রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা পরিকল্পিত হত্যার উদ্দেশ্যে

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘোড়াঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত। তাকে হত্যার অভিপ্রায় থেকেই এ হামলা চালানো হয়েছে। এটি কোনো চুরির ঘটনা নয়। এখন ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে একটি মহল এটিকে চুরির ঘটনা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। রাজধানীর ইস্কাটনে বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ। একই সঙ্গে সারা দেশে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগের দাবিও তুলেছেন তিনি। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হেলালুদ্দীন ও সংগঠনের মহাসচিব জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন। উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-মহাসচিব ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মেজবাহ উদ্দিন এবং বিয়ামের ডিজি ড. মিজানুর রহমান।

লিখিত বক্তব্যে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, কোনো কোনো মহল ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এটিকে ‘বিচ্ছিন্ন ও চুরির ঘটনা’ বলে চালিয়ে দেওয়ার অপপ্রচার চালাচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এটি কোনো চুরির ঘটনা নয়। কারণ দুর্বৃত্তরা কোনো জিনিস বা সম্পদ চুরি করেনি বা খোয়া যায়নি। এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণের ঘটনা এবং এর সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারেন। ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে সৎ, নির্লোভ ও নির্ভীক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউএনও কোনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না। স্বার্থান্বেষী মহল তার ওপর বেআইনি তদবিরে ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টির সঠিক তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে মনে করে অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের পক্ষ থেকে ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদ্্ঘাটনের পাশাপাশি দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানান, শুধু ইউএনওর (ওয়াহিদা) ওপর হামলাই নয়, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. রহিমা খাতুনের বিরুদ্ধেও কতিপয় অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ও একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির প্ররোচনায় ফৌজদারি আদালতে মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনা নজিরবিহীন ও দুর্ভাগ্যজনক। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এভাবে যদি মামলা গ্রহণ করা হয় তাহলে জেলা প্রশাসন কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে? অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহার এবং মামলাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়।

লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ইউএনও ওয়াহিদা ইদানীংকালে কিছু উচ্ছেদ করেছেন। আরও কিছু উচ্ছেদ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এতে কিছু লোকজন তার ওপর সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া ওখানে বালুমহাল আছে। সেখানে অবৈধভাবে বালু তুলতে তিনি বাধা দিয়েছিলেন। এসব কারণে প্রভাবশালী কেউ হয়তো তার ওপর ক্ষিপ্ত হতে পারেন। সেটির বহিঃপ্রকাশ এভাবে হতে পারে বলে আমরা মনে করি।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা তদন্তকারী দলগুলোকে নিজেদের মতামত ও পর্যবেক্ষণ জানাবে।

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটি তদন্ত করছে। সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে উদ্দেশ করে আমরা কিছু বলতে পারছি না। তদন্ত কার্যক্রম যখন চলে, তখন যদি আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কারও কথা বলি, তাহলে কিন্তু তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।’ তিনি বলেন, উপজেলাতে বিভিন্ন পেশা ও সংগঠনের লোকজন থাকেন। মানুষের চাহিদা অফুরন্ত হয়ে গেছে। সে চাহিদার মধ্যে কোনটা আইনি, কোনটা বেআইনি, এটা কিন্তু তারা অনেক সময় বাছবিচার করে না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ের যে কর্মকর্তা, ইউএনও সাহেব, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকেন, মোবাইল কোর্ট থেকে শুরু করে আইনের প্রতিটি বিষয় তিনি দেখভাল করে থাকেন, যেন কোথাও আইনের ব্যত্যয় না হয়। কোথাও আইনের ব্যত্যয় করে যদি কিছু আবদার করা হয়, তখন অনেকে তাদের (ইউএনও) বিরাগভাজন হন।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব বলেন, এই দুর্বৃত্তদের কেউ রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে। যেসব লোক এই দুর্বৃত্তায়ন করে, তাদের সব সময় যে রাজনৈতিক প্রভাব থাকে এ রকম নয়। অন্য জায়গা থেকে এসেছে... অন্য দল থেকে এসেছে... তারাও কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ রকম ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়ে এসব কর্মকা- ঘটিয়ে থাকে। সব রাজনীতিবিদ যে খারাপ, এ রকম নয়। সব দুর্বৃত্ত যে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য, এটিও আমরা মনে করি না।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ওয়াহিদা খানম তেমন কোনো চাপে ছিলেন বা অস্বস্তিতে আছেন বলে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে শেয়ার করেননি। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা প্রশাসকদের নিরাপত্তার জন্য ইতিমধ্যে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের নিরাপত্তায় ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি আমরা।’ তিনি বলেন, ‘সব জেলায় ব্যাটালিয়ন আনসার নেই। যেসব জেলায় আছে, আমরা সেখানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসকদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগ দেওয়ার জন্য আবেদন জানাব।’ মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন বলেন, ‘আমরা প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম এখনো জানতে পারিনি। তবে যতটুকু জেনেছি, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিই এর পেছনে রয়েছেন।’ প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকায় ইউএনওর বাসভবনের ভেনটিলেটর দিয়ে ঢুকে ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা চালানো হয়। গুরুতর জখম ওয়াহিদা এখন ঢাকায় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ইউএনওর ভাই শেখ ফরিদ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর