেখে আসে। জ্ঞান ফিরলে নিয়ে এসে আবার একই কায়দায় মারপিট করেছেন।

নিহত নাঈমের লাশের জন্য মার আহাজারি : নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া জানান, যশোরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিহত তিন কিশোরের মধ্যে নাঈম হোসেনের (১৭) মা সান্ত্বনা বেগম ছেলের লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের তালিবপুর পূর্বপাড়া গ্রামের সান্ত্বনা বেগম বৃহস্পতিবার রাতে টেলিভিশনে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিহতদের মধ্যে ছেলের নাম শুনে কান্নায় ভেঙে পরেন তিনি। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে কখন আসবে ছেলের লাশ তা নিয়েই বিলাপ করছেন তিনি।

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। নাঈম হোসেন দেউলী আলিয়া মাদ্রাসার ৫ম শ্রেণির ছাত্র। ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি হিসেবে যশোর শিশু উন্নয়নস কেন্দ্রে আটক ছিল। ৩০ জানুয়ারি উপজেলার তালিবপুর পূর্বপাড়া গ্রামের সাড়ে ৬ বছরের সাদিয়া খাতুনকে ধর্ষণ শেষে গলাকেটে হত্যা করে নাঈম।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর