শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

মধ্যপ্রাচ্যে ভালো নেই শ্রমিকরা

বেকার লাখ লাখ শ্রমিক, মানবেতর জীবনযাপন

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ভালো নেই বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকরা। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ধাক্কায় বেকার হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ প্রবাসী। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন অবৈধভাবে বসবাস করা প্রবাসী শ্রমিকরা। তবে সংশ্লিষ্টদের আশা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হলে ফের কর্মস্থলে যোগদানের সুযোগ ফিরে পাবেন তারা।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন খান বলেন, ‘আমিরাতে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে বেশির ভাগ বাংলাদেশি শ্রমিক বেকার রয়েছেন। বিশেষ করে নির্মাণসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে বেকার। তবে আমিরাতের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হলে ফের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলোও শুরু হবে। তখন বেকার থাকা শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবেন।’

ওমানের চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, ‘লকডাউন শুরু হলে ওমানে কর্মরত বেশির ভাগ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েন। কিন্তু সুখবর হচ্ছে, এখন ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে নেওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী দু-এক মাসের মধ্যে ওমানের শ্রমবাজার ঘুরে দাঁড়াবে।’

সৌদি আরবের বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা বশির আহমেদ বলেন, ‘সৌদি আরবে হোটেল ও নির্মাণ শ্রমিকের উল্লেখযোগ্য অংশই বাংলাদেশি। লকডাউনের কারণে তারা বেশ কয়েক মাস ধরে বেকার। এ ছাড়া করোনার অর্থনৈতিক ধাক্কা কাটাতে অনেক প্রতিষ্ঠিত ও নামি প্রতিষ্ঠানও কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে চরম বেকায়দায় পড়েছেন সৌদি প্রবাসীরা।’

জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে কর্মরত ৫০ লাখের বেশি শ্রমিক। সবচেয়ে বেশি শ্রমিক অবস্থান করছেন সৌদি আবর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত এবং কাতারে। সৌদি আবর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কাজ করেন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও নির্মাণ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এসব দেশে উন্নয়ন কাজ এবং পর্যটন শিল্প বন্ধ রয়েছে। ফলে করোনা প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতির শুরু থেকেই বেকার হয়ে পড়েন লাখ লাখ শ্রমিক। এদের পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি আকারের বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশিরাও খুব একটা ভালো নেই। তারাও দীর্ঘদিন বসে থাকার কারণে পুঁজি ভেঙে দৈনন্দিন খরচ চালাচ্ছেন। ফলে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। সৌদি আরবে বসবাসরত শ্রমিকের উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই বর্তমানে অবৈধ। কাজ না থাকায় এবং ঘর থেকে বের হতে না পারায় তারা সবচেয়ে বেশি  সংকটে। সৌদি আরবের মদিনার বাংলাদেশি গণমাধ্যমকর্মী মোহাম্মদ সাহেদ বলেন, ‘সৌদি আরবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এখনো পুরোদমে চালু হয়নি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া অন্যসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ। হোটেল, উন্নয়ন ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের বেশির ভাগ বলতে গেলে বর্তমানে বেকার। অনেকে কয়েক মাস বসে খাওয়ার কারণে জমা টাকাও শেষ করে ফেলেছেন। তাই তাদের মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে।’

ওমান প্রবাসী একাধিক বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা জানান, ওমানের প্রবাসীর ৯০ শতাংশের বেশি শ্রমিক। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই তারা বেকার। দীর্ঘদিন বেকার থাকার ফলে অনেকের জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে। এখন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর