বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পুরো উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে পাহারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরো উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে পাহারা

শুধু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বাসভবন নয়, পুরো উপজেলা কমপ্লেক্সেই সরকারিভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইউএনওদের নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন আমরা সংশোধন করে বলেছি, সেখানে আরও অনেক কর্মকর্তা থাকেন। তাই পুরো উপজেলা কমপ্লেক্সই সিসিটিভির আওতায় এনে সারা রাত পাহারা থাকবে। যাতে কোনো দুর্বৃত্ত কারও ওপর হামলা করতে না পারেন। গতকাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, উপজেলা কমপ্লেক্সে ইউএনও ছাড়াও বেশিরভাগ কর্মকর্তা পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। সবগুলো পরিবার যাতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বোধ করেন, যাতে আক্রমণের শিকার না হন সেজন্য পুরো কমপ্লেক্স পাহারার আওতায় আনা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, চুরি করতে গিয়ে ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলা হয়েছে বলে বলা হলেও মানুষের কাছে তা খুব ‘বিশ্বাসযোগ্য’ হয়নি। ওয়াহিদার ওপর হামলার ঘটনা আরও তদন্তের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছি।

এর পেছনে কী রহস্য আছে, গডফাদাররা কারা, সেগুলো দেখতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, কেউ যদি অন্যায় করে তার বিরুদ্ধে প্রতিকার চাওয়ার জায়গা দেশের প্রচলিত আইনে রয়েছে। কারও যদি অভিযোগ থাকে রাতে হামলা করা... এতে সরকারি কর্মচারীরা কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাবেন। কাজেই তাদের নিরাপত্তার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নই। যাকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে, তার সম্পৃক্ততা গোয়েন্দা সংস্থা খতিয়ে দেখছে। তার যদি সম্পৃক্ততা থাকে এবং তাকে প্রভাব খাটিয়ে ছাড় করিয়ে নেওয়ার জন্য এমপির সম্পৃক্ত পাওয়া যায় তাহলে তিনিও আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন না।

এদিকে বৈঠকে মাদক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, দেশে মাদক কারবারে যে বিপুল অর্থের লেনদেন হয়, তা দিয়ে সমাজের নেতৃত্বদাতাদের অনেককে কিনে ফেলা হয়। সেই উপলব্ধি থেকে মাদক কারবারিদের পাশাপাশি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও শনাক্ত করতে গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল আরও বলেন, মাদক যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে, তার পরেও আরও উন্নত করতে চাই। দেশের বিশাল বর্ডার, অনেক দুর্গম জায়গাও আছে। সেখান দিয়ে অপরাধীরা সহজেই ঢোকে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগায়োগ করে। আমাদের ধারণা, ১০/২০ টাকার মাদকের ট্যাবলেট ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি করে, সেজন্য অনেকের মাথা কিনে ফেলে। যারা সমাজের নেতৃত্বে তারাও সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে, যারা মাদকসেবী তারা তো আছেই। এ ছাড়া উচ্চ পর্যায়ের লোকেরাও, বড় বড় ব্যবসায়ীরাও।

তিনি বলেন, আমরা এখন সব থেকে গুরুত্ব দেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, (মাদক) আনা-নেওয়া করে শুধু তারা নয়, তাদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় সেগুলো গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয়েছে আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি জানান, মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও বেশি মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার।

তিনি আরও জানান, যারা মাদক চালানের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি যেন দৃশ্যমান হয় সেজন্য আগের আইনের দুর্বলতা কাটিয়ে আইন যুগোপুযোগী করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।

রোহিঙ্গাদের কর্মকা  তদারকি হবে : আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক অভিযোগ করে বলেছেন, এনজিওর ব্যানারে কিছু সংস্থা রোহিঙ্গাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। রোহিঙ্গাদের কর্মকান্ড আরও বেশি তদারকির ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সেখানে কিছু আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। এনজিওদের নামে যাতে রোহিঙ্গারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে মারামারি, কাটাকাটি বা মাদকদ্রব্য ও অপরাধে জড়িত হচ্ছে সেগুলোও নিয়ন্ত্রণের জন্য ২৪টি টাওয়ার নির্মাণ করে সেখান থেকে যেন সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে পারি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরা দিয়ে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারা পৃষ্ঠপোষকতা করছে তা আরও সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেসব কাজ করছে সেগুলো সমন্বয়ের জন্য কমিটি করবে সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে সেই কমিটি করার দায়িত্ব দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজের সমন্বয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কমিটির সভাপতি আরও জানান, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত থাকা ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে কারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে এবং কীভাবে সেই বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর