বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

যে কোনো দুঃসময়ে প্রণব মুখার্জি পাশে ছিলেন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। বাংলাদেশের যে কোনো দুঃসময়ে পাশে ছিলেন তিনি।

গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমন্ডলীর সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর আমরা যখন দিল্লিতে ছিলাম, তিনি ও তাঁর পরিবার সব সময় আমাদের দেখাশোনা করেছেন। দেশে ফেরার পরও প্রণব মুখার্জি সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে পদ্মা সেতু বিষয়ে যখন দুর্নীতির কথা উঠল আমার বিরুদ্ধে এবং ওয়ান/ইলেভেনের সময় তিনি আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির কথা ওঠে তখন প্রণব মুখার্জি আমাদের সহযোগিতা করেছেন। ওয়ান/ইলেভেনে জেলখানায় যখন ছিলাম তখনো তিনি আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। যে কোনো বিপদে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধু। যে কোনো সংকটে তিনি সাহস জুগিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে ভারত হারাল একজন বিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নেতাকে আর বাংলাদেশ হারাল একজন আপনজনকে। তিনি উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার পূরণে মনোযোগী হতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বারবার আমাদের ভোট দিয়েছে দেশকে এগিয়ে নিতে, সরকারের নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য। আজ আমাদের রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ ভাগ টার্গেট করেছিলাম। এপ্রিল পর্যন্ত আমরা ৭ দশমিক ৮ অর্জন করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে কমে গেছে। এর পরও অর্থনৈতিকভাবে আমরা একটা ভালো অবস্থানে আছি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকের বিষয়ভিত্তিক দায়িত্ব পালন করা দরকার। নির্বাচনী ইশতেহারে যে ঘোষণাগুলো দিয়েছি তা বাস্তবায়নে যে কৌশল নেওয়া হয়েছে, তা যথাযথ কিনা, তা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, তা আলোচনা করা উচিত। যেহেতু আমরা সরকারে আছি, তাই কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি। পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমরা নতুন করে গ্রহণ করেছি। যেটা প্রথমবার নিয়েছিলাম ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদি। এবার গ্রহণ করেছি ২০২১ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত। আমরা বাংলাদেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, সে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা দলের সম্পাদকম-লীর সদস্যদের দেখা উচিত। কার কী ইস্যু আছে তা বুঝে নিয়ে কাজ করা উচিত। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে থমকে যাওয়া সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এখন সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। করোনার কারণে অনেক জায়গায় সম্মেলন হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এখন সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা প্রণোদনা দিয়েছি। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। সেখানে আমরা বিনিয়োগ করতে চাই। সেখানে আমরা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছি। কাজেই আমরা অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। সেটা যাতে যথাযথভাবে কার্যকর হয় এবং সারা দেশে যে উন্নয়নের কার্যক্রম নিয়েছি, সেটা যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় তা আমাদের দেখতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছেন বাংলাদেশকে নিয়ে সেটা পূরণ করতে চাই। ভূমিহীন মানুষকে ভূমি ও ঘর আমরা করে দেব। কোনো এলাকায় এমন কেউ থাকলে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। যাদের ভিটা আছে ঘর করার টাকা নেই, তাদেরও আমরা সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রকে (টিএসসি) নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে। মূল পরিকল্পনা ঠিক রেখে আধুনিকায়ন করা হবে টিএসসিকে। একই সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালকে ৫ হাজার রোগী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কারণ সারা দেশ থেকে রোগীরা এখানে সেবা নিতে আসে। এটা আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাই বেশি রোগীর যেন ধারণক্ষমতা থাকে আমরা সে ব্যবস্থা করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো হলগুলো সংস্কার করা হবে। একই সঙ্গে সংস্কার করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরগুলো। পাবলিক লাইব্রেরিকে ডিজিটাল করে উন্নত করা হবে, যুক্ত হবে ডিজিটাল ব্যবস্থা। নতুন প্রজন্মের জন্য এগুলো করে যেতে চান বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পাঁচ শূন্য আসনে জরিপে আওয়ামী লীগ এগিয়ে : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ড সীমিত পরিসরে চালু করতে হবে। সামনে পাঁচটি উপনির্বাচন আছে। জরিপে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ এগিয়ে রয়েছে। দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমাদের নেতা-কর্মীরা যেভাবে জনগণের পাশে থেকে কাজ করেছেন, উপনির্বাচনেও আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীদের সেভাবে কাজ করতে হবে।

নিজের জন্মদিন উদ্যাপনের প্রস্তাবে ‘না’ : আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন। করোনাকালে দলের সম্পাদকমন্ডলীর সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেওয়ার সময় সীমিত পরিসরে সভানেত্রীর জন্মদিন উদ্যাপনের প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু সে প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার জন্মদিন পালনের প্রস্তাব আমি গ্রহণ করছি না। সভায় দলীয় সভানেত্রীকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আমাদের সভানেত্রীর একটা গাইডলাইন চাই। আমরা নিজেরা কিছু বিষয় আলোচনা করেছি। এর মধ্যে রয়েছেÑ আমাদের যেসব জেলা, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে তাদের আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে আপনার অফিসে (সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়, ধানমন্ডি) পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। আরেকটি হলো, এই সময়ের মধ্যে প্রত্যেক সম্পাদককে চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট উপকমিটি গঠনের রিকমেন্ডেশন তৈরি করেছি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক আপনি।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দ্রুত নির্মাণের নির্দেশ : গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে অন্য এক অনুষ্ঠানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ দেশটাকে আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা চলতে চাই। গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিপিএটিসির প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের ২০ তলাবিশিষ্ট ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন’-এর নকশা এবং ‘ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দফতর স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত প্ল্যানের ভূমি ব্যাবহার’ পরিকল্পনার উপস্থাপনা দেখতে গিয়ে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, উন্নত, শিক্ষিত, আধুনিক বিজ্ঞান জ্ঞানসম্পন্ন একটা জাতি হিসেবে বাঙালি জাতিকে আমরা গড়ে তুলব এবং বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা করবÑ এটাই আমাদের লক্ষ্য। সভায় পাবলিক লাইব্রেরি নতুন করে তৈরি করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পাবলিক লাইব্রেরিটাও অনেক পুরনো। অডিটোরিয়াম থেকে শুরু করে সবকিছুই জরাজীর্ণ অবস্থা... খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। ন্যাশনাল মিউজিয়াম ঠিকই থাকবে যেভাবে আছে ওটা থাকুক। কিন্তু পুকুরটাকে সুন্দর করে রাখা। পুকুরটার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমাদের যে পাবলিক লাইব্রেরি তার একটা ল্যান্ডস্কেপ করে সেখানেও খুব সুন্দরভাবে একটা মডার্ন পাবলিক লাইব্রেরি, অডিটোরিয়াম এবং আমাদের সাইবার ক্যাফে সবকিছু মিলিয়ে ওটাকে আরও সুন্দরভাবে, নতুনভাবে তৈরি করা।

 

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে জরাজীর্ণ স্থাপনাগুলোর নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এ কাজগুলো যদি খুব দ্রুত শুরু করি তাহলে ভালো হবে। এখন তো করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের অনেক কাজ স্থবির। কিন্তু আমরা এ কাজগুলো কিন্তু শুরু করতে পারি এবং শেষ করতেও পারি খুব তাড়াতাড়ি। তিনি বলেন, অনেক প্ল্যান করাই আছে। মেডিকেল কলেজ করা আছে। কিন্তু টিএসসিটা করা হয়নি। টিএসসি যেহেতু ঢাকা ইউনিভার্সিটি, আমাদের ইউনিভার্সিটি, আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ওই ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। আমি নিজে ওখানে ছাত্রী ছিলাম। কাজেই ইউনিভার্সিটির প্রতি আমাদের সব সময় একটা আলাদা অনুভূতি রয়েছে। এ জায়গাটা আমি চাচ্ছি একটু সুন্দর করে করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ স্থাপনার কথা তুলে ধরে প্রশাসনের অপেক্ষায় না থেকে মেরামতের কাজ শুরু করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, পুরনো যে হলগুলো রয়ে গেছে, এ হলগুলো একটু মেরামত করা, পুকুরগুলো সংস্কার করা, ওই জায়গাগুলো একটু সুন্দর করে রাখা। এখন একটা সুবিধা যেহেতু বন্ধ। এ সময় মেরামতের কাজগুলো করে ফেলা উচিত। কারণ কিছু কিছু হলের অবস্থা এত খারাপ আর এত পুরনো যে কোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যদি আমরা এ কাজগুলো করে ফেলি, ইউনিভার্সিটি কবে উদ্যোগ নেবে সে আশায় বসে না থেকে আমি মনে করি, এটা আমি নিজেই করতে চাই।

সর্বশেষ খবর