বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রেমিট্যান্সের মতো প্রবৃদ্ধি হবে রপ্তানিতেও

নিজস্ব প্রতিবেদক

রেমিট্যান্সের মতো প্রবৃদ্ধি হবে রপ্তানিতেও

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও চলতি বছরের জুলাই ও আগস্টে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। রেমিট্যান্সের এ প্রবৃদ্ধিকে অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ সময় তিনি বলেন, দুই নগদ প্রণোদনা (ছোট্ট একটু প্রণোদনা) এবং  বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোতে ঝামেলা কমানো- এই দুটি উদ্যোগের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে রপ্তানি খাতেও এমন অবিশ্বাস্য সাফল্য আসবে এবং সেটি আগামী জুলাই-আগস্টেই সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ। গত বছর ছিল রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে সবচেয়ে হায়েস্ট আর্নিং বছর। গত বছর ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের তুলনায় ৫০ ভাগ বৃদ্ধি এটা অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। ছয় মাসে যেটা পেতাম দুই মাসেই সেটা এসে গেছে।’

রেমিট্যান্স এত বেশি বাড়ছে কেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যখন পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলাম তখন আমি নিজ উদ্যোগে একটা স্টাডি করেছিলাম। স্টাডিতে দেখা গেছে ৫১ শতাংশ রেমিট্যান্স আসে বৈধ পথে আর ৪৯ শতাংশ আসে অবৈধ বা হুন্ডির পথে। আমি তখন থেকেই ভাবতে শুরু করলাম যে শতভাগ রেমিট্যান্স বৈধ পথে আনতে হবে।’

 তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আয় হয় তার পুরোটাই বৈধ পথে দেশে আসুক। সে জন্য আমরা দুটি কাজ করি। একটি হচ্ছে রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদণা প্রদান। রেমিট্যান্স বাড়ার বিষয়ে এ প্রণোদনা কাজ করেছে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আগে  বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোটা ছিল অনেক জটিল। নানাবিধ প্রশ্ন করা হতো, এখন এগুলো সহজ করে দিয়েছি। গত এক বছর যাদের রেমিট্যান্স এসেছে, কাউকে প্রশ্ন করা হয়নি। কারও রেমিট্যান্স মার যায়নি। সে জন্যই এত রেমিট্যান্স রেড়েছে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসীরা অনেক কষ্ট করে টাকা আয় করে আমাদের সমর্থন দিচ্ছেন। পাশাপাশি তারা নিজেরাও শক্তিশালী হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। কারণ তারা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বৈধ পথে পাঠানো শুরু করেছে।’ প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠান। কোনো না কোনো দিন এর সুফল আপনারা পাবেন।’ করোনা পরিস্থিতিতেও রেমিট্যান্স ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ভালো, এতে বোঝা যাচ্ছে অর্থনীতি আবার সচল হচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় একটি জিনিস বিশ্বাস করি, সেটি হলো আমার নাই। সেই নাই থেকে আমি কিছু অর্জন করতে পারব না। আমি মনে করি আমাদের আছে এবং তা কাজে লাগাতে হবে। এই আছেটাকেই কাজে লাগাচ্ছি। গত দুই মাসে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন রেমিট্যান্স যেভাবে ওপরের দিকে এগোচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে এক ঐতিহাসিক রেকর্ড সৃষ্টি হবে জুলাই-আগস্টের রপ্তানি বাণিজ্যে। সব ক্ষেত্রেই আমরা ভালোটা পাচ্ছি। আমি মনে করি এটা অব্যাহত থাকবে। এ দেশের মানুষ আমাদের প্রাণশক্তি। তাদের কারণেই সব সম্ভব হবে। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এর ফল তারা পাচ্ছেন।’ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছেন- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ক্যাশ ট্রান্সফার। যাদের অ্যাকাউন্ট নেই তাদের আমরা স্বীকার করি না বা করতে পারি না। এর ফলে যার টাকা পাওয়ার কথা তার হাতে গিয়ে টাকা পৌঁছায় না। আমরা এগুলো দূর করতে চাই। আজকে যারা স্মল, এক দিন তারা মিডিয়াম হবেন, এরপর তারা লার্জ হবেন, এটাই নিয়ম। আমি বলব, তাদের অ্যাকাউন্ট আছে এবং তারা কী ব্যবসা করেন এটা যদি তারা প্রমাণ করে আমার কাছে আবেদন করেন, আমরা তাদের যতটা সহায়তার দরকার করব। তাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদা উইং আছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন এর বাইরে কেউ নয়। তিনি নিজেও এগুলো তদারক করেন। ফলে এবার হইচই কম হয়েছে। সবাই সরাসরি সহায়তা পাচ্ছেন।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এমন একটা সময় ছিল যখন কৃষকদের পাঁচ হাজার টাকার ঋণ পেতে ৪ হাজার টাকাই ঘুষ দিতে হতো নানা জায়গায়। এখন আর সে চিত্র দেখা যায় না। তাই আমরা চাই স্বচ্ছতা। যেসব ব্যবসায়ী নিজেদের প্রণোদনার যোগ্য প্রমাণ করতে পারবেন, তারা অবশ্যই তা পাবেন।’

সর্বশেষ খবর