রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ইউএনওর ওপর হামলা তদন্তে নতুন মোড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও রংপুর

ইউএনও ওয়াহিদা খানম হত্যাচেষ্টা মামলায় নতুন সূত্র পেয়েছে পুলিশ। চুরির দায়ে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত মালি রবিউল ইসলাম আক্রোশবশত ইউএনওর ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। আদালতে এক সাক্ষীর দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামি রবিউলকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত। রিমান্ড শেষে দুই আসামি আসাদুল হক ও নাহিদুল হোসেন পলাশকে গতকাল জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেছেন, ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যবহৃত

আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় সম্পৃক্ত মূল আসামিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গতকাল বিকালে দিনাজপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ঘটনার রহস্য উদ্্ঘাটন ও মূল অপরাধীকে গ্রেফতার করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের চুরির ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া মালি রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার রবিউল দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার ধামইরহাট ভীমপুর গ্রামের খতিব উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে। তাকে জানুয়ারি মাসে চুরির ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার কাছ থেকে ইউএনওকে হত্যার চেষ্টায় ব্যবহৃত হাতুড়ি ও অন্যান্য উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। ব্রিফিংকালে পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক আবু ইমাম জাফরসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে দিনাজপুরের কোর্টপুলিশ পরিদর্শক মো. ইসরাইল হোসেন জানান, গতকাল বিকাল ৫টায় দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে রবিউল ইসলামকে (৩৬) হাজির করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক আবু ইমাম জাফর গ্রেফতার রবিউলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিচারক শুনানি শেষে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ডিবি পুলিশ পরিদর্শক আবু ইমাম জাফর জানান, গতকাল সন্ধ্যায় রবিউলকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত হাতুড়ি দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়া থেকে ক্রয় করা হয়েছিল। ওই হাতুড়ি শুক্রবার মধ্যরাতে ইউএনও ওয়াহিদার সরকারি বাসভবনের সামনের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। হাতুড়ির ক্রয়কৃত গ্রাহক রবিউলকে শনাক্ত করেন দোকানের মালিক শহরের মধ্য বালুবাড়ী এলাকার সাহেব আলীর ছেলে খোকন আলী। গতকাল বিকালে খোকন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল হোসেনের আদালতে এ মামলার একজন সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এদিকে এ মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে থাকা আসাদুল হক এবং শুক্রবার গ্রেফতার হওয়া আসামি নাহিদুল হোসেন পলাশকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। পলাশ ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের নৈশপ্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে শুক্রবার অপর দুই আসামি সান্টু কুমার দাস ও নবীরুল ইসলামকে সাত দিন রিমান্ড শেষে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের সামনের পুকুর থেকে ইউএনওকে জখমের কাজে ব্যবহৃত হাতুড়ি, চাবির থোকা, একটি কাঠের মই ও অন্যান্য উপকরণ ডিবি পুলিশ উদ্ধার করেছে। এদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের মাথায় অস্ত্রোপচারের বেশির ভাগ অংশের সেলাই কাটা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে তার মাথার সেলাই কাটা হয়। বর্তমানে তিনি আগের চেয়ে সুস্থ আছেন। তার শরীরের অবশ থাকা ডান পাশেরও উন্নতি হয়েছে। ডান হাত নাড়াতে পারছেন তিনি। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের নিউরোট্রমা বিভাগের প্রধান ও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন জানান, ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় যে অপারেশন করা হয়েছিল, সেখানকার অধিকাংশ সেলাই কাটা হয়েছে। অপারেশনের জায়গাগুলো এখন ভালো আছে। ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থার উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, ওয়াহিদার অবশ ডান হাতের কনুই পর্যন্ত অংশের উন্নতি হয়েছে। তিনি ডান হাতের কনুই পর্যন্ত তুলতে ও নাড়াতে পারছেন, তবে ডান পা এখনো নাড়াতে পারেননি। তার স্বাস্থ্যগত আর কোনো জটিলতা নেই। ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, ‘আরও উন্নতির জন্য এখানে দিনে তিন-চারবার তার ফিজিওথেরাপি চলছে। ফিজিওথেরাপি করে আস্তে আস্তে হাতের অবশ অংশ স্বাভাবিক করা হয়েছে। পায়েরও ফিজিওথেরাপি চলছে। আশা করি তিনি (ওয়াহিদা) দ্রুতই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবেন।’ ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। ইউএনওকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে আনা হয়। তিনি এখন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর