বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সাহেদরা ঢুকে পড়লে দায় সংশ্লিষ্ট সম্পাদকদের

আওয়ামী লীগের উপকমিটি সদস্য

রফিকুল ইসলাম রনি

বহুমুখী প্রতারক সাহেদরা যেন আর আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য হতে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদককে সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে দায়দায়িত্ব বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। গতকাল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সম্পাদকম-লীর বৈঠকে তাদের সতর্ক করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলের যুগ্ম সম্পাদকরাও বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে বলেন, এর দায়ভার দল বহন করবে না, সংশ্লিষ্ট  সম্পাদকদেরই বহন করতে হবে। একই সঙ্গে  উপকমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন   ‘উপকমিটি সদস্য’ পরিচয় দিতে  না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য বহুমুখী প্রতারক সাহেদকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদের সঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মৃদু বাদানুবাদ হয়। একই সঙ্গে উপকমিটির সদস্যসংখ্যা ৩৫ জন করে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সম্পাদকম-লীর সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানাসহ বেশ কয়েকজন বক্তৃতা করেন। বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যুক্ত হয়ে দিকনিদের্শনা দেন। এ ছাড়া যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সায়েম খান, এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছারসহ সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতার নানা বিষয় উঠে আসে। জেলা ও মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকা, কেন্দ্রীয় উপকমিটিগুলোতে বহুমুখী প্রতারক রিজেন্টের সাহেদদের মতো বিতর্কিত লোকদের ঢুকে পড়া, সহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় সাহেদরা কীভাবে দলের আন্তর্জাতিক কমিটিতে স্থান পান জানতে চান দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ প্রত্যুত্তরে একটি তালিকা দেখিয়ে বলেন, ‘সাহেদ করিম আমার কমিটিতে ছিল না।’ এ সময় দুজন সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বলেন, ‘সাহেদ করিমকে তো বিভিন্ন প্রোগ্রামে দেখা গেছে এবং বক্তৃতা করেছেন।’ জবাবে শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘চেয়ারম্যান যদি কাউকে নিয়ে যান আমার কী করার আছে?’ এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, উপকমিটিগুলো যতœ নিয়ে করতে হবে। সাংগঠনিক কাজ হয় সম্মিলিতভাবে। এখানে এককভাবে কারও ওপর কোনো কাজের দায় চাপানোর বিষয় নেই। সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কোনো উপকমিটি গঠনের আগেই যাচাই-বাছাই করতে হবে। ইচ্ছামতো কমিটি গঠন করা যাবে না। কারও ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে রেহাই পাওয়ার বিষয় নেই। এতে করে সংগঠনের ভাবমূর্তি আরও বেশি নষ্ট হয়। সবাই মিলে হিসাব-নিকাষ করে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্য দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।

দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, উপকমিটিগুলো অনুমোদনের আগে যেন কেউ ওই কমিটির পরিচয় ব্যবহার না করে। আর অনুমোদনের আগে যেন কমিটির কোনো আনুষ্ঠানিক সভা না করা হয়।

দলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ‘আমি মুুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কাজ করতে চাই। গত কমিটিতেও একই পদে ছিলাম। কিন্তু কাজ করতে পারিনি। কেন পারিনি তাও কেউ জিজ্ঞেস করেনি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। কিন্তু সুযোগ দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘‘গত মেয়াদে একজনকে আমার উপকমিটির মিটিংয়ে জিজ্ঞেস করলামÑ ‘আপনি কে?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি উপকমিটির সদস্য।’ সে উপকমিটির সদস্য, অথচ আমি সদস্যসচিব হিসেবে জানি না! এখনো কাজ করতে চাই। আমার কমিটিতে যদি সাহেদ, পাপিয়া, সাবরিনাদের পাওয়া যায়, তাহলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আমি কখনো আপনাদের মুখ দেখাব না। কিন্তু স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।’’ দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উদ্্যাপন করব। মেয়েরা ভার্চুয়াল সভা করবে।’

বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপকমিটিগুলোতে ঢালাওভাবে বিপুলসংখ্যক সদস্য না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, সর্বোচ্চ ৩৫ জন সদস্য রাখতে হবে প্রতিটি উপকমিটিতে। বৈঠকে অবশ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী তার উপকমিটিতে দুটি মন্ত্রণালয় থাকায় দ্বিগুণসংখ্যক সদস্য রাখার অনুমতি দিতে অনুরোধ জানান। উপকমিটিতে সাহেদের মতো বিতর্কিত লোক যেন ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সম্পাদকদের ব্যাপক যাচাই-বাছাই করে কমিটি গঠন করতে হবে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে কমিটির খসড়া তালিকা। সেগুলো নেত্রীর হাতে তুলে দেব। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু সাহেদদের মতো প্রতারক ঢুকে পড়লে দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সম্পাদককে বহন করতে হবে।’ সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে জানানো হয়, সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগ ছাড়া অন্য সংগঠনগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আওয়ামী লীগের কাছে জমা দিয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিও জমা দিতে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের দফতরে। এ ছাড়া ২৮ সেপ্টেম্বর দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর