সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকা মেডিকেলে ভিড় সাধারণ রোগীর

রফিকুল ইসলাম রনি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেলা সাড়ে ১০টায় অ্যাম্বুলেন্সে ইমারজেন্সির সামনে আসেন যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা রফিক (২৬)। তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আরও বেশ কয়েকজন রোগীকে ইমারজেন্সিতে ঢুকতে দেখা যায়। কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হতে এসেছেন বাছেদ মিয়া। বেশ কিছু সময় সিএনজিতে বসে ছিলেন তিনি। সিএনজিতেই কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানালেন, এর আগে রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হতে পারেননি। তারা করোনা সন্দেহে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়েছেন। তবে তিনি করোনায় আক্রান্ত নন বলে দাবি করেন। করোনার কারণে রাজধানীর নামিদামি হাসপাতালগুলোতে যখন রোগী ভর্তি নিচ্ছে না, তখন এমন চিত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অন্য কোথাও সুযোগ না পেয়ে মানুষ ছুটে আসে এখানে। প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নন-কভিড আউট ডোর ও ইমারজেন্সিতে আড়াই শতাধিক রোগীকে সেবা গ্রহণ করতে দেখা গেছে। কথা হয় হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক সাইফুল মাহমুদ তুষারের সঙ্গে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের কনসালট্যান্ট। রোগীর চাপ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সব সময়ই রোগীর চাপ বেশি। করোনা শুরুর পর থেকেও অন্য যে কোনো হাসপাতালের চেয়ে বেশি এখানে রোগীর সংখ্যা। কারণ অনেক রোগী আছেন, যারা করোনায় আক্রান্ত নন, কিন্তু বিভিন্ন উপসর্গ আছে। যেমন বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট, কিডনি সমস্যা, হার্টে সমস্যা আছে। তারা এখন অন্য হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। পজিটিভ না হলে করোনা হাসপাতালগুলো চিকিৎসা দিচ্ছে না। তারা ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আবার অর্থের কথা ভেবেও কেউ কেউ বাধ্য হয়ে এ হাসপাতালে ছুটে আসছেন। এটাও সত্য, চিকিৎসাসেবায় এখনো বাংলাদেশে সেরা অবস্থানে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ। ফলে প্রতিদিনই রোগীদের ভিড় বাড়ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।’ অন্যদিকে কভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই ইউনিটে। অন্য হাসপাতালগুলো যখন কভিড চিকিৎসা বন্ধ করতে যাচ্ছে, সেখানে প্রসারিত করা হচ্ছে ঢাকা মেডিকেলের কভিড চিকিৎসা।

ঢাকা মেডিকেলের দুটি ইউনিটে কভিড রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে (একটি শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট, আরেকটি ঢাকা মেডিকেল ইউনিট-২)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দুই ইউনিটে (শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২) নতুন ভর্তি হয়েছেন ৬৬ জন। গতকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন ৬১০ জন। এর মধ্যে অক্সিজেন ও ক্যানেলা সাপোর্টে আছেন ২৯৩ জন। আইসিইউতে ভর্তি আছেন ১৯ জন। ভেন্টিলেটরে আছেন ছয়জন। ডায়ালাইসিস হয়েছে ৯ জনের। কেবিনে আছেন ৩৬ জন। শিশু ভর্তি আছে ৬ জন। এর মধ্যে একজন কভিড পজিটিভ রোগী মারা গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম যখন চিকিৎসা শুরু করি, তখন যারা গরিব রোগী তারাই বেশি আসতেন। কিন্তু এখন অনেক বিত্তশালীও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।’

কভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বেডের সংখ্যা বাড়ানো হবে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের রোগীর ধারণক্ষমতা বাড়াচ্ছি। ধরুন একসঙ্গে অনেক রোগী চলে আসছে, তাহলে কোথায় নিয়ে যাব? কোথাও এত রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। আমরা একটি বেজমেন্টে জায়গা করছি। সেখানে সেন্ট্রাল এসির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একসঙ্গে অনেক রোগীকে সেবা দিতে সক্ষম হব। এটা আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমরা সেন্ট্রাল অক্সিজেন দিতে পারব। যে কোনো পরিস্থিতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মানুষের সেবা দিতে সর্বদা প্রস্তুত। অন্য হাসপাতাল রোগী ফেরত দিলেও আমরা কখনো রোগীকে ফেরত দেব না। শুধু কভিড রোগীই নয়, সাধারণ রোগীরও আস্থার ঠিকানা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর