বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

টেস্ট কমলেও রোগী বাড়ছে হাসপাতালে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

করোনাভাইরাস শনাক্তে আরটিপিসিআর টেস্ট কমলেও হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রান্তের অধিকাংশ বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে আগস্টের শুরুর দিক থেকে হাসপাতালে বাড়তে শুরু করেছে কভিড ও ননকভিড রোগী। রোগীর শরীরে ভাইরাস আছে কি না জানতে অ্যান্টিজেন্ট টেস্টের অনুমোদন দিলেও অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমোদনের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর হাসপাতালে যেমন অব্যবস্থাপনা ছিল, তেমন মানুষের মধ্যেও ভীতি কাজ করছিল। কভিডের পাশাপাশি ননকভিড রোগীরা অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এখন চিকিৎসার প্রয়োজনে        ঝুঁকি থাকলেও রোগীরা হাসপাতালে আসছেন। টেস্টের সংখ্যা কমছে এটা ঠিক। এ ক্ষেত্রে জনগণের উদাসীনতা কাজ করছে। অ্যান্টিজেন্ট টেস্টের অনুমোদনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে টেস্ট করাতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগে। সেখানে অ্যান্টিজেন্ট টেস্টে খুব অল্প সময়, কম খরচে রোগী শনাক্ত করা যাবে। অ্যান্টিজেন্ট টেস্ট করলে কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার তিন-চার দিনের মধ্যেই তা শনাক্ত হয়। কিন্তু অ্যান্টিবডি টেস্ট করলে আক্রান্ত হওয়ার ১৩-১৪ দিন পর তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে। দ্রুত রোগী শনাক্ত করে আইসোলেট করতে অ্যান্টিজেন্ট টেস্ট ভালো সিদ্ধান্ত।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ১ আগস্ট সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছিল ৩ হাজার ৮৬১ জন। শয্যা ফাঁকা ছিল ১১ হাজার ৩৭৯টি। রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছিল ২ হাজার ৬৪ জন আর শয্যা ফাঁকা ছিল ৪ হাজার ৯৬৮টি। ১১ আগস্ট সারা দেশে করোনা রোগী ভর্তি ছিল ৪ হাজার ১২১ জন এবং শয্যা ফাঁকা ছিল ১১ হাজার ১৪৭টি, ১২ আগস্ট রোগী ভর্তি ছিল ৪ হাজার ২৫৭ জন ও শয্যা ফাঁকা ছিল ১১ হাজার ১৩টি। ১৩ আগস্ট রোগী ভর্তি ছিল ৪ হাজার ৩৪৮ জন এবং শয্যা ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৯২২টি। তিন দিনই বেড়েছে রোগী ভর্তি। ১৯ আগস্ট সারা দেশে করোনা রোগী ভর্তি ছিল ৪ হাজার ২৮৮ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৯৬৭টি। ২০ আগস্ট সারা দেশে করোনা রোগী ভর্তি ছিল ৪ হাজার ৩৩৮ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৯১৭টি। ২৩ আগস্ট সারা দেশে করোনা রোগী ভর্তি ছিল ৪ হাজার ২৪৮ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ১১ হাজার ৭টি। ২৪ আগস্ট সারা দেশে করোনা রোগী ভর্তি ছিল ৪ হাজার ১৩৭ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ১১ হাজার ১১৮টি। গতকাল সারা দেশে করোনা রোগী ভর্তি ছিল ৪ হাজার ৭৩ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৭৭০টি।

কভিড এবং ননকভিড চিকিৎসা দেওয়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে আশঙ্কাজনক হারে রোগী কমে গেলেও সে চিত্র বদলে গেছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখনো এ হাসপাতালে কভিড রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। তবে সাধারণ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। এত দিন ননকভিড ইউনিটে ইনডোরে পাঁচ শর মতো রোগী হলেও এখন প্রায় প্রতিদিনই হাজারের মতো রোগী ভর্তি হচ্ছে। বহির্বিভাগে এত দিন চার-পাঁচ শ রোগী থাকলেও এখন হয়েছে দেড় হাজার।’ রোগী বাড়লেও বাড়ছে না করোনা শনাক্তে আরটিপিসিআর টেস্ট। ৪ আগস্ট করোনা টেস্ট হয়েছে ৭ হাজার ৭১২ জনের, আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯১৮ জন। ৩ আগস্ট করোনা টেস্ট হয়েছে ৪ হাজার ২৪৯টি, করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৫৬ জন। ২ আগস্ট করোনা টেস্ট হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৪টি, আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮৬ জন। ১ আগস্ট করোনা টেস্ট হয়েছে ৮ হাজার ৮০২টি, আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৯৯ জন। ২৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৯ হাজার ৬১৫টি। দুই মাস পর সেদিন নমুনা সংগ্রহ ৯ হাজারের ঘরে নেমে আসে। ২২ আগস্ট নমুনা টেস্ট করা হয় ১১ হাজার ৩৫৬টি এবং ২৩ আগস্ট ১০ হাজার ৮০১টি। ২৪ আগস্ট ১৩ হাজার ৩৮২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৫ জন। গতকাল ১৪ হাজার ১৫৩টি নমুনা টেস্ট করে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৪৫ জন। দেশে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা হয় ২৬ জুন, ১৮ হাজার ৪৯৮টি। এর পর থেকে দিনে দিনে কমেছে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সবকিছু স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। রোগীরা চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে যেতে শুরু করেছেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে টেস্ট বাড়াতে হবে। রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশন বাড়ালে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।’ করোনা শনাক্ত বাড়াতে সীমিত পরিসরে অ্যান্টিজেন্ট টেস্টের অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। তবে করোনার অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমোদন এ মুহূর্তে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে র‌্যাপিড টেস্ট অনুমোদন দেওয়া হবে না।’ অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, করোনা থেকে যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না। আর অ্যান্টিজেন্ট পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায়, বর্তমানে রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস রয়েছে কি না। অ্যান্টিজেন্ট টেস্টে আক্রান্ত হওয়ার তিন-চার দিনের মধ্যে রোগী শনাক্ত করা যায়।

সর্বশেষ খবর