সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মানব পাচার রোধের পরামর্শ বিশ্বব্যাংকের

মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি

মানিক মুনতাসির

বাংলাদেশে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি বেড়েছে- মাস দেড়েক আগে এমন তথ্য দিয়েছিল সুইজারল্যান্ডের ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অন গভর্নেন্স। সে সময় সংস্থাটি মানব পাচার রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার বিশ্বব্যাংকও তা আমলে নিয়ে বলেছে কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি বেড়েছে। এ জন্য মানব পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে তদারকি বাড়াতে বলা হয়েছে। কারণ, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয় আমদানি-রপ্তানির আড়ালে। এ জন্য অনলাইন নিরাপদ লেনদেনকে দ্রুত জনপ্রিয় করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই ক্যাসলেস লেনদেন বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে কভিড-১৯ কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের কার্ড ও অনলাইন লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। এটাকে অবশ্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাপী অর্থলগ্নিকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব  তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, রেমিট্যান্স আহরণে সরকার দুই শতাংশ প্রণোদনা কার্যকর করায় সম্প্রতি বৈধপথে রেমিট্যান্স বেড়েছে। প্রবাসীরা উৎসাহ নিয়ে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশে অবৈধ পথে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণও কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। এক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানির আড়ালেই বেশি অর্থ পাচার হয় বলে মনে করে গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)। মানি লন্ডারিং নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, প্রতি বছর যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয় তা দিয়ে অন্তত তিনটি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। বিশ্বব্যাংক বলছে, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারের ঘটনা বেড়েছে। এমনকি মানব পাচারের সঙ্গে একজন আইনপ্রণেতার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল কুয়েতের কারাগারে রয়েছেন। এই মানব পাচার ও আমদানি-রপ্তানিকেই মানি লন্ডারিংয়ের নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নেয় পাচারকারীরা বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক ও ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অন গভর্নেন্স। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অর্থ পাচার কিংবা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সবার আগে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা। একই সঙ্গে মানব পাচারের সঙ্গে মানি লন্ডারিং ইস্যু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই মানব পাচার রোধ করতে পারলে মানি লন্ডারিং অনেকাংশে কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন। গত জুলাইয়ে প্রকাশিত ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অন গভর্নেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসবাদী অর্থায়ন ঝুঁকির দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ৪০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাসেল বৈশ্বিক অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (এএমএল) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সূচক ২০২০ (নবম সংস্করণ) শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ১৪১টি দেশের মধ্যে ৩৮তম স্থানে রয়েছে। সংস্থাটি ২০১২ সাল থেকে নিয়মিত এ কাজ করে আসছে। জরিপের ক্ষেত্রে তারা একটি দেশের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, দ্যা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ১৬ ধরনের নির্দেশককে বিবেচনায় নেয়। এ ছাড়া একটি দেশের আরও পাঁচটি ক্ষেত্রকে বিবেচনা করে। যেগুলো হলো- মানি লন্ডালিংয়ের সার্বিক অবস্থা। দুষ ও দুর্নীতি। আর্থিক স্বচ্ছতা ও মানদ-। সরকারি কেনাকাটা ও জবাবদিহিতা এবং আইন ও রাজনৈতিক ঝুঁকি। প্রায় একই ধরনের তথ্যউপাত্ত নিয়ে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে বিশ্বব্যাংক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর