সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাচ্ছে সরকার

সাখাওয়াত কাওসার

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনে সংশোধন এবং পুনর্বাসনের দিকে যাচ্ছে সরকার। র‌্যাব এবং পুলিশের মাধ্যমে এরই মধ্যে ৮০ জনকে সংশোধনের পর পুনর্বাসন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উদ্যোগেই ৫০ জন জঙ্গিকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজনকে আর্থিকভাবে এবং ৪২ জনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পেতে, সামাজিকীকরণে সহায়তা করেছে পুলিশ। অন্যদিকে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত জেএমবির (জামা’য়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) আমির সালাহউদ্দিন সালেহীন ভারতে অবস্থান করেই ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে কোনোভাবেই মাথাচাড়া দিতে পারছে না পুরনো জেএমবির সদস্যরা। অপরাধ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, এটা খুব ভালো উদ্যোগ। আরও বড় আকারে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এটা করতে হবে। ব্রেইন ওয়াশ করা এসব জঙ্গিদের কেবল গ্রেফতার কিংবা বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেললেই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আসবে না। জঙ্গিদের গ্রেফতারের পর তাদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সঠিক পথে ফেরাতে হবে। তাদের আর্থিক এবং জীবনের নিরাপত্তার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করলে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ৫ মার্চ পর্যন্ত চার দফায় পর্যায়ক্রমে বগুড়া, রংপুর, কুষ্টিয়া এবং সিরাজগঞ্জে জঙ্গিবাদে জড়িত সাতজনকে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয় র‌্যাব। পরে তাদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সতর্কতার সঙ্গে র‌্যাব পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে জঙ্গি দমনের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের গঠিত কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট বড় আকারে উদ্যোগ নেয়। এ পর্যন্ত ৫০ জন ভয়ঙ্কর জঙ্গিকে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছে। এর মধ্যে আটজনকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে সিটিটিসি। ৪২ জনকে চাকরি পেতে, পুনরায় সমাজের সঙ্গে মিশতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। তাদের নজরদারির মধ্যে রেখেছে বিশেষায়িত এই ইউনিট। সিটিটিসির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিদের ডি-রেডিকালাইজেশন এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ রাষ্ট্র নিয়েছে। যারা সাজা ভোগ শেষে বের হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই নজরদারিতে আছেন। তাদের অধিকাংশই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। সাজাভোগের পর কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলে তাকে সহযোগিতা করা হবে। এমনকি তাদের পুনর্বাসনের জন্য যদি আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ৫০ জনকে সংশোধনের পর পুনর্বাসন করেছি। জেএমবির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে জেএমবির সাংগঠনিক কাঠামো অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। যদিও ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানের ঘটনাটি নানাভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ওই সময়ের সক্ষমতার তুলনায় এটি তেমন কিছুই না। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, জঙ্গিবাদ দমনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই র‌্যাব গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে র‌্যাবই জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করিয়েছে। তাদের এখনো নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। কাউন্টার নেরেটিভ মতবাদ তৈরি করে ভুল পথে যাওয়া জঙ্গিদের সংশোধনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর