সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
ঝাঁজ বেড়েছে

বিশেষ নজরদারিতে পিঁয়াজ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বিশেষ নজরদারিতে পিঁয়াজ

পিঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পর গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের বৈঠক হয়েছে, যেই বৈঠকে পণ্যটিকে বিশেষ নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর এই নজরদারি কার্যক্রম চলবে আগামী মৌসুমে নতুন পিঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত।

দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভাপতি বাণিজ্য সচিব ড. মো, জাফর উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পিঁয়াজ নিয়ে গত বছরের কষ্টকর অভিজ্ঞতা থেকে এবার তারা আগেভাগেই পণ্যটিকে বিশেষ নজরদারিতে রাখছেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন (১) আগামী সপ্তাহ থেকে (নতুন পিঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত) ভর্তুকিমূল্যে পিঁয়াজ বিক্রি করবে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিবি, (২) পিয়াজ          আমদানিতে নীতি সহায়তা বাড়ানো হবে, (৩) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং ভোমরা, হিলি, সোনামসজিদসহ যেসব স্থলবন্দর দিয়ে  দেশে পিঁয়াজ আমদানি হয় সেসব পয়েন্টে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা পণ্যটির আমদানি ও সরবরাহ বাড়াতে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করবেন এবং (৪) বাজারে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হবে। এক মাস আগেও খুচরা বাজারে দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। গত শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সেই পিঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি কেজি ৭০ টাকা। গতকাল কিছুটা কমে তা ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন গতবারের মতো এবারও বাড়তে পারে পিঁয়াজের ঝাঁজ। কারণ অতিবৃষ্টি ও বন্যা। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজারে দেশি পিঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। করোনা সংক্রমণের পরও ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পিঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। পণ্যটির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবুও সরকারের দিক থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে আগেভাগেই। আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে পিঁয়াজের দাম ওঠানামা করে ভারতের মহারাষ্ট্রে পণ্যটির বাজার দেখে। সেখানে দাম বাড়লে যেসব সীমান্ত দিয়ে পণ্যটি আমদানি করা হয়, সেখানে দাম বাড়ে। আর সীমান্তের ওই দামই দেশে পণ্যটির বাজার অস্থির করে দেয়। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ডারের লোকেরা বলছেন, অতিবৃষ্টি আর বন্যার কারণে এবারও ভারতে ফলন কমার আশঙ্কা রয়েছে; আর সেই আশঙ্কা থেকেই গত সপ্তাহে হঠাৎ বেড়ে যায় পিঁয়াজের দাম। ঢাকার শ্যামবাজারের কৃষিপণ্য আমদানিকারক হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত সপ্তাহে পিঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়ার পর থেকে আবার কমতে শুরু করেছে। বাজারে অভিযান পরিচালনার ফলে সরবরাহও কিছুটা বেড়েছে। ফলে পিঁয়াজের দাম আর বাড়বে না বলে তিনি জানান। এই ব্যবসায়ীর তথ্য গতকাল শ্যামবাজারে ভারতীয় পিঁয়াজের পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ৩৭ টাকা, আর দেশি পিঁয়াজের পাইকারি মূল্য ছিল প্রতিকেজি ৪২ থেকে ৫০ টাকা।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘাট থেকে গতকাল তারা ভারতীয় পিঁয়াজ ৩৭ টাকা থেকে ৩৮ টাকা দরে আমদানিকারকের কাছ থেকে কিনে ৪০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করেছেন। এক মাস আগেও তারা এই পিঁয়াজ কিনেছেন ২০ টাকা কেজি দরে। তবে বৃষ্টির কারণে দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও গতবারের মতো পরিস্থিতি হবে না বলেই আশাবাদী এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ভরতীয় পিঁয়াজের দাম বাড়লেও মিয়ানমারের পর্যাপ্ত পিঁয়াজের চালান রয়েছে। গতকাল বার্মিজ পিঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারে পণ্যটির যে দাম থাকে খুচরা বাজারে সেটিই গিয়ে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে যায়। কখনো তারচেয়েও বেশি বাড়ে। ফলে পাইকারি বাজারে ৪০ টাকার পিঁয়াজ খুচরা বাজারে হাত বদল হতে হতে এটি গতকাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় ওঠে।

বাজারের নিয়ন্ত্রণ বর্ডারে : ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের পিঁয়াজের বাজারের পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত হয় ভারতীয় ৩টি সীমান্ত : ভোমরা, সোনা মসজিদ ও হিলি থেকে। ভারতের বৃহত্তম পিঁয়াজের বাজার মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে এই ৩টি বন্দরে আমদানিকারকগণ পণ্যটি নিয়ে এসে বাংলাদেশের পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আর বর্ডারের ব্যবসায়ীরা যেই দাম নির্ধারণ করে দেন, দেশের পাইকারি বাজারের দাম হয় সেটির ওপর কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা রেট ধরে। খাতুনগঞ্জের আল্লার দান ট্রেডার্সের মালিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, গতকাল তাকে হিলি বন্দরে একজন ৩৩ টাকা কেজি দরে ভারতীয় পিঁয়াজ বিক্রির প্রস্তাব দেন। এই ব্যবসায়ী বলেন, বর্ডারে যে পিঁয়াজ ৩৩ টাকা কেজি সেটি দেশে এনে এই মুহূর্তে পোষানো যাবে না। সে কারণে তিনি না করে দিয়েছেন। কারণ এখনো দেশি পিঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর