রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
ইউএনও ওয়াহিদা খানমের অবস্থার উন্নতি

দুই আসামি সাত দিনের রিমান্ডে, মামলা ডিবিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও দিনাজপুর প্রতিনিধি

দুই আসামি সাত দিনের রিমান্ডে, মামলা ডিবিতে

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গ্রেফতার দুই আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গতকাল আসামি নবীরুল ইসলাম ও সান্টু চন্দ্র দাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমার বসু সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে ওয়াহিদা হত্যাচেষ্টায় গ্রেফতার দুজন চুরির উদ্দেশ্যে বাসায় ঢুকেছিলেন দাবি করলেও তাতে সন্তুষ্ট নন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অবশ্যই নেপথ্যে অন্য কোনো বিষয় জড়িত। এ ছাড়া ইউএনও ওয়াহিদার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম। ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে এবং তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডে আরও দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে যুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন  নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম। এদিকে মামলার তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দেবদাস ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেখুন, এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এতটুকু শুধু বলতে পারি, প্রকৃত সত্যটাকে তুলে আনতে আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি থাকবে না। এরই মধ্যে মামলাটিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ইউএনও ওয়াহিদা ঘোড়াঘাট থানায় যোগদানের পর থেকে কারও সঙ্গে কোনো ধরনের মনোমালিন্য কিংবা বিরোধে জড়িয়েছিলেন কিনা এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, তার পরিবারে কোনো বিরোধের ঘটনা ছিল কিনা। তবে বর্তমানে ওয়াহিদা চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলাও সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু গ্রেফতারদের মধ্যে আসাদুল, নবীরুল ও সান্টু দীর্ঘদিন ধরেই মাদকাসক্ত। পাশাপাশি তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। আসাদুল এর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ঘোড়াঘাট উপজেলার সাগরপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে আসামি আসাদুল ইসলাম (৩৫) অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে নেপথ্যে থেকে গ্রেফতার ব্যক্তিদের দিয়ে কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছেন কিনা তা-ও গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছেন তদন্ত ও ছায়াতদন্তে থাকা বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।

হাসপাতালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব : গুরুতর আহত ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সুচিকিৎসার জন্য যা করা প্রয়োজন, তা করতে এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল সকালে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে আহত ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ইউএনও ওয়াহিদা এখন অনেকটা ইমপ্রুভ করে গেছেন। এটা অনেক ক্রিটিক্যাল একটা ইনজুরি। ডাক্তাররা চেষ্টা করছেন তার কন্ডিশন আরও ভালো করতে। আজকে সকালেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন, এর জন্য যা কিছু করার তা করতে।’ তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় ইতিমধ্যে দু-একজন ধরা পড়েছে, তা আপনারা জানেন। রাষ্ট্রব্যবস্থায় অনেক সময় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এগুলো আমাদের জীবনেও ঘটে। সবকিছুর ওপর তো আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিন্তু আমাদের কাজ হলো এগুলো প্রতিরোধ করা।’

নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. বদরুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) মেডিকেল বোর্ডে আইসিইউ বিশেষজ্ঞ রাজিউল হক ও নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞ সিরাজুল ইসলামকে যুক্ত করা হয়েছে। ওয়াহিদার শরীরের একটা পাশ এখনো অবশ রয়েছে। তবে আমরা আশাবাদী তিনি পর্যায়ক্রমে সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চটা দিচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনওর সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে গেটে দারোয়ানকে বেঁধে ফেলে তারা। পরে বাসার পেছনে গিয়ে মই দিয়ে উঠে ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে হামলাকারীরা। ভিতরে ঢুকে ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন। ওয়াহিদাকে প্রথমে রংপুরে ও পরে রংপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমানে তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মহিলা পরিষদের মানববন্ধন : ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে হত্যার চেষ্টাকারীদের বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। গতকাল বেলা ১১টায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি কানিজ রহমান বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে বর্তমান সময়ে নারীরা পরিবার, কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঘরে-বাইরে কোনো জায়গায় নারীর নিরাপত্তা নেই। এমনকি প্রশাসনের উচ্চপদে থেকেও নারীরা নিরাপদ নন। নিরাপত্তাহীন এ অবস্থা নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে, নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগমের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, মহিলা পরিষদের সহসভাপতি মিনতি ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবিনা আখতার, প্রশিক্ষণ গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রুবি আফরোজ, সদস্য শিবানী উড়াও, অনামিকা পান্ডে, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য ইমু প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর