রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

না-ফেরার দেশে বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

না-ফেরার দেশে বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর

করোনা আক্রান্ত হয়ে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন একুশে ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী, ভাষাসংগ্রামী মুর্তজা বশীর। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল ৯টা ১০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ফুসফুসজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগে করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দুই মেয়ে মুনিরা বশীর ও মুনিজা বশীর এবং ছেলে মেহরাজ বশীর যামিসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন বিমূর্তধারার এই চিত্রশিল্পী। তাঁর মৃত্যুতে দেশের শিল্পাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। বরেণ্য এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দসহ বিশিষ্টজনেরা তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল দুপুর ১টায় এভারকেয়ার হসপিটালের রহমতে আলম সমাজসেবা সংস্থার ব্যবস্থাপনায় লাশের গোসল সম্পন্ন হয়। এরপর লাশ নেওয়া হয় শিল্পীর মণিপুরী পাড়ার বাসভবনে। সেখানে হাউজিং সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় জানাজা শেষে বেলা ৩টায় বনানী কবরস্থানে স্ত্রী আমিনা বশীরের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

মেয়ে মুনিরা বশীর জানান, বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে শিল্পীকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হসপিটালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় হসপিটালটির আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার তাঁর করোনা পরীক্ষা হয়। এতে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। মুনিরা বশীর বলেন, ‘ফুসফুসের সমস্যার কারণে বাবার মাঝেমধ্যেই অক্সিজেন ড্রপ হয়ে যেত। সর্বশেষ গত নভেম্বরে এ হসপিটালে তাঁর চিকিৎসা করা হয়।’

মুর্তজা বশীর বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী। তিনি বহু ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র ছোট ছেলে। ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার রমনায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা ও ইতালির ফ্লোরেন্সে শিল্প শিক্ষার পাট চুকিয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে ‘বিমূর্ত বাস্তবতা’ চিত্রধারণার প্রবর্তক এ শিল্পীর ‘দেয়াল’, ‘শহীদ শিরোনাম’, ‘পাখা’ শীর্ষক বিখ্যাত কয়েকটি চিত্রমালা রয়েছে। অলঙ্কারপূর্ণ চিত্রকলায় স্বতন্ত্র ভাষা তৈরি করলেও ‘জ্যোতি’ ও ‘কালেমা তাইয়্যেবা’ শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ চিত্রমালাও তিনি এঁকেছেন। লিনোকাট মাধ্যমে ‘রক্তাক্ত ২১শে’ শীর্ষক তাঁর আঁকা ছবিটি ভাষা আন্দোলনবিষয়ক প্রথম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়। সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করেও তিনি রেখেছেন নিজস্বতার স্বাক্ষর। ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ‘আলট্রামেরিন’। টেরাকোটা, মুদ্রা ও শিলালিপি নিয়েও তিনি গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশের চিত্রকলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ১৯৮০ সালে তিনি একুশে পদকে ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর