মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কোটি টাকার প্রতারণা হোমিও দুই ডাক্তারের

আলী আজম

ঢাকায় দুই হোমিও ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হোমিও ইউনিটের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. আবদুর রাজ্জাক তালুকদার এবং বঙ্গবন্ধু হোমিওপ্যাথিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. শাখাওয়াত ইসলাম ভূঁইয়া খোকন। এই দুজনই হোমিওপ্যাথিক প্রতিষ্ঠানের নামে শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পরিচালনা বোর্ড, জমি ক্রয়, শিক্ষার্থী  ভর্তিসহ বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। ইতিমধ্যে এই দুজনের নামে পুলিশ সদর দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা। পুলিশ সদর দফতরের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ডা. আবদুর রাজ্জাক তালুকদার হোপেস হোমিওপ্যাথিক কলেজ প্রতিষ্ঠা, কলেজে চাকরি, জমি নিবন্ধন, পরিচালনা বোর্ড, ভুয়া সার্টিফিকেটের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রফেসর না হয়েও ভিজিটিং কার্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রফেসর পরিচয় দিতেন তিনি। ঢাবি পেশাজীবী লীগ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে গত বছর ১০ অক্টোবর ডা. আবদুর রাজ্জাককে বহিষ্কার করা হয়।

ওয়ারীতে অবস্থিত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বিএইচএমএস (¯œাতক, হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন ও সার্জারি) ডিগ্রিতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী ভর্তির চেষ্টা করছিলেন। ওই শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীকে প্রতারণার মাধ্যমে নিজের অধীনে নেন ডা. রাজ্জাক। পরে তাদের ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে বিএইচএমএস ডিগ্রি দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। ভর্তির জন্য ৪০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ লাখ করে ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। পরে তাদের কাঁটাবনের একটি অফিসে কয়েক দিন ক্লাস করিয়ে প্রতারণা শুরু করেন ডা. রাজ্জাক। এরপর বলেন, ‘আমরা হোপেস হোমিওপ্যাথিক কলেজ করছি। সেখানে আপনারা শিক্ষার্থী, আপনারাই শিক্ষক।’ এরপর কলেজের মালিকানা ও শিক্ষকতার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ৩-৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন। বাইরে থেকেও শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ভর্তির নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। সেখানে অধ্যক্ষসহ প্রায় ৩০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন ডা. রাজ্জাক। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে তিনি ৫ লাখ টাকা করে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ডা. রাজ্জাকের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন ঢাবির মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. আমানউল্লাহ জিকু। তিনি ডা. রাজ্জাকের হোপেস হোমিওপ্যাথিক কলেজের ভাইস-পিন্সিপাল হিসেবে রয়েছেন। আর ডা. রাজ্জাকের স্ত্রী ডা. রোকেয়া খাতুন ওই কলেজের অধ্যক্ষ। ডা. রাজ্জাক তারই সহকর্মী ঢাবি চিকিৎসা কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমান ভূঞার সঙ্গেও প্রতারণা করে ২ লাখ টাক হাতিয়ে নেন। পরে ওই টাকা চাইলে এনায়েতুরকে প্রাণনাশের হুমকি দেন ডা. রাজ্জাক। এ ঘটনায় ডা. এনায়েতুর মিরপুর থানায় জিডি করেন। পুলিশ সদর দফতরের আরেকটি অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ডা. শাখাওয়াত ইসলাম ভূঁইয়া খোকনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হোমিওপ্যাথিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই বছর ধরে তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দুটি কক্ষ ভাড়া করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছেন। ডা. খোকনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওয়ারীর জয়কালী মন্দির রোডে ২৫/২ সেন্ট্রাল হোমিও হল নামে একটি দোকানের মালিক ডা. খোকন। তিনি এসএসসি পাস করেছেন, অথচ নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পরিচয় দেন। হোমিও ওষুধ বিক্রির আড়ালে মদ (রেকটিফায়েড স্পিরিট) বিক্রি করেন তিনি। মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত ডা. খোকন। যাত্রাবাড়ীতে হোমিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নামে শুরু করেন প্রতারণা।

বঙ্গবন্ধু হোমিওপ্যাথিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে ১০৮ জনের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন ডা. খোকন। বিদেশে পাঠানোর নামে প্রায় ২৫ জনের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন, অথচ তিনি নিজেকে দলীয় নেতা পরিচয় দেন। বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠান করেছেন অথচ বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট থেকে কোনো অনুমতি নেননি ডা. খোকন। জয়কালী মন্দিরে ৩ কোটি টাকা মূল্যের দুটি দোকান, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় তিনতলা বাড়ি, শান্তিনগরে স্কাই ভিউ গার্ডেনে নিজের ও স্ত্রীর নামে ২ কোটি টাকা দামের দুটি ফ্ল্যাট, গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে সুসজ্জিত ভবনের কাজ নির্মাণাধীন, বিভিন্ন ব্যাংক নিজ নামে, স্ত্রী, মেয়ে ও জামাতার নামে কোটি টাকা রয়েছে ডা. খোকনের। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি এসব সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর