রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে হত্যা

যশোরে নাঈম হত্যার বিচার চাইলেন মা পাঁচজন রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া ও যশোর

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নির্মম পিটুনিতে তিন কিশোর নিহতের ঘটনায় আটক পাঁচজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এদিকে নির্যাতনে নিহত বগুড়ার নাঈম হোসেনের (১৭) দাফন গতকাল সম্পন্ন হয়েছে। নাঈমের মা এ হত্যার বিচার চেয়েছেন।

হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতার পাঁচজনকে গতকাল বিকালে যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহদি হাসানের আদালতে উপস্থাপন করে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত সহকারী পরিচালক আবদুুল্লাহ আল মাসুদ, কারিগরি প্রশিক্ষক ওমর ফারুক ও সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমানের পাঁচ দিন করে এবং প্রবেশন অফিসার মাসুম বিল্লাহ ও ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর এ কে এম শাহানুর আলমকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিহত রাব্বির পিতা রোকা মিয়া শুক্রবার রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছিলেন। যেখানে ওই কেন্দ্রের অজ্ঞাত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করা হয়। নাঈমের দাফন : গতকাল সকাল ৮টায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের তালিবপুর পূর্বপাড়া গ্রামে বাড়ির পাশে নিজ জমিতে নাঈমের দাফন সম্পন্ন হয়। ছেলে নাঈমের লাশ দেখার পর মা সান্ত্বনা বেগম শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। শয্যাশায়ী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তবে এ ঘটনার জন্য দায়ীদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন তিনি। নাঈমের বড় ভাই শামীম প্রামাণিক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে টেলিভিশনে খবর দেখে পরদিন সকালে মেজ ভাই শাহাদৎ প্রামাণিককে সঙ্গে নিয়ে তিনি যশোর যান। সেখানে জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাত ৮টার দিকে তাদের কাছে নাঈমের লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। রাতেই তারা অ্যাম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে শিবগঞ্জে আসেন। তিনি বলেন, ‘লাশ ধোয়ানোর সময় শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন দেখা যায়। এ থেকে বোঝা যায়, নির্যাতন চালিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা এ হত্যার ন্যায্য বিচার দাবি করছি।’ নাঈমের মেজ ভাই ট্রাকচালক শাহাদৎ প্রামাণিক বলেন, ‘ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে নাঈম আব্বার কাছে ফোন দেয়। ফোনে নাঈম জানায়, “এখানে (শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে) বড় ধরনের ঝামেলা হয়েছে। বিনা অপরাধে স্যারেরা আমাদের মারধর করছেন। তুমি রবিবার ফোনটা খোলা রেখো।” এটাই ছিল আব্বার সঙ্গে নাঈমের শেষ কথা।’ শাহাদৎ বলেন, ‘যশোর যাওয়ার পর জানতে পারি শিশু কেন্দ্রে ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না। কারণে-অকারণে ছেলেদের নির্যাতন করা হতো। ঠিকমতো চুল কাটতে দেওয়া হতো না। নানা অনিয়ম বাসা বেঁধে ছিল সেখানে।’ স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার উল ইসলাম জানান, নাঈমের লাশ গ্রামে পৌঁছার পর দলে দলে মানুষ তাকে একনজর দেখতে ভিড় জমায়। শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে পুরো তালিবপুর গ্রাম। এর আগে এত মানুষকে একসঙ্গে দেখেনি তালিবপুর। নিহত নাঈম হোসেন তালিবপুর পূর্বপাড়া গ্রামের নান্নু প্রামাণিকের ছেলে এবং দেউলী আলিয়া মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। তিন ভাইয়ের মধ্যে নাঈম সবার ছোট ছিল। নাঈম ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি হিসেবে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর