সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

গ্যাস লাইন পুরনো হওয়ায় বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

জিন্নাতুন নূর

রাজধানী ঢাকায় ১৫ থেকে ২০ বছর আগে যে গ্যাসের লাইনগুলো বসানো হয় সেগুলো এখন অনেক পুরনো হয়ে গেছে। এগুলোর কারণেই নানা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। পাশাপাশি জনসচেতনতার অভাবেও অনেক অঘটন ঘটছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে যে অগ্নিদুর্ঘটনাগুলো ঘটছে তার প্রায় ৩০ শতাংশই গ্যাস সৃষ্ট আগুনের জন্য ঘটছে। আর এটি হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের নজরদারির অভাব এবং পুরনো গ্যাস লাইনগুলো সময়মতো মেরামত না করার জন্য। প্রসঙ্গত, ঢাকাসহ সারা দেশে গ্যাস লিকেজ থেকে অগ্নিকা-জনিত দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এরপরও মানুষ এ থেকে কিছু শিক্ষা নিচ্ছে না। এ কারণে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের তল্লায় গ্যাস লিকেজ থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় ২৪ জন মারা গেছেন।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ সালে গ্যাস লিকেজের ঘটনা ঘটে পাঁচ হাজার ৮৭৬টি। আর একই বছর এ কারণে অগ্নিদুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে ২০৪টি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় ১৫ থেকে ২০ বছর আগে যে গ্যাসের লাইনগুলো বসানো হয়েছিল সেগুলো পুরনো হয়ে গেছে। আবার একই লাইন ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। যে লাইন দিয়ে ৫০ জন গ্রাহকের গ্যাস আসার কথা, সে লাইন দিয়ে ৫০০ গ্রাহককে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। ফলে সেই লাইনে চাপ বেড়ে যাচ্ছে। আবার পাইপ লাইনগুলো দুর্বল হওয়ার কারণেও প্রেসার নেওয়ার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যে পাইপ লাইনগুলোতে জং ধরছে এবং যে লাইনগুলো খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে- তা থেকেও গ্যাস লিকের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

ঝুঁকি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, রান্নাঘরে ঢুকেই যদি গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায় তবে আমাদের সতর্ক হতে হবে। তখন বুঝে নিতে হবে- সেখানে কোনো লিকেজ আছে। তখন তাৎক্ষণিক একজন মেকানিক এনে লিকেজটি ঠিক করে নিতে হবে। একই সঙ্গে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ঘরের জানালা খুুলে দিতে হবে। যারা কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে গিয়ে ফিরে আসার পর ঘরে ঢুকেই যদি নাকে গ্যাসের গন্ধ পান, অর্থাৎ যদি বোঝা যায় গ্যাস লিক হয়েছে- তখন কোনো বৈদ্যুতিক সুইচ অন করা যাবে না। কারণ অনেকে কম দামি সুইচ ব্যবহার করেন, আর নি¤œমানের এ সুইচ টিপলে এর ভিতরে স্ফুলিঙ্গ জ্বলতে দেখা যায়। যা পরে অগ্নিকা-ের মতো দুর্ঘটনা ঘটায়। বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মঞ্জুরুল হাফিজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের অনতিবিলম্বে গ্যাসের পুরনো লাইনগুলো মেরামত করা উচিত। চাহিদার সঙ্গে মিল রেখেই গ্রাহককে সেবা দিতে হবে। তবেই দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, গ্যাস থেকে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে জানানো প্রয়োজন। অথবা গ্রাহক নিজেই ব্যক্তিগতভাবে মেকানিক এনে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকেই প্রথম সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। আর সরকারি সংস্থার কাছে গ্যাস পাইপ লাইনজনিত কোনো সমস্যার অভিযোগ দিলে তার প্রমাণ হিসেবে অন্তত গ্রাহককে এর ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে। কিংবা রেজিস্টার বইতে সেই অভিযোগ লিখে রাখতে হবে। কিন্তু গ্রাহকরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই পদক্ষেপগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেন না।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, গ্যাসের গ্রাহকদের নিজেদেরই গ্যাস সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। গ্যাস লিকেজের মতো ঘটনায় গ্রাহকদের গা-ছাড়া ভাবের কারণে অনেক সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। মাসে অন্তত একবার হলেও সবাইকে ঘরে গ্যাস লিক হচ্ছে কিনা- তা নিরাপত্তার স্বার্থে তদারকি করা প্রয়োজন। বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকেও এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর