মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দেশে করোনা সংক্রমণ দীর্ঘ হচ্ছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দেশে কভিড-১৯ রোগী শনাক্তের ছয় মাস পরে সংক্রমণ কমেছে ২ শতাংশ। লকডাউন, গণপরিবহন বন্ধ থেকে আসা এ ফল পেতেই সবকিছু খুলে গেছে আগের মতো। নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার চিত্র। গত ৮ মার্চ রোগী শনাক্ত হলেও এখনো সংক্রমণ ১৮-২০ শতাংশে ওঠানামা করছে। এ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেশে সংক্রমণ দীর্ঘ হচ্ছে বলেছেন চিকিৎসকরা।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো কভিড-১৯-এর প্রথম তরঙ্গ অতিক্রম করছে। সংক্রমণ হার ৫ শতাংশে নামলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলা যাবে। আমাদের দেশে সংক্রমণ হার ২৫ মে থেকে ২০-২৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। ২০ আগস্ট থেকে সংক্রমণ হার কিছুটা কমেছে, তবে এটি এখনো ১৮ শতাংশের কাছাকাছি। সংক্রমণ হার ২ শতাংশ কমাতে তিন মাস লেগেছে। তখন লকডাউন ছিল, গণপরিবহন বন্ধ ছিল, মানুষ কিছুটা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানত। এখন সবকিছু খোলা থাকায় মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। তাই সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগবে। মানুষ যদি মাস্ক না পরে, সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি না মানে তবে এ সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হবে দেশে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মোট কভিড-১৯ রোগীর প্রায় ৪৫ শতাংশ রাজধানীতে। টেস্ট কম না হওয়ায় সে রোগীদের আলাদা করা হচ্ছে না। তারা অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াচ্ছে। ভ্যাকসিনের ব্যাপারে সবাই আগ্রহী কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আগ্রহ কম। এ বছর ভ্যাকসিন আসবে না। তাই যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা না হয় এবং সঠিক নির্দেশিকা অনুসারে কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন নিশ্চিত না করা হয়, তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকবে।’ আজ থেকে আগের মতো চালু হচ্ছে গণপরিবহন। গণপরিবহন খোলার পর ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে সিট ফাঁকা রেখে দূরত্ব বজায় রেখে চলার বিধান করা হয়েছিল। তা মানতে দেখা যায়নি পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের। দূরত্বে বসার জায়গায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিয়ে রাজধানীতে চলছে গণপরিবহন। এখন এসব নির্দেশনা উঠে যাওয়ায় গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়ে মহামারী করোনাভাইরাস। চীনের গন্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর সব দেশে হানা দিয়েছে এ সংক্রামক ব্যধি। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়। এরপর বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। সংক্রমণের ছয় মাসে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৯৯৬-এ। প্রথমে রাজধানীতে আক্রান্ত বাড়তে থাকলেও সারা দেশে তাদের বাধাহীন চলাচলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে রোগ। ঈদুল ফিতরে ঢাকা থেকে গ্রামমুখী মানুষের ঢলের সঙ্গে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এরপর ঢাকায় রোগী কমে বাড়তে থাকে জেলা শহরগুলোয়। ঈদুল আজহার সময় আবার গ্রামমুখী মানুষের ঢলে গ্রাম থেকে সংক্রমিত হয়ে অনেকেই ফেরে ঢাকায়। আবার ঢাকায় রোগী বাড়তে শুরু করে। আগে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব মানা হলেও এখন আর মানছে না কেউ। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘ভ্যাকসিন পেলে আমরা করোনা প্রতিরোধ করতে পারব। কিন্তু যত দিন ভ্যাকসিন না মিলছে তত দিন স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। ভ্যাকসিনের আশায় স্বাস্থ্যবিধি থেকে সরে আসা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সংক্রমণ রুখতে হবে। নয় তো করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর