সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পূর্ব লন্ডনে টোটাল কেয়ার স্টুডেন্ট এজেন্সির কারণে বিপাকে শত শত ছাত্র

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

হেদায়াতুল কবির সুমন ২০০৯ সালে ব্রিটেনে আসেন একটি কলেজে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে। ২০১১ সালে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ভিসা বাড়ানোর জন্য হোয়াইটচ্যাপেল টোটাল কেয়ার নামে একটি স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি ফার্মে তার অরিজিনাল সব সার্টিফিকেটসহ সাড়ে ৩ হাজার পাউন্ড জমা দেন। এরপর বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছে হেদায়াতুলের জীবন।

হেদায়াতুল কবির সুমন বলেন, টোটাল কেয়ার নামের প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমার টাকা গেছে, সার্টিফিকেট গেছে। আমাকে অপরাধী বানানো হয়েছে। এককথায় আমার জীবন ধ্বংস করে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

হেদায়াতুলের মতো বিভিন্ন দেশের শত শত ছাত্র-ছাত্রী টোটাল কেয়ার নামে প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার হয়ে অনিশ্চিত জীবনের দিন কাটাচ্ছে ব্রিটেনে। অনেকেই বাংলাদেশসহ নিজ দেশে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অন্যতম স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্য। কিন্তু এখানে এসেই অনেক ছাত্র-ছাত্রী তাদের স্বপ্নের মৃত্যুকে দেখছে টোটাল  কেয়ারের মতো প্রতারক স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের জন্য। কারণ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আশ্বাসে আসা শিক্ষার্থীদের প্রতারণার জালে আটকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, টোটাল কেয়ার লন্ডন নামে এই এজেন্সিটির অফিস ছিল পূর্ব লন্ডনের ব্যস্ততম এলাকা হোয়াইটচ্যাপেলে। স্টুডেন্ট এজেন্সি সার্ভিস  টোটাল কেয়ার লন্ডন-ব্রিটেনে আসা বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তৈরি করেছিল স্টুডেন্ট সার্ভিস প্যাকেজ। এই এজেন্সির কাজ ছিল মূলত ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া। তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কোর্স সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে সঠিক বিষয় বেছে নিতে সহযোগিতাও করার অঙ্গীকার ছিল এই এজেন্সির। এই অফিসকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল বিশাল প্রতারক চক্র। যে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে শিক্ষার্থীরা খুইয়েছেন লাখ লাখ পাউন্ড। এ ঘটনাটি প্রথম ব্রিটিশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে ২০১৪ সালে বিবিসি প্যানারোমাতে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে। সেখানে  দেখা যায়, কীভাবে ইংরেজি স্ট্যান্ডার্ড পরীক্ষায় জালিয়াতি করা হচ্ছিল। বিবিসি প্যানারোমার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৮০০ ছাত্রের জন্য বোগাস পরীক্ষার আয়োজন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানটির দুই পরিচালক বাংলাদেশি তালাল চৌধুরী ও শাহীন আহমেদ। তাদের তখনই গ্রেফতার করা হয়। তালাল চৌধুরী, শাহীন আহমেদ, চৌধুরী বাকের হাবিবসহ এই গ্যাংয়ের অনেকেই বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-ে দ-িত হয়েছেন। গ্যাংয়ে কিছু ভারতীয় ও পাকিস্তািন নাগরিকও ছিলেন।

এদের স্টুডেন্ট এজেন্সি সার্ভিস টোটাল কেয়ার লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলের অফিসটিতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সেই অফিস তালা মারা। পাশের অফিসের কারও কারও সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে এখনো হন্য হয়ে ঘুরছে অনেক শিক্ষার্থী। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ এখানে টাকার জন্য বা তাদের কাগজপত্রের জন্য ধরনা দিচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, ব্রিটিশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় তাদের অনেকেই টোটাল কেয়ারকে দেওয়া তাদের অর্থ ফেরত পাননি, অথবা কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারেননি। ফলে অনেকেই অবৈধ হয়ে গেছেন। এ কারণে তারা বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়ে ব্রিটেন ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আর্থিক ক্ষতির শিকার হওয়ার পাশাপাশি হারিয়েছেন জীবনের মূল্যবান সময়ও। এ ক্ষতি পূরণ হওয়ার মতো নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর