মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

সিটি নির্বাচন হবে মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার তিন মাস আগে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং মেয়র ও কাউন্সিলরদের ছুটির সময় কমিয়ে আনার বিধান রেখে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) আইন, ২০২০-এর খসড়া মন্ত্রিসভা গতকাল নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,  সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত দুই মেয়রকে শপথ নেওয়ার পর দায়িত্ব পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কারণ তখনো আগের মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হয়নি। দেখা গেছে, বাস্তবে (সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী) কাজ করতে গেলে কিছু অসুবিধা হয়। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী (মেয়াদ উত্তীর্ণের আগে) ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে রয়েছে যেদিন তারা (মেয়র ও কাউন্সিলর) মিটিং করবেন সেদিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তাদের সময় থাকবে। দেখা গেছে, চার-পাঁচ মাস আগে যদি নির্বাচন হয়ে যায়, শপথ হলেও তারা দায়িত্ব নিতে পারছেন না। এ কন্ট্রাডিকশনের জন্য অনেক দিন তাদের অপেক্ষা করতে হয়।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন তো বটেই, শপথ নেওয়ার পরও তাদের অপেক্ষা করতে হয়। সেজন্য এখানে একটু পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। সংশোধিত আইনে মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন শেষ করতে হবে। যেদিন শপথ হবে এর ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর হয়ে যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নতুন ব্যবস্থায় মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ থাকলেও তাদের পদ বিলুপ্ত বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ এখন তো আর ১৮০ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। এতে ১৫ বা ১০ দিনের একটা ভেরিয়েশন (মেয়াদের চেয়ে কম) হয়। আগে তো তিন থেকে সাড়ে তিন মাস বসে থাকতে হতো।

নতুন আইনে বলে দেওয়া হচ্ছে- মেয়াদ সম্পর্কে আইনে যা-ই থাকুক, নতুন পরিষদ যেদিন শপথ নেবে তার ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রথম মিটিং করবে এবং সেদিনই আগের পরিষদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনগুলোর মেয়র ও কাউন্সিলর বিদ্যমান আইনে বছরে তিন মাস ছুটি পেতেন। মন্ত্রিসভা বলেছে, তারা তো জনপ্রতিনিধি, তাদের দৈনন্দিন নির্বাহী কাজকর্ম আছে সুতরাং বছরে ছুটি এক মাস করে দেওয়া হলো। এ ছাড়া মন্ত্রিসভা ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব’-এর জন্মদিন সরকারিভাবে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে প্রতি বছর ৮ আগস্ট তাঁর জন্মদিন মন্ত্রিসভা বিভাগের জারিকৃত এ-বিষয়ক পরিপত্রের ‘ক’ ক্রমিক অনুযায়ী পালিত হবে। এর বাইরে মন্ত্রিসভা ‘বাংলাদেশ বিমান করপোরেশন (রহিতকরণ) আইন, ২০২০’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয়। গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য একটি অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন ফ্যাসিলাইটেশন অব ক্রস বর্ডার পেপারলেস ট্রেড ইন এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক’ শীর্ষক একটি প্রস্তাবেও অনুসমর্থন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মন্ত্রিসভা ‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা, ২০২০’-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে। এতে চার শ্রেণির ড্রোন পরিচালনার অনুমতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চাইলেই যে কেউ ইচ্ছামতো ড্রোন পরিচালনা করতে পারবে না। ৫ কেজির বেশি ওজনের ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে নীতিমালায় ড্রোনের চারটি শ্রেণি করে দেওয়া হয়েছে। বিনোদনের জন্য ‘ক’ শ্রেণি। এটা খেলনা হিসেবে ব্যবহার করবে। এর ওজন অবশ্যই ৫ কেজির নিচে হতে হবে। ৫ কেজির বেশি হলে তা আর বিনোদনের মধ্যে পড়বে না। অবাণিজ্যিক কাজে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ‘খ’ শ্রেণির ড্রোন ব্যবহার করতে পারবে। অবাণিজ্যিক কাজের জন্য ৫ কেজির বেশি ড্রোন ওড়ানো যাবে, তবে কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকতে পারবে না। অনেকে বিভিন্ন জিনিস দেখে, যেমন বনের সার্ভে করে, গবেষণা বা বই লেখার মতো নিজের কাজের জন্য। বাণিজ্যিক কাজের জন্য ‘গ’ শ্রেণির ড্রোন হবে ৫ কেজির ওপর। যেমন কোথাও জমিজমা বা ফসলের ওপরে সার্ভে করবে। ‘ঘ’ শ্রেণির ড্রোন রাষ্ট্রীয় বা সামরিক কাজের জন্য ব্যবহার হবে। এগুলোর মধ্যে ক ও ঘ শ্রেণির ড্রোন ব্যবহারের জন্য অনুমতি লাগবে না। ড্রোন পরিচালনায় কার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে নীতিমালা অনুযায়ী সিভিল এভিয়েশন তা নির্দিষ্ট করে জানাবে। খন্দকার আনোয়ার আরও জানান, নীতিমালায় গ্রিন, রেড ও ইয়োলো জোন করে দেওয়া হয়েছে। খেলনা বা বিনোদনের ড্রোন ৫০০ ফুটের বেশি ওপরে যেতে পারবে না। রেড জোনের মধ্যে রয়েছে- এয়ারপোর্ট, ক্যান্টনমেন্ট, পদ্মা সেতু, কেপিআই স্থাপনা ইত্যাদি। সরকার স্কুল-কলেজ খোলার চিন্তা করছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে। এখন করোনার লেটেস্ট যে সার্কুলার তাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ এখন আর সেন্ট্রালি অত বড় এমবার্গো (বিধিনিষেধ) দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। সেজন্য গত ১০ থেকে ১২ দিন আগে জার্মানিতে কথা বললাম, তারা সব ওপেন করে দিচ্ছে। যদিও ধরা পড়ছে। কিন্তু কী করবে, কত দিন আর বন্ধ রাখা যাবে! এজন্য আমরা এখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদা চিন্তাভাবনা করছে, কীভাবে করা যায়। কওমি মাদ্রাসা খুলে দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর