রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বে অগ্রাধিকার পাবেন বাংলাদেশের নাবিক

কি-ওয়ার্কারের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে লকডাউন-কোয়ারেন্টাইন থেকে পাবেন অব্যাহতি বন্দরে পাবেন বিশেষ ইমিগ্রেশন সুবিধা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত বাংলাদেশি নাবিক ও নৌ-কর্মীদের ‘অত্যাবশ্যকীয় কর্মী’ (কি-ওয়ার্কার) হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যার মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও কোনো দেশের বন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ ‘অগ্রাধিকার সুবিধা’ ভোগ করবেন তারা। এমনকি কভিড-১৯ এর কারণে কোনো দেশে লকডাউন বা কোয়ারেন্টাইনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ মর্যাদা পাওয়ার পর তা থেকে অব্যাহতি পাবেন তারা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এ ধরনের একটি নথি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে কি-ওয়ার্কার ঘোষণা করা হবে বাংলাদেশি নাবিকদের। জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ১৫ হাজার নাবিক রয়েছেন, যারা বিভিন্ন দেশের সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত রয়েছেন। বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তারা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, করোনা মহামারীর কারণে বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনসহ বিভিন্ন ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করায় বিপুল সংখ্যক নাবিক সমুদ্রগামী জাহাজে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশে ফিরতে পারেননি। একই কারণে তারা নতুন কোনো জাহাজে যোগদান করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশি নাবিকদের কি-ওয়ার্কারের মর্যাদা দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের নাবিকদের কি-ওয়ার্কার ঘোষণা করা হলে যে সুবিধা পাবেন :

(১) মহামারীর কারণে কোয়ারেন্টাইনের বিধিনিষেধ থেকে অব্যাহতি পাবেন।

(২) বিশ্বের যে কোনো বন্দরে গমনাগমনের সময় ইমিগ্রেশনে পাবেন বিশেষ সুবিধা।

(৩) যেসব দেশ তাদের নাবিকদের এ মর্যাদা দিয়েছে, সেসব দেশের নাবিকদের মতো সমমর্যাদা ভোগ করবেন বাংলাদেশি নাবিকরা। 

(৪) নাবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জাহাজ কোম্পানিগুলো বাড়তি সুবিধা দেবে।

(৫) আন্তর্জাতিক পরিম লে বাংলাদেশি নাবিকদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এবং

(৬) নাবিকদের মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, করোনা মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে জাহাজে কর্মরত নাবিকরা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দায়িত্ব পালন করছেন। সারা বিশ্বে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে জ্বালানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তারা। কিন্তু চাকরিরত নাবিকদের এককালীন দীর্ঘসময় জাহাজে চাকরি করা মানবাধিকার পরিপন্থী। এ কারণে তিনটি বিশেষায়িত সংস্থা মেরিটাইম অর্গনাইজেশন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের মাধ্যমে সব রাষ্ট্রকে নাবিকদের অত্যাবশ্যকীয় কর্মী ঘোষণা করে কোয়ারেন্টাইন বিধিনিষেধ থেকে অব্যাহতির আবেদন জানায়। পরবর্তীতে গত ১২ জুন জাতিসংঘ সব রাষ্ট্রকে জাহাজে কর্মরত নাবিকদের কি-ওয়ার্কার মর্যাদা দেওয়ার আহ্বান জানায়। কর্মকর্তারা জানান, ওই ঘোষণার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) রাষ্ট্রগুলো, কানাডা, ইংল্যান্ডসহ অনেক দেশ এরই মধ্যে তাদের দেশের নাবিকদের কি-ওয়ার্কার হিসেবে ঘোষণা করে মহামারীর বিধিনিষেধ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর