শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
পাইকারি খুচরা সুপার শপ

বাজার ঘুরলেই বাড়ে দাম

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানে গোলবেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি। গুলশান-২-এর ডিসিসি মার্কেট, উত্তর বাড্ডা কাঁচা বাজারে এ বেগুন ৬০-৭০ টাকা আর ‘স্বপ্ন’ সুপার শপে ১০০ টাকা কেজি। লালশাকের আঁটি কারওয়ান বাজারে ৩ টাকা, ডিসিসি মার্কেটে ১০ টাকা আর সুপার শপে ১৮ টাকা। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে যেতেই সবজির দাম বেড়ে যায় ১০-২০ টাকা, অনেক সময় আরও বেশি। সুপার শপে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। পাইকারি দোকানির কাছ থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতেই সবজির দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। করোনায় নাজুক অবস্থায় পড়েছে জীবন-জীবিকা। এর মধ্যে সবজির আকাশছোঁয়া দামে নাভিশ্বাস রাজধানীবাসীর। দামের এত হেরফেরে শেষমেশ ঠকছেন ক্রেতা। কারওয়ান বাজারে পাইকারি বিক্রেতারা প্রতি কেজি পটোলের দাম রাখছেন ৩৫, ঢেঁড়স ৪৪, চিচিঙ্গা ৩৪, বরবটি ৫০, বড় আলু ৩০-৩৫, ছোট আলু ২৮, হাইব্রিড শসা ৩৫, দেশি শসা ৪০, দেশি গাজর ৪০, চীনা গাজর ৭০, পেঁপে ৩০, শিম ৯৫, ধনেপাতা ১০০, দেশি করলা ৪৪, হাইব্রিড করলা ৩৪, ঝিঙ্গা ৪০, আদা ১১০, দেশি রসুন ১০০, চীনা রসুন ৪৫০ টাকা। লাউ আকারভেদে পিস ৩০-৪০ আর চালকুমড়া ২৫, ফুলকপি ২৫-৩০ টাকা। লালশাকের আঁটি ৩, পুঁইশাক ২০-২২, কাঁচকলার হালি ২০-২৫, লেবুর হালি ২০ টাকা। রুই মাছ ২৭০-৩৭০, বোয়াল ৬০০-৮০০, টেংরা ৪০০-৪২০, চিংড়ি ৪৫০-৫০০, পাঙ্গাশ ১৩০-১৪০, কাচকি ৩৮০-৪০০, দেশি শিং ৭০০, বিদেশি শিং ৪০০-৪৫০, দেশি পুঁটি ৪৫০-৪৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বয়লার মুরগি ১২৫-১৩০, সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা কেজি। খোলা সয়াবিন তেল ৮৮-৯০ টাকা প্রতি লিটার। রামপুরা খুচরা বাজারের ক্রেতা আমিনুর রহমান বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেশি হতে পারে। কিন্তু ১৫-২০ টাকা বেশি রাখা ক্রেতাদের সঙ্গে বাটপাড়ি। কোনো হিসাবেই তারা এত দাম রাখতে পারেন না। অথচ তাই রাখছেন। ২০০ টাকার সবজি কিনলে ব্যাগের তলায় পড়ে থাকে। করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের বেতন ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হুহু করে সবজির দাম বাড়ছে। রাজধানীতে পরিবার নিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।’ রামপুরা খুচরা বাজারে পটোল ৪০, ঢেঁড়স ৫০-৬০, চিচিঙ্গা ৪০, বড় আলু ৩৫-৩৮, ছোট আলু ৩০, হাইব্রিড শসা ৪৫, দেশি শসা ৬০, দেশি গাজর ৬০, চীনা গাজর ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আদা ১২০, দেশি রসুন ১১০, চীনা রসুন ৪৬০ টাকা। প্রতি পিস লাউ ৪০-৬০, চালকুমড়া ৩০ টাকা। লালশাকের আঁটি ১০, পুঁইশাক ২৫-৩০ টাকা। রুই মাছ আকারভেদে কেজি ২৯০-৩৫০, কাতল ৩৩০-৩৭০, বোয়াল ৮০০-৯০০, টেংরা ৪৫০-৪৬০, চিংড়ি ৫০০-৫৫০, পাঙ্গাশ ১৪০-১৫০, কাচকি ৪০০-৪২০, দেশি শিং ৭৫০ টাকা কেজি।সুপার শপে বাজার করতে এসেছিলেন গুলশানের বাসিন্দা ফাহিমা আফরোজ। তিনি বলেন, ‘সুপার শপে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ও সার্বিক সুবিধার জন্য পাইকারি বাজারের চেয়ে ১০ টাকা বেশি হলে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে ৫০ টাকা বেশি রাখা কোনোভাবেই সৎ ব্যবসার পর্যায়ে পড়ে না। এজন্য নিয়মিত মনিটরিং প্রয়োজন।’ গুলশান-২-এর সুপার শপ ‘স্বপ্নে’ গতকাল সবজির দাম ছিল পটোল ৬০, ঢেঁড়স ৪০, শসা ৫০, গাজর ৮৫, পেঁপে ৩২, করলা ধরনভেদে ৬০-৮০, কচুর লতি ৫০, শিম ১৪০, বরবটি ৪০ টাকা কেজি।

 মিষ্টিকুমড়া ৮০ টাকা, চালকুমড়া ৩৮ টাকা। মাছের মধ্যে রুই ২৭০, কাতল ২২০, টেংরা ৪০০, পাবদা- ৩৯০, গলদা চিংড়ি ৭২০, পাঙ্গাশ ১৫০, শিং ৪৬০, কই ২৫০ টাকা কেজি। গরুর মাংস ৫৬০, সাধারণ খাসির মাংস ৬৮০, প্রিমিয়াম খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি। হাঁসের মাংস ৪২৫, দেশি মুরগি ৩৭০ টাকা কেজি। বোতলজাত সয়াবিন তেল কোম্পানিভেদে ১০০-১১০ টাকা লিটার।

উত্তর বাড্ডা কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফ মিয়া বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় আমাদেরও বেশিতে কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ যোগ করে সীমিত লাভে আমরা বিক্রি করছি। দাম খুচরা বাজারে নয়, পাইকারি বাজারেই বাড়ে। ক্রেতারা দাম বাড়লে আমাদেরই দোষ দেন। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই।’ উত্তর বাড্ডা কাঁচা বাজারে পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০, ঢেঁড়স ৬০, চিচিঙ্গা ৬৫, কচুর ছড়া ৫০, আলু ৪০, টমেটো ১২০, শসা ৫০, গাজর ১০০, ঝিঙ্গা ৬৫, বরবটি ৭০, পেঁপে ৩৫, শিম ১২০ আর কাঁচা মরিচ ১৮০ টাকা কেজি। এ ছাড়া আদা ২৪০, দেশি রসুন ১২০, বিদেশি রসুন ১০০ টাকা কেজি। লাউ আকারভেদে প্রতি পিস ৬০, চালকুমড়া ৪০, মিষ্টিকুমড়া ৩০, ফুলকপি ৪০, বাঁধাকপি ৪০ টাকা আর কাঁচকলা প্রতি হালি ৫০ ও লেবু ২০ টাকা। অন্যদিকে লালশাকের আঁটি ৩০, পুঁইশাক ৩০ টাকা। মাছের মধ্যে রুই ৩০০, কাতল ৩২০, পাবদা ৫৫০, আইড় ১ হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০০, সরিষার তেল ২৫০ টাকা। গরুর মাংস ৫৮০, দেশি মুরগি ৪০০, সোনালি ২৫০, ব্রয়লার ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

গুলশান-২ ডিসিসি কাঁচা বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন মাফিদ আলী। তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে আয় না বাড়লেও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। ৫০০ টাকার সবজি কিনলে চারজনের পরিবারে এক সপ্তাহ যায় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে না আনলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।’ গুলশান-২ ডিসিসি কাঁচা বাজারে গতকাল সবজির দাম ছিল প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৪০-৫০, বরবটি ৬০-৭০, করলা ৬০-৭০, ঝিঙ্গা ৫০, পেঁপে ৩০-৪০, লতি ৬০, গাজর ৫০-৬০, ঢেঁড়স ৫০-৬০, ধুন্দল ৫০-৬০, ধনেপাতা ১২০-১৩০ টাকা। লেবু ২৫-৩০ টাকা হালি। ফুলকপি প্রতি পিস ৫০-৬০, চালকুমড়া ৩৫-৪০, লাউ ৫০-৬০ টাকা। এ ছাড়া রুই মাছ ৩৫০, পাঙ্গাশ ৬০০, গলদা চিংড়ি ৫০০-৫৫০, পাবদা ৪৫০, বোয়াল ৫৫০-৬০০ টাক কেজি। অন্যদিকে গরুর মাংস ৫৫০, খাসির ৭০০, ব্রয়লার মুরগি ১৪৫, সোনালি মুরগি ২৫০ টাকা কেজি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর