সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মহামারীর কারণে ভারতের প্রতিবেশী নীতি পরিবর্তন হবে না

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মহামারীর কারণে ভারতের প্রতিবেশী নীতি পরিবর্তন হবে না

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব একটি বড় ভূ-রাজনৈতিক ধাক্কা হিসেবে এসেছে এবং এটি বিশ্ব রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। আমরা হয়তো সামনে বৈশ্বিক শক্তিতে ভারসাম্যগত পরিবর্তন দেখতে পাব। নতুন বহুপক্ষীয় কথোপকথনের উত্থান হবে এবং এই কথোপকথনে অংশীদারদের আপেক্ষিক শক্তিতে পরিবর্তন; এবং বিশ্বজুড়ে শক্তি, সংস্থান এবং ক্ষমতার বিস্তরণ ঘটবে। নতুন বৈশ্বিক পরিবেশে ভারতের পছন্দ, চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলোও প্রভাবিত হবে। তবে কিছু জিনিস পরিবর্তন হবে না। আমাদের প্রতিবেশী প্রথমে নীতিও তেমন একটি বিষয়। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সের (আইসিডব্লিউএ) আয়োজনে ‘মহামারী চলাকালীন ভারতীয় কূটনীতির বিস্তৃত পরিসর’      শীর্ষক মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন। এতে ভারতের বিভিন্ন নামি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের প্যানেলিস্টরা যোগ দেন। শ্রিংলা বলেন, আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেছি। এর প্রমাণ এই মহামারীর শুরুতেই আমরা পেয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম আঞ্চলিক/বৈশ্বিক সংশ্লিষ্টতা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের সঙ্গে। আমি বলতে পারি, মহামারীর মধ্যে আমার প্রথম বিদেশ সফর ছিল আমাদের প্রতিবেশী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশে। তিনি বলেন, মহামারী এবং লকডাউন আমাদেরকে বিশ্বায়নের কয়েকটি মৌলিক চালিকাশক্তিকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা বর্তমানের বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে রূপদান করে এমন অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও ভাবতে বাধ্য হয়েছি। এটি আমাদের চিন্তাভাবনার কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছে। মতবিনিময়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতের পরামর্শ, অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নেতৃত্ব দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফরমে প্রশংসা পেয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহামারী চলাকালীন প্রায় ৮০ জন প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি ডিজিটালি ব্রিকস, এসসিও এবং আরআইসির মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় অংশ নিয়েছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তার সহযোগীদের সঙ্গে একটি যৌথ বৈঠক করেছেন। আমি বিদেশি অফিসগুলোতে আমার সহকর্মীদের এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেছি ও পরামর্শ করেছি এবং তা অব্যাহত রেখেছি। সুতরাং এটি বলা ন্যায়সঙ্গত হবে যে, আমরা ডিজিটাল কূটনীতিতে সর্বাগ্রে রয়েছি। কূটনৈতিক গতি তৈরি এবং বজায় রাখার জন্য আমাদের প্রচেষ্টায় আমরা বহুমুখী হয়েছি। আসলে ভারত একটি বৈশ্বিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দেশ। আমাদের অর্থনীতি এবং সবার সামগ্রিক উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত। আমরা বিশ্বকে আন্তঃসংযুক্ত বাজারের সঙ্গে সীমান্তহীন অর্থনীতি হিসেবে দেখি। শ্রিংলা বলেন, ভারত সর্বদা নিজেকে একটি বৃহত্তর সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে বিশ্বাস করেছে। আমাদের বিশ্বাস- আমাদের মঙ্গল সামস্টিক কল্যাণের মাঝেই নিহিত। আমরা যা কিছু ভালো তা নিজের প্রয়োজনেই করতে হবে নীতিতেও বিশ্বাস করি। মিশন সাগর, অপারেশন সঞ্জীবনী, বেশ কয়েকটি দেশে কভিড মোকাবিলায় মেডিকেল র?্যাপিড রেসপন্স টিম মোতায়েন, স্বাস্থ্য পেশাদার এবং স্বাস্থ্য সক্ষমতা সংযোগ এগুলো কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং আমাদের কেন্দ্রীয় বিশ্বাস এবং আকাক্সক্ষাকে উপস্থাপন করে। এই প্রচেষ্টাগুলো বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মানুষকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে। এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারত মহামারীর মাঝে বিশ্ব স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক অবদান রেখেছে। আমরা এই অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্বে এক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছি। এটি ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে উন্নীত করেছে এবং মহামারী-পরবর্তী বিশ্বে আমাদের স্থিতিশীল রাখবে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে সংস্থান স্থাপন করি। এটি আমাদের সদিচ্ছা এবং সক্ষমতা এবং ‘সবার সাথে সবার উন্নতি’ নীতিতে আমাদের বিশ্বাসের একটি বাস্তব প্রতিফলন। উন্নয়ন অংশীদারিত্ব একটি অগ্রগতিমূলক কাজ এবং আমরা কীভাবে অংশীদারিত্বগুলো বাড়াতে পারি এবং আমাদের বন্ধুদের অগ্রাধিকার অনুযায়ী চাহিদা পূরণ করতে পারি তার দিকে লক্ষ্য রাখছি। আমাদের লক্ষ্য থাকবে টেকসই প্রকল্পগুলো সম্পাদন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্ষমতা জোরদার করা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর