বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশেষ নিরীক্ষা হবে করোনা ব্যয়ের

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে কভিড-১৯ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ের জবাবদিহি করতে হবে অর্থ বিভাগের কাছে

মানিক মুনতাসির

চলমান কভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরি বা মহামারীকালীন চাহিদা হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ-সংক্রান্ত ব্যয়ের যাবতীয় অর্থ ছাড় করছে অর্থ বিভাগ। এসব ব্যয়ের বিবরণীসহ সব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ বিভাগের কাছে জবাবদিহি করবে, যা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তদারক করছে। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এ-সংক্রান্ত সব ব্যয়ের ওপর বিশেষ নিরীক্ষা করা হবে। আবার কোনো ব্যয়ের ব্যাপারে অডিট আপত্তি এলে সেগুলোকে অগ্রাধিকার ও সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নিষ্পত্তি করা হবে। এতে কারও বিরুদ্ধে কোনো গাফিলতি বা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র জানান, করোনাভাইরাসের টেস্ট কিট, পিপিপি, এন-৯৫ মাস্কসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা ও সরবরাহ কাজে গত কয়েক মাসে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসাসামগ্রী (ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি, পিপিই, টেস্টিং কিট/ওষুধপত্র) কেনাকাটার প্রতিটি কেইস সূক্ষ্মভাবে নিরীক্ষার আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্বাভাবিক ব্যয়ের খবর বেরোলে নড়েচড়ে বসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর। পরবর্তী সময়ে অবশ্য ঢামেক কর্তৃপক্ষ এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিল। সেটি সাময়িকভাবে গ্রহণ করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে নিরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছে। এদিকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা পৃথক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে টিকা কেনার জন্যই বরাদ্দ করা হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া এ ব্যয়ও একই রকম নিরীক্ষার আওতায় থাকবে। জানা গেছে, এর আগে ফেব্রুয়ারি-মার্চে কভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক ব্যয়িত অন্তত ২২ কোটি টাকার সঠিক হিসাব দিতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। সে সময় পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুকূলে অর্থ বিভাগ ৪০০ কোটি টাকা ছাড় করে। এর মধ্যে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি বিবরণী ও ব্যয় পরিকল্পনা অর্থ বিভাগে পাঠায় অধিদফতর। এর বাইরে বাকি ১৫০ কোটি টাকা খরচের হিসাব অবশ্য পাঠায়নি সংস্থাটি। সেখানে ল্যাবরেটরির জিনিসপত্র, পিপিই, কিট, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কেনার যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১২৮ কোটি টাকা। আর ১০০ কোটি টাকা ভবিষ্যৎ ব্যয়ের পরিকল্পনা হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবার ওই বিবরণীতে মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা, যা রীতিমতো এক গোঁজামিলের আশ্রয় বলে মনে করেন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর জেরেই কভিড-সংক্রান্ত সব ব্যয়ের ওপর বিশেষ নিরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চরম অব্যবস্থাপনার কারণে সংক্রমণের হার প্রতিদিন বাড়ছে। আমাদের হাতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম, যার মাশুল দিচ্ছি এখন। এ ছাড়া অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যেসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এগুলো তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রই দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে, সেখানে করোনার চিকিৎসাসামগ্রী কেনায় দুর্নীতি হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এন-৯৫ মাস্ক কেনা নিয়ে যা হয়েছে তাও ছিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের চরম দায়িত্বহীনতা। ফলে শুধু এই কভিড-সংক্রান্ত নয়, সব ধরনের সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে সরকারি অর্থের অপচয় থামানো সম্ভব হবে না।’ অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কভিড-১৯ মোকাবিলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অনুকূলে এখন পর্যন্ত যে অর্থ ছাড় করা হয়েছে, এর ব্যয় বিবরণী সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট বিবরণীতে হিসাব পাঠাতে বলা হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি বা গরমিল পাওয়া গেলে সেগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে নিয়ম অনুযায়ী কঠোর শাস্তিও পেতে হতে পারে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর