মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

থামছে না এনআইডি জালিয়াতি

চক্র নির্মূলে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযানের পরিকল্পনা ইসির

গোলাম রাব্বানী

থামছে না এনআইডি জালিয়াতি

থামছে না জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির ঘটনা। টাকা হলেই পাওয়া যাচ্ছে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র। কেউ টাকা দিয়ে বয়স পরিবর্তন করছে। কেউ বা হচ্ছে দ্বৈত ভোটার। জীবন্ত ব্যক্তিকে দেখানো হচ্ছে মৃত। নিজের ছবি রেখে দেওয়া হচ্ছে অন্যের তথ্য। আবার কেউ একাধিকবার পরিবর্তন করছে শিক্ষাগত যোগ্যতাও। কেউ আবার জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ঋণ নিচ্ছে মোটা অঙ্কের। এ ছাড়া টাকার বিনিময়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র।

এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াত চক্রের তৎপরতা নির্মূলে আজ থেকে দেশজুড়ে ‘সাঁড়াশি অভিযান’ চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। আজ ঢাকার বিভিন্ন অফিসে অভিযানে যাবেন ইসির কর্মকর্তারা। গতকাল এনআইডি উইং মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য জানান। এ ছাড়া জাল ও দ্বৈত এনআইডি কার্ড দিয়ে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার বিষয়ে ইসি দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গতকালই একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে।

ঘটছে জালিয়াতি : এর আগেও কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েক শ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এরপর এনআইডি জালিয়াতি ও দুর্নীতি বন্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এর অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অপতৎপরতায় সম্পৃক্ত এক ডজন কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রাখে কমিশন। গত শনিবার ডিবির জালে ধরা পড়েন আবদুল্লাহ-আল-মামুন। তিনি জাল জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে দুটি ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। তিনি এ ঋণ পরিশোধ করতেন না, আর ব্যাংক তখন খুঁজেও তাকে পেত না। এজন্যই জাল এনআইডি বানানো। এ জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তিনি বানিয়েছেন প্রায় লাখ টাকা খরচ করে। তবে সেখানেই শেষ নয়, যারা বানিয়ে দিয়েছেন তাদের এই শর্তও ছিল, ব্যাংক ঋণ পেলে তা থেকে ১০ শতাংশ দিতে হবে। অর্থাৎ ২০ লাখ টাকায় দিতে হচ্ছে ২ লাখ টাকা। আল-মামুনসহ পাঁচজনকে শনিবার রাতে ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সম্প্রতি মেহেরপুরের গাংনীতে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাচন অফিসের বিরুদ্ধে। কুষ্টিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির রেশ কাটতে না কাটতে গাংনী নির্বাচন অফিসের এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য সচেতন মহল নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকা ও উদাসীনতাকে দায়ী করছেন। যা করেছিলেন সাবরিনা : মামলার এজাহারের তথ্যানুযায়ী সাবরিনা ২০০৯ সালে হালনাগাদের সময় মোহাম্মদপুরে ভোটার হন। সেই এনআইডিতে তার নাম সাবরিনা শারমিন হোসেন, বাবার নাম সৈয়দ মুশাররফ হোসেন, মায়ের নাম কিশোয়ার জেসমীন, স্বামী আর এইচ হক, জন্ম তারিখ ২ ডিসেম্বর, ১৯৭৮, পেশা সরকারি চাকরি এবং বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। তার দ্বিতীয় এনআইডির নিবন্ধন হয়েছে ২০১৬ সালে, সেখানে তার নাম সাবরিনা শারমিন হুসেন, বাবার নাম সৈয়দ মুশাররফ হুসেন, মায়ের নাম জেসমিন হুসেন, স্বামী আরিফুল চৌধুরী, জন্ম তারিখ ২ ডিসেম্বর, ১৯৮৩, পেশা চিকিৎসক এবং বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা বাড্ডার আনোয়ারা ল্যান্ডমার্ক, ঢাকা।

সাঁড়াশি অভিযানে নামছে ইসি : জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াত চক্রের তৎপরতা নির্মূলে এবার দেশজুড়ে ‘সাঁড়াশি অভিযান’ চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। এনআইডি উইং মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘জালিয়াত চক্রকে আমরা সমূলে নির্মূল করব। আমাদের অবস্থান কঠোর; অপরাধীদের কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। সাঁড়াশি অভিযানের লক্ষ্যে ইসি সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, এনআইডি উইং, প্রকল্পের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে ১০টি আঞ্চলিক পর্যায়ে বিশেষ টিম করা হচ্ছে।’

এনআইডি উইং মহাপরিচালক জানান, এনআইডি জালিয়াতিসংক্রান্ত যে কোনো ধরনের অনৈতিক কর্মকা- ও তৎপরতার তথ্য পেলে ভিতরে-বাইরে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে। শিগগির এ-সংক্রান্ত ১০টি কমিটি করে দেওয়া হবে। এনআইডি উইং মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি জালিয়াত চক্রের সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া অস্থায়ী কর্মী ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এর বাইরে চক্রের অনেকে জড়িত থাকার তথ্য আসছে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে অনিয়ম রোধে অভিযানের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। আমরা আগেও অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত কাউকে রেহাই দিইনি। প্রশ্রয় দেবও না। তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াত চক্রের বীজ ভিতর থেকে উৎপাটন করা হবে। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে।’ তিনি জানান, ইসির ডেটাবেজ সুরক্ষিত। এখন উপজেলা পর্যায়েও সার্ভারে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর