বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সংযোগব্যবস্থা বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারত উভয়ের ওপর সরাসরি ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যকার ১৯৬৫ সালের আগের ছয়টি রেল সংযোগের মধ্যে চারটিকে আবার চালু করা হয়েছে এবং বাকি দুটি চালুর কাজ চলছে। পশ্চিমবঙ্গের হলদিবাড়ি ও বাংলাদেশের চিলহাটির মধ্যে নির্মাণাধীন রেল সংযোগ বাংলাদেশ হয়ে দার্জিলিং মেইলের পুরনো শিলিগুড়ি-শিয়ালদহ পথকে জাগিয়ে তুলবে। বাংলাদেশের আখাউড়া এবং ত্রিপুরার আগরতলার মাঝে নতুন একটি রেলপথের নির্মাণকাজ চলছে। পণ্য ও মানুষের আন্তসীমান্ত যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে আমরা ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করছি। সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব ভারতের কর্মসংস্থান ও দক্ষতা নিয়ে এক ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে শ্রিংলা এসব কথা বলেন।
সিকিমের আইসিএফএআই বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ওয়েবিনারে একের পর এক উদাহরণ দিয়ে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভবিষ্যৎ কীভাবে বাংলাদেশের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করেছে। কিংবা মিয়ানমার-ভুটান-নেপালও কীভাবে এই ‘বাংলাদেশ মডেল’ প্রয়োগ করতে পারে সে কথা উল্লেখ করেছেন। তার বক্তব্যের সিংহভাগজুড়েই ছিল বাংলাদেশ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিদেশনীতির মূল স্তম্ভ নেইবারহুড ফার্স্ট (সবার আগে প্রতিবেশীরা) ও অ্যাক্ট ইস্ট (পূর্বমুখী নীতির বাস্তবায়ন) পলিসি। যার সুবাদে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির নতুন নতুন দিগন্ত খুলে যাচ্ছে। আর এর ফলে উপকৃত হচ্ছে উভয় ভূখ-ই। দুই দেশের নাগরিকরা শুধু মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেসেই রেলপথে যাতায়াত করতে পারছেন তা-ই নয়। ঢাকা থেকে শিলং এবং আগরতলা থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতা রুটেও বাসে সীমান্ত পারাপার করছেন অজস্র যাত্রী। তিনি বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারত আর বাংলাদেশকে সংযুক্ত করে রেখেছে একটি অভ্যন্তরীণ নদী নেটওয়ার্ক। এই পথে নৌ আর পণ্য চলাচল উৎসাহিত করতে ব্রহ্মপুত্র আর বরাক অববাহিকাজুড়ে মোট কুড়িটি বন্দর-নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা সমগ্র অঞ্চলের মাল্টিমোডাল লিঙ্কেজকেই (বহুমুখী সংযোগ) আমূল বদলে দেবে। ওদিকে আশুগঞ্জ নদী-বন্দর হয়ে এবং তারপর আখাউড়া-আগরতলা সড়কপথেও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের যে ভৌগোলিক নৈকট্য, সে কারণে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য ও প্রসেসড ফুডের বিরাট চাহিদা রয়েছে ভারতের ওই রাজ্যগুলোতে। এই বাণিজ্যের প্রসারের জন্য স্থল বন্দরগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে, তাতে দুই দিকেই কর্মসংস্থান বাড়বে ও উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। দীর্ঘদিন ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার পদে থাকার সুবাদে বাংলাদেশের সঙ্গে তার যে আলাদা একটা সম্পর্ক আছে সে কথাও জানিয়েছেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।