মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

তৃণমূলেও ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

তৃণমূলেও ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা

রাজবাড়ী সদরের মূলঘর ইউনিয়নের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘদিন কোনো চিকিৎসক নেই। ফিরে যান রোগীরা। ভবনে বাসা বেঁধেছে ভিমরুল (বামে)। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোঁড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দরজা বন্ধ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

তৃণমূল পর্যায়েও উপেক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা। সারা দেশের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থাই বেহাল। উপজেলা পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলেও সেখানে থাকতে চান না অনেকেই। ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে তো দেখাই মেলে না চিকিৎসকদের। কোনো কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে বন্ধও রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে জনবল সংকট চরমে।

কোনো হাসপাতালেই নেই নির্দিষ্টসংখ্যক চিকিৎসক। নার্স সংকট তো আছেই। চিকিৎসা-সরঞ্জামও অপ্রতুল। মাঠপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে আছে দালালদের দৌরাত্ম্য। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও নোংরা টয়লেটের দুর্গন্ধে অনেকে হাসপাতালে যেতেই চান না। এ ছাড়া যত্রতত্র প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। এসব যেন দেখার কেউ নেই। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো ঘুরে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তৃণমূলে মোটামুটিভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারলে রাজধানীতে চাপ কম পড়ত। কিন্তু তৃণমূলে চিকিৎসকরা থাকতেই চান না। মাঠপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও নানামুখী সমস্যা আছে। চিকিৎসকদের থাকার মতো পরিবেশ তৈরি করাও জরুরি। এর পরও আমি বলব, কোনো অজুহাতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে তার চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। সবাইকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে চিকিৎসকরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর হাল-হকিকত সম্পর্কে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- রাজশাহী : বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি। কখন আসবেন সেই অপেক্ষায় ছিলেন রোগীরা। সাতজনের দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও আছেন মাত্র তিনজন। অন্য চারজন কখন আসবেন, তা জানেন না কেউ। এই হাসপাতালটিতে আগে থেকেই ২৭টি পদের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত আছেন ১৭ জন। শুধু চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নয়, সংকটে ভুগছে রাজশাহীর উপজেলা হাসপাতালগুলো। পর্যাপ্ত চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে আছে প্রায় সবগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। রাজশাহীর নয়টি উপজেলায় মোট ১০টি হাসপাতালে ২২৫ জন চিকিৎসকের বিপরীতে শূন্য পদ ১০৯টি। পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে আছে নানা সমস্যা। কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট, প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, লক্কড়-ঝক্কড় অ্যাম্বুলেন্সসহ নানা সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে এই চিকিৎসা কমপ্লেক্স। রোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসক না আসায় সামান্য কিছু হলেই রাজশাহীতে স্থানান্তর করে দেওয়া হয় রোগীদের। এ ছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির একটি করে এবং চতুর্থ শ্রেণির ছয়টি পদ শূন্য আছে। অপারেশন থিয়েটার চালু থাকলেও সেখানে অপারেশন হচ্ছে না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমা আক্তার বলেন, অবকাঠামোর অভাবে ৫০ শয্যার কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করা যাচ্ছে না।

চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকট, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও দালালদের দৌরাত্ম্যে চরম অব্যবস্থাপনায় চলছে রাজশাহীর তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা। এখানে রোগী থাকলেও নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী। রোগীদের শয্যা সংকট, এক্স-রে মেশিন বিকল, অপারেশন থিয়েটার পরিত্যক্ত, নেই সুপেয় পানির বন্দোবস্ত।

রংপুর : জেলার সরকারি স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সঠিক সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। একই অবস্থা কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে। সেখানেও গ্রামীণ জনপদের লোকজন ঠিকমতো স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রংপুর নগরীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভার্চুয়াল অথবা টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিচ্ছেন। চেম্বারের বয় কিংবা পিয়ন পর্যায়ের লোক রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র দেখে তা ভার্চুয়াল কিংবা টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে চিকিৎসককে জানাচ্ছেন। এতে অনেক সময় চিকিৎসকের কাছে সঠিক রিপোর্ট পৌঁছাচ্ছে না। অনুমাননির্ভর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে রোগীকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বাইরে কিছু চিকিৎসক সেবা দিলেও তারা রোগীদের আস্থা অর্জন করতে পারেননি। ফলে ওইসব চিকিৎসকের চেম্বার খোলা থাকলেও রোগী নেই বললেই চলে।

বরিশাল : বরিশালের সরকারি হাসপাতালে এখনো রোগীকে দূরে দাঁড় করিয়ে রেখে লাঠির মাথায় টিকিট নিয়ে কথা ছুড়ে মেরে রোগীর সমস্যা জিজ্ঞাসা করে ব্যবস্থাপত্র দেন বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা। মেডিকেলের অন্তর্বিভাগেও নিয়মিত আসেন না সিনিয়র চিকিৎসকরা। রোগী দেখার ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা নানা টালবাহানা করলেও ব্যক্তিগত চেম্বারে চুটিয়ে রোগী দেখেন তারা। সম্প্রতি শেরেবাংলা মেডিকেলের প্রসূতি বহির্বিভাগে চিকিৎসক দেখাতে গিয়েছিলেন নিপা বেগম নামে এক নারী রোগী। তিনি চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করতেই আরেক নারী প্রসূতি চিকিৎসক চেঁচিয়ে বলেন, ‘দূরে থাকেন, কাছে আসবেন না।’ তারপর বাঁশের কঞ্চির মাথায় বেঁধে দূর থেকে রোগীর টিকিট নিয়ে নারী চিকিৎসক জানতে চান, রোগীর সমস্যা কী। জীবনে প্রথমবার চিকিৎসকের হাতে লাঠি দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন নিপা। সমস্যার কথা বলতেই নারী চিকিৎসক তাকে বলেন, ‘আমি নিজেও প্রেগন্যান্ট। শুধু শুধু ডাক্তারের কাছে আসবেন না। যখন ব্লাড নামবে, ব্যথা উঠবে, তখন আসবেন।’

ফেনী : ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে সহকারী সার্জন ডা. রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরীকে ২০১৮ সালের ১০ মে পদায়িত করা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি অফিস করেননি। সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের বালুয়া চৌমুহনী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সহকারী সার্জন ডা. ইশতিয়াক রাকিন কর্মরত থাকলেও তিনি সেখানে যান না। সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সহকারী সার্জন হিসেবে পদায়ন হয়েছেন ডা. উম্মে সুলতানা আঁখি। ২০১৭ সালের ১ মে পদায়নের পর তিনি এক দিনের জন্যও কর্মস্থলে যাননি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ২০১৯ সালে সদর উপজেলার ফাজিলপুরে খাইয়ারা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডা. আহমেদ নূরই রাব্বি পদায়িত হন। যোগদানের পর কয়েক দিন নিয়মিত হাজির হলেও পরে অনিয়মিত হয়ে যান বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার ডা. তামিম মাহমুদ। করোনাকালে মাত্র কয়েক দিন উপস্থিত ছিলেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ছিলেন ডা. শাহাব উদ্দিন রিন্টু। তার বদলির পর ২০১৯ সালের ১ আগস্ট সেখানে পদায়ন হন ডা. নাজমুল হাসান রাজু। কিন্তু তার কখনো দেখা পাননি স্থানীয় বাসিন্দারা। এই চিকিৎসকরা কর্মস্থলে না গেলেও কাগজে-কলমে তাদের ঠিকই হাজিরা আছে।

চুয়াডাঙ্গা : জেলা সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার ১৭ বছরেও পায়নি প্রয়োজনীয় জনবল। আগের ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে কার্যক্রম। ১০০ শয্যা অনুযায়ী ৪২ জন চিকিৎসকের বিপরীতে বর্তমানে ডেপুটেশনে আসা চার চিকিৎসকসহ কর্মরত আছেন মাত্র ২২ জন। এতে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ১৫০ শয্যার নতুন একটি বিভাগ খোলা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ১০ জন চিকিৎসক যোগদান করেছেন। তবে এখানে অতিরিক্ত কোনো নার্স পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সিভিল সার্জন, আরএমও এবং মেডিসিন কনসালট্যান্ট পদে দায়িত্বরতরা হাসপাতালের পাশাপাশি করোনা বিভাগে বাড়তি দায়িত্ব পালন করছেন।

চট্টগ্রাম : উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর সবচেয়ে বড় সংকট চিকিৎসা উপকরণ। চিকিৎসা উপকরণের অভাবে ৮০ শতাংশ রোগীকেই জেলা হাসপাতালে রেফার করতে হয়। এর সঙ্গে প্রতিনিয়তই থাকে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, বহির্বিভাগে অবহেলা করে রোগী দেখা, নার্স-আয়াদের দুর্ব্যবহার ও অসহযোগিতা। এসব কারণে অসহায় রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা পেতে চরম হয়রানির শিকার হতে হয়। জানা যায়, ২০০২ সালের ৭ মে আনোয়ারা, ২০১৪ সালের ১৩ জুন বাঁশখালী, ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি বোয়ালখালী, ২০১০ সালের ৭ জুলাই ফটিকছড়ি, ২০০৮ সালের ১৮ মে হাটহাজারী এবং ২০০৫ সালের ২১ জুন মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া এক্স-রে মেশিন মেরামতের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। এসব মেশিন আর মেরামত করা যাবে না বলে প্রতিবেদন দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। অন্যদিকে আনোয়ারা, বোয়ালখালী, ফটিকছড়ি, পটিয়া, সন্দ্বীপ ও সীতাকুন্ডে নেই আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। এ ছাড়া উপজেলার কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই নেই প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল। ১৪ উপজেলায় অ্যানেসথেশিয়া মেশিন থাকলেও পটিয়া ছাড়া কোথাও দক্ষ জনবল নেই। আর হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান ছাড়া আর কোথাও অটো-অ্যানালাইজার মেশিন নেই। তবে ১৪ উপজেলায় সচল আছে অ্যাম্বুলেন্স। ১৪ উপজেলায় ১৪টি ডেন্টাল মেশিনের মধ্যে সচল আছে ৭টি। ৪৫টি মাইক্রোসকোপ মেশিনের মধ্যে সচল আছে ২৯টি। ৩১টি ইসিজি মেশিনের মধ্যে অচল ১৫টি। তবে এর মধ্যে কিছু উপকরণ মেরামত করা হয়েছে।

দিনাজপুর : দিন দিন বিল্ডিং বাড়ছে, বেড বেড়েছে, কিন্তু চিকিৎসকসহ সরঞ্জাম সংকট কাটছেই না। আছে জনবল সংকট, টেকনিক্যাল পারসন সংকট, নেই কোনো বিশেষজ্ঞ। আধুনিক সরঞ্জাম সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল। ১২ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরাও সেবাবঞ্চিত। জেলায় দিনাজপুর জেনারেল সদর হাসপাতাল এবং ১২টি উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৩৮টি। অথচ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১৯৪ জন। দিনাজপুর জেনারেল সদর হাসপাতালের চারটি বিভাগে কোনো চিকিৎসকই নেই।

রোগীদের অভিযোগ, উপজেলা হাসপাতালে এলে সময়মতো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। অনেক সময় দালালরা রোগী ভাগিয়ে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। আবার অনেক সময় বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বলা হয়। করোনার এই সময়ে অনেককে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয় বাড়িতে বসে সেবা নিতে।

সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের পদ ৫৮ জনের কাজ করছেন ২৪ জন চিকিৎসক। কার্ডিওলজি, চোখ, নাক-কান-গলা, চর্ম, নিউরোলজি বিভাগের কোনো চিকিৎসক নেই। জরুরি বিভাগে চারজনের স্থলে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। মেডিসিনে দুজনের স্থলে রয়েছেন একজন। ৩৪টি চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে শহরসহ গ্রামগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা গরিব ও অসহায় মানুষকে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আহাদ আলী জানান, বর্তমানে এই হাসপাতালের কয়েকটি বিভাগের বিভিন্ন পদ শূন্য থাকায় রোগীদের সার্বক্ষণিক সেবাদান কষ্টকর হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ : জেলার ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নে অবস্থিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকার কারণে মহাবিপাকে পড়েছেন রোগীরা। এলাকাবাসী জানান, আগে মাঝেমধ্যে হাসপাতালটি খোলা থাকত। কিছু ওষুধপত্রও পাওয়া যেত। বেশ কিছুুদিন ধরে হাসপাতালটি একেবারেই বন্ধ। প্রতিদিন লোকজন এসে হাসপাতাল তালা দেখে চলে যান। অনেকে আবার দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন। বালিয়াখোড়া গ্রামের পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা চন্দনা বেগম (২৮) বলেন, ‘প্রতিদিন হাসপাতালে এসে ঘুরে যাই। এক দিনও খোলা পাই না। আমি গরিব মানুষ। কার্ড না করলে কোনো চিকিৎসা দিব না তাই প্রতিদিন আসি। কবে ডাক্তার আইব জানি না।’ তার মতো রৌশনারা, বকুলসহ অনেকেই বলেন, ‘এই হাসপাতালটিই আমাদের একমাত্র ভরসা। সমস্যা হলে আমরা এই হাসপাতালে আসতাম। কিন্তু এখন একেবারেই বন্ধ। আমরা কি এখন বিনা চিকিৎসায় মারা যাব?’ সরেজমিন দেখা যায়, অফিসের মূল দরজায় দুটো তালা ঝুলছে। সারা দিনেও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেউ আসেননি। ঘিওর উপজেলা অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ১০ জন লোকবলের মধ্যে মাত্র পাঁচজন অফিসে উপস্থিত। অফিস সূত্রে জানা যায়, তিনটি পদ শূন্য। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ দুজন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন সিভিল সার্জন অফিসে। ঘিওর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র লোকজন না থাকার কারণে বন্ধ রয়েছে।

গাজীপুর : জেলা শহরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। জনবল সংকট নিয়েই চলছে হাসপাতালটি। অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হাসপাতালের কার্যক্রম। শূন্য পদের সংখ্যা ৭৯টি। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে ২৮টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ৭টি, তৃতীয় শ্রেণির ২৭টি, চতুর্থ শ্রেণির ১৭টি। চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মচারীদের শূন্য পদে পদায়নের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের সার্জারি (মহিলা) ওয়ার্ডে কথা হয় জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের খাগড়াচর গ্রামের মোসলেমার (৬০) সঙ্গে। আট দিন আগে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার তার অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে কিডনি সমস্যা নিয়ে ২ সেপ্টেম্বর ভর্তি হওয়া জেসমিন (৩০) জানালেন, হাসপাতালের বাথরুমগুলো নোংরা ও অপরিষ্কার থাকায় তা ব্যবহার করতে সমস্যা হয়।

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী ও একটি রাজনৈতিক দলের নেতা এনামুল হক ১০ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য যান কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসক তাকে সিসিইউতে ভর্তি হতে বলেন। কিন্তু হাসপাতালে সিসিইউ বন্ধ থাকায় সাধারণ ওয়ার্ডে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি সিসিইউ চালু, পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগসহ পাঁচ দফা দাবিতে শহরে মানববন্ধন করেন। কিন্তু অদ্যাবধি এসব দাবির কোনোটাই পূরণ হয়নি। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বন্ধ প্রায় চার মাস ধরে। ফলে হৃদরোগসহ জটিল রোগীদের চিকিৎসা চলছে সাধারণ ওয়ার্ডে। গুরুতর রোগীদের রেফার করা হয় ময়মনসিংহ বা ঢাকায়। অন্যদিকে প্রতিদিনই রোগীদের ভিড়ে ঠাসা থাকে হাসপাতাল। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে প্রায় প্রতিদিনই রোগী হয় দ্বিগুণেরও বেশি। বাড়তি রোগীদের হাসপাতালের মেঝেতে, বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর ওপর রয়েছে চিকিৎসক সংকট। অল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। জানা গেছে, এ হাসপাতালে ৬৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৩৮টি পদই শূন্য। এর মধ্যে সিনিয়র কনসালট্যান্টের ছয়টি পদ ও জুনিয়র কনসালট্যান্টের আটটি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া দুজন চিকিৎসক প্রায় দেড় বছর ধরে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত রয়েছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হিবরুল বারী জানান, তিনি এ হাসপাতালে যোগদান করার পর থেকেই প্রায় চার মাস ধরে সিসিইউ বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

কুড়িগ্রাম : চিকিৎসক ও জনবল সংকটসহ দালালদের দৌরাত্ম্যে স্বাস্থ্যসেবা বিঘিœত হচ্ছে জেলার জেনারেল হাসপাতালে। এতে প্রতিদিন দূর থেকে আসা গরিব ও সাধারণ রোগীরা যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া উপজেলার অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেগুলোতে গ্রামের সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাসলিমা বেগম দীর্ঘদিন গলার সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি এসেছেন রৌমারী থেকে দুই দিন হলো। জেলা শহরের আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে তিনি তার গলার চিকিৎসা করাতে জেনারেল হাসপাতালে আসেন। এসে জানতে পারেন, এখানে কোনো নাক-কান-গলার চিকিৎসক নেই। ফলে তাকে ফিরে যেতে হয়। বাধ্য হয়ে তিনি সিরিয়াল দেন ক্লিনিকে। সেখানেও করোনাকালে চিকিৎসক আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা। তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। কষ্ট করে টাকা খরচ করে অত দূর থেকে এসেছি। কিন্তু চিকিৎসা নিতে পারলাম না বলে খুব খারাপ লাগছে।’ জানা যায়, জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট, কর্মচারী সংকট ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সরঞ্জাম সংকটে মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। ৪১টি পদের মধ্যে চিকিৎসক রয়েছেন ২১ জন। কিন্তু চোখের ও নাক-কান-গলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই দীর্ঘদিন। এ ছাড়া একটি এক্স-রে মেশিন রয়েছে, তাও লো-ভোল্টেজে কাজ করে না। এটি একরকম বিকল হয়ে রয়েছে। সিরাম ইলেকট্রলাইটসহ বিভিন্ন ধরনের প্যাথলজিক্যাল টেস্ট রিএজেন্ট ও উপযুক্ত যন্ত্রপাতির অভাবে জেনারেল হাসপাতালে করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই চোখ এবং নাক-কান-গলা বিভাগের রোগীরা কোনো সেবা না পেয়ে বাইরের ক্লিনিকগুলোতে যান। রক্তের পরীক্ষাগুলো হাসপাতালে না হওয়ায় ২০০ টাকার পরীক্ষা বাধ্য হয়ে রোগীদের করতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। হাসপাতালে আসা এক রোগীর ভাই বোরহান আলী বলেন, ‘ভূরুঙ্গামারী উপজেলা থেকে আসছি। কিন্তু এখানে টিকিট কাটতে এসে একজন দালালের খপ্পরে পড়েছি। তিনি সিরিয়াল করে তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখানোর কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ২০০ টাকা নেন। পরে তার খবর নাই। আমরা গরিব মানুষ, কেমনে চিকিৎসা করাব।’ কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রেদওয়ান ফেরদৌস সজীব জানান, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর ছত্রচ্ছায়ায় হাসপাতালের দালাল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

মাদারগঞ্জ (জামালপুর) : নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে জামালপুরের মাদারগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। শতভাগ সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ২০১২ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করলেও এর সুফল পায়নি মানুষ। আগের ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে তার কর্যক্রম। ইউএইচও ডা. সাইফুল ইসলাম জয় জানান, বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পুরাতন ভবন ভেঙে ১০০ শয্যার ভবন নির্মাণের কাজ চলমান। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এক্স-রে মেশিনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া সোনোলজিস্ট না থাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি বন্ধ রয়েছে। ইসিজি মেশিন থাকলেও অপারেটর নেই। এ ছাড়া হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর চরাঞ্চলের চিকিৎসাসেবার জন্য দুজন মেডিকেল অফিসার ও আরএমও এবং একজন সহকারী ডেন্টাল সার্জন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পাঁচজন কনসালট্যান্ট মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, অ্যানেসথেশিয়া ও শিশু পদ শূন্য থাকায় বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

মাদারীপুর : জেলার একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে শুরু করে চিকিৎসক পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে জনবলের অভাব। হাসপাতাল ঘিরে দিন দিন বাড়ছে দালালের দৌরাত্ম্য। দালালের কারণে হাসপাতালে আসা রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন না। হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কমিশনভিত্তিক দালালরা উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে রোগী বাগিয়ে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের কর্মচারী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগসাজশে কয়েকজন দালাল নিয়মিতই এ কাজ করছে বলে জানা যায়। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কামরুল ইসলাম নামে এক রোগী বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলেই বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা আমাদের পেছন পেছন হাঁটতে থাকে।’ তিনি বলেন, অনেক রোগীকেই দালাল চক্র ফুসলিয়ে উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যায় অন্য হাসপাতালে। শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ বলেন, দিন দিন প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দালালও বাড়ছে।

রাজবাড়ী : চিকিৎসক ও সরঞ্জাম সংকট, ওষুধ না পাওয়ার মধ্য দিয়েই চলছে রাজবাড়ীর তৃণমূলের চিকিৎসাসেবা। জেলার সদর হাসপাতালসহ চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট থাকার কথা থাকলেও চিকিৎসক মাত্র তিনজন। এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে তৃণমূলের চিকিৎসাসেবা। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর হাসপাতালে জুনিয়র কনসালট্যান্ট একটি পদের বিপরীতে চিকিৎসক নেই। গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন জুনিয়র কনসালট্যান্টের বিপরীতে দুজন, পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন জুনিয়র কনসালট্যান্টের বিপরীতে একজন, বালিয়াকান্দিতে পাঁচজন জুনয়ির কনসালট্যান্টের বিপরীতে চিকিৎসক সংখ্যা শূন্য, কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদের বিপরীতে চিকিৎসক সংখ্যা শূন্য। এ অবস্থায় রাজবাড়ীর জেলাসহ সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট চরমে। সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন রোগী ফটকের কিছু দূর থেকেই ফিরে আসছেন। ফিরে আসার কারণ সম্পর্কে আলেয়া বেগম নামে এক রোগী বলেন, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে ভিমরুলের বাসা থাকায় তারা চিকিৎসাসেবা না নিয়েই ফিরে আসছেন। রোগ সারাতে গিয়ে ভিমরুলের কামড়ে মৃত্যু হতে পারে এমন শঙ্কা তাদের। রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসক সংকটের সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’

নোয়াখালী : অযত্ন, অবহেলা, উদাসীনতা আর অনিয়মে ভেঙে পড়েছে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। ময়লা-আবর্জনা ঘেরা হাসপাতালের বাইরের অবস্থা যেমন, ভিতরের চিত্রও প্রায় একই। ওয়ার্ডগুলোতে নিয়মিত ডিউটি থাকা চিকিৎসকরা রোগী দেখেন না। রোগীদের নানা অজুহাতে দালালরা নিয়ে যাচ্ছেন প্রাইভেট হাসপাতালে। করোনার অজুহাতে শিশু ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসকরা তেমন আসেন না। ইন্টার্ন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা। এ ছাড়া ভর্তি রোগীদের নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বেডের জন্য দালালদের দিতে হয় ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। টাকা না দিলে বেড দেওয়া হয় না। রাখা হয় মেঝেতে। কর্মরত চিকিৎসক ঠিকমতো রোগী দেখেন না। এক দিন দেখে গেলে তিন দিনে আর দেখা মেলে না চিকিৎসকের। নার্সরাই যেন কর্মরত চিকিৎসক। বিনামূল্যে হাসপাতাল থেকে রোগীদের ওষুধ দেন না। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. হাসিনা সব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব সমস্যা সমাধান করতে উদ্যোগ নিচ্ছি।’

কুমিল্লা : কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে বেড, যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটে রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না। বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন গুণ। পাঁচশ শয্যার হাসপাতালে রোগী থাকছে ১ হাজার ৪০০। তাই ফ্লোরেই চলছে চিকিৎসা। এখানে ৭০৮টি অনুমোদিত পদ রয়েছে, যা পাঁচশ শয্যার জন্য পর্যাপ্ত নয়। তার ওপরে সেখান থেকে শূন্য রয়েছে তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণির অনেকগুলো পদ। বর্তমান করোনাকালেও হাসপাতালে নয়শ রোগী ভর্তি থাকে। এদিকে করোনা ইউনিট চালু হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স সেখানে কাজে লাগানো হচ্ছে। এতে সাধারণ রোগীরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। রোগী, স্বজন এবং হাসপাতালের সূত্র জানায়, আউটডোরে চিকিৎসা নেন গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ রোগী। তাদের সেবা দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলের স্বল্প আয়ের রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। যন্ত্রপাতি না থাকায় তারা বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন। সূত্রমতে, কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিনের সংকট। ডায়ালাইসিসের প্রচুর রোগী। মেশিন মাত্র ছয়টি। মেশিনের সংখ্যা বাড়লে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া যেত। এদিকে দিন দিন ক্যান্সারের রোগী বাড়লেও রেডিও থেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। রেডিও থেরাপি মেশিন ও জনবলের প্রয়োজন। করোনা ইউনিটে ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট আছেন একজন। ১৮টি আইসিইউ বেডের বিপরীতে প্রয়োজন আরও ছয়জন ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট। করোনা ইউনিটে আরও ৫০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। নার্সসহ আরও জনবল প্রয়োজন ৩৬ জন। কারণ কেউ আক্রান্ত হলে তাকে ছুটিতে পাঠাতে হয়। এখানে মানসম্মত শিশু ওয়ার্ড নেই। জরুরি প্রয়োজনে শিশুদের এনআইসিইউতে নিতে হয়। এনআইসিও স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর