শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কেউ অন্যায় করলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

কেউ অন্যায় করলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা কেউ বলতে পারবে না অন্যায় করলে কাউকে আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। তিনি বলেন, করোনার ভ্যাকসিনের জন্য টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যেখানেই আগে পাওয়া যাবে, তা দেশের মানুষের জন্য আনা হবে।

গতকাল জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। গত ৬ সেপ্টেম্বর নবম অধিবেশন শুরু হয়। পাঁচ দিনের কার্যদিবসের এ অধিবেশনে ৬টি বিল পাস হয় ও ৩টি বিল উত্থাপিত হয়। সংসদ নেতার বক্তব্যের আগে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বক্তব্য রাখেন। বার্ধক্যজনিত কারণে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যথাযথ কাজ করে যাচ্ছে। সেগুলো করতে গিয়ে যদি কিছু দুর্ঘটনা ঘটে এটা খুব অস্বাভাবিক নয়। তবে আমরা কিন্তু কাউকে ছেড়ে দিচ্ছি না। তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু সরকার পানির মতো টাকা খরচ করেছে। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সিস্টেম লস বিবেচনায় ছিল না। বিবেচনায় ছিল মানুষের জীবন বাঁচানো। তিনি বলেন, করোনার ভ্যাকসিন পৃথিবীর যেখানেই আবিষ্কার হোক, আমার দেশের মানুষের জন্য সেটা সংগ্রহ করতে পারব। সে বিষয়ে আমরা যথাযথ সচেতন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনার চিকিৎসার জন্য সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত করা, নতুন ও অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহে সরকার পানির মতো টাকা খরচ করেছে। এ কারণে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। করোনা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে একেবারে স্থবির করে দিয়েছে। বাংলাদেশে যখন এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সবাই এটি মোকাবিলায় একযোগে কাজ করেছে। প্রশাসন ও আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছি বলেই মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। যতদূর সম্ভব আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ছিল না, তারপরও যে যেভাবে পেরেছি, সহায়তা করেছি।’ করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভ্যাকসিনের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশ গবেষণা করছে। সব দেশেই আমাদের আবেদন দিয়ে রেখেছি। যেখান থেকে আগে পাওয়া যায় আমরা সেটা নেব এবং আমাদের দেশের মানুষকে করোনামুক্ত করার জন্য তা ব্যবহার করব। তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিন যেটা আবিষ্কার হলো, আমরা তো আশাবাদী হয়েছিলাম অক্সফোর্ডেরটা নিয়ে। সেটা পরীক্ষা করতে গিয়েই যখন একজন অসুস্থ হয়ে পড়ল, আমরা আবার একটু দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে গেছি। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে যে, পৃথিবীর যেখানেই আবিষ্কার হোক বাংলাদেশ, আমার দেশের মানুষের জন্য আমরা সেটা সংগ্রহ করতে পারব।’ 

শিক্ষার্থীদের ১ হাজার করে টাকা দেব : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু করোনাভাইরাসে সবার জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে, এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিক্ষার্থীদের আমরা ১ হাজার করে টাকা দেব। যাতে করে তাদের কাপড়-চোপড়, টিফিন বক্স প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে। তিনি বলেন, কোনো সংকটের সময় পিছিয়ে থাকতে পারব না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সংকট মোকাবিলা করব। অর্থনীতির চাকা আমরা সচল রাখব। এটাই আমাদের সরকারের নীতি।

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস লাইনের ওপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের কোনো অনুমোদন ছিল না। জায়গাটাও মসজিদ কমিটির ছিল না। এভাবে অনুমোদন না নিয়ে করার ফলে এই দুর্ঘটনাটা ঘটে গেল। কতগুলো জীবন ঝরে গেল। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সবাইকে নীতিমালা মেনে অনুমোদন নিয়ে স্থাপনা নির্মাণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিচারবহির্ভূত হত্যা জিয়াউর রহমানের আমল থেকে শুরু : সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই শুরু। আমাদের বহু নেতা-কর্মীর লাশও পাওয়া যায়নি। আমরা চেষ্টা করেছি কীভাবে আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করব। কিন্তু পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে যে, আমাদের মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যথাযথ কাজ করে যাচ্ছে এবং যথেষ্ট তারা সাফল্য অর্জন করেছে এবং তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করছে।

সংকটে হাল ছেড়ে না দিয়ে মোকাবিলাই সরকারের নীতি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংকটে হাল ছেড়ে না দিয়ে তা মোকাবিলার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়াই সরকারের মূলনীতি। তিনি বলেন, করোনা চলমান। এর মধ্যে এলো ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। তারপর দীর্ঘমেয়াদি বন্যা। একটার পর একটা আঘাত এসেছে। আমি চেষ্টা করেছি, দেশের মানুষের যেন কষ্ট না হয়। মানুষ যেন কোনো দুর্ভোগ না পোহায়। আল্লাহর রহমতে সেটা আমরা কাটাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রচেষ্টা মানুষের জন্য কাজ করা। আর সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি বিপদে হতাশ হয়ে না পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিপদ আসবে। সেটা আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এর জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।

১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা প্রণোদনা : করোনাকালে নেওয়া সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২১টি প্যাকেজে ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি। তা জিডিপির ৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর বাইরেও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আমার বিশেষ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। প্রতিটি মসজিদ-মাদ্রাসায় টাকা পাঠিয়েছি। সরকারের প্রণোদনার বাইরেও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। কোনো মানুষ যেন কষ্টে না থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রেখেই আমরা এই ব্যবস্থাটা নিয়েছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর