বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

শিল্প-বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে ১৪ সুপারিশ

নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পে অর্থায়নের সুযোগ বাড়ানো - বেসরকারি অপারেটরের মাধ্যমে বন্দরের সেবা দেওয়া - এলসি পরিশোধ প্রক্রিয়া সহজ করা

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব থেকে বেসরকারি শিল্প খাতকে উজ্জীবিত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৪টি সুপারিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা, যেখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ও নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পে অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজ করা ছাড়াও আমদানি এবং রপ্তানি বাণিজ্যে গতি আনতে দেশের বন্দরগুলোর সেবা কার্যক্রম বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের কর মওকুফ, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবার বিপরীতে মাশুল অব্যাহতি এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে শিল্প খাতের মূলধনী ঋণ গ্রহণের সুপারিশ করেছে বিডা।  গত ৮ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে কভিড-১৯ মোকাবিলায় বিডা এসব সুপারিশ পাঠায়। এতে বলা হয়েছে, মহামারীর কারণে বেসরকারি খাতের ব্যবসা পরিচালনায় যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে বহুমুখী ও সময়ানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগ সহায়তাকারী সংস্থাগুলো কর্তৃক কিছু বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়া/নিয়ম সাময়িকভাবে অবসান বা শিথিল করার লক্ষ্যে নীতি প্রণয়ন/সংস্কার সহায়তা কার্যক্রম জরুরি। 

বিডার কর্মকর্তারা জানান, করোনা মহামারীর কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় ভার্চুয়াল আলোচনার মাধ্যমে যেসব প্রস্তাব তারা পেয়েছেন, সেগুলোই সুপারিশ আকারে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে পুনরায় চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তারা।

সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে চাঙ্গা করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এমন তথ্য জানিয়ে বিডার কর্মকর্তারা বলেন, করোনা মহামারীর কারণে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, সেটি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে উজ্জীবিত করতে হবে। তারা মনে করছেন, নতুন বিনিয়োগ হলে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, মানুষের আয় বাড়বে। আর এটি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ও নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্ভব। এজন্য তারা এসব খাতে অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজ করতে বলেছেন। এ ছাড়া তারা শিল্পের উৎপাদন বাড়াতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমেও গুরুত্ব দিয়েছেন। এজন্য তারা বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মন্ডল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তাদের সুপারিশে তারা ‘বন্দর’ বলতে দেশের স্থল ও সমুদ্র সব বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের জানিয়েছেন, বন্দরের কার্যক্রমে গতি আনতে পারলে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতি আসবে। এ কারণে দক্ষতা বাড়াতে বন্দরে বেসরকারি অপারেটর কর্র্র্তৃক সেবা প্রদানের সুযোগ তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান বিডার নির্বাহী সদস্য।

বিডা যে ১৪টি সুপারিশ করেছে সেগুলো হচ্ছে : (১) শিল্প খাতে করপোরেট কর ও অন্যান্য করের অর্থ পরিশোধ/ফাইলিংয়ের বাধ্যবাধকতা স্থগিত রাখা এবং বিলম্বের জন্য শাস্তি মওকুফ নিশ্চিত করা;

(২) এসএমই শিল্পের প্রযোজ্য কর ও ভ্যাট মওকুফ এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার রিটার্ন দাখিল ও বিধিবদ্ধ কর/ফি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি প্রদান;

(৩) কোম্পানিগুলোর স্বনির্ধারণী রিটার্ন জমা দেওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণী ২০ শতাংশ ইনক্রিমেন্টালি লাভ ঘোষণার নীতি পরিবর্তন করা;

(৪) অধিকতর অনুকূল এবং সহসা পরিবর্তন নয় এরূপ কর এবং প্রণোদনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ পরিবর্তন

(৫) এলসি পরিশোধ সম্পর্কিত প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা;

(৬) অফশোর অর্থায়ন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা;

(৭) দেশি-বিদেশি কোম্পানির জন্য বৈষম্যহীন প্রণোদনা নিশ্চিত করা;

(৮) পরিশোধিত মূলধন প্রত্যাবাসনের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করা;

(৯) অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত, ক্ষুদ্র শিল্প ও নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পের জন্য অর্থায়নের সুযোগ বাড়ানো ও বিকল্প ক্রেডিট স্কোরিং কৌশল বাস্তবায়ন করা;

(১০) দেশি এবং বিদেশি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বিদেশি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে চলতি মূলধন ঋণ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া;

(১১) জুনের পরও ঋণ পরিশোধ স্থগিত রাখা;

(১২) কভিড-১৯ এর প্রভাব বিদ্যমান থাকায় বন্দরের ড্যামারেজ/স্টোরেজ ফি মওকুফের সময় বৃদ্ধি;

(১৩) শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পে লিডটাইম হ্রাস করার জন্য বন্ডে ওয়্যারহাউস সুবিধা সম্প্রসারণ করা এবং

(১৪) দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বন্দরে বেসরকারি অপারেটর কর্তৃক সেবা প্রদানের সুযোগ তৈরি করা।

সর্বশেষ খবর